ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩

৯ জানুয়ারি ২০১৬, প্রথম আলো ও বেলার আয়োজনে ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে ছাপা হলো।
সহযোগিতায়: ইউএনডিপি

সূত্র: বিশ্বব্যাংক ২০১১, ইউএনডিপি ২০১২ ও বেলা
সূত্র: বিশ্বব্যাংক ২০১১, ইউএনডিপি ২০১২ ও বেলা

আব্দুল কাইয়ুম: ২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন আইনের কার্যকর প্রয়োগ হচ্ছে না। আবার আইনের কিছু সংশোধনও দরকার। ইটভাটার ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে আমাদের কারও অজানা নেই। ঢাকা থেকে সামান্য দূরে যদি সাভারের দিকে যাই, তাহলে দেখতে পাব ওখানকার আকাশ প্রায় কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন থাকে।

ইটভাটার ধোঁয়ায় গাছ, ফলমূল ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। মানুষ সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। কয়লা থেকে ভীষণ ক্ষতিকর কার্বন মনোক্সাইড নির্গত হয়। আইনটি বাস্তবায়িত হলে হয়তো কিছুটা রক্ষা পাব।
আমাদের এমন একটা পদ্ধতি বের করতে হবে, যেখানে মানুষ, বায়ু, মাটি—কোনো কিছুরই ক্ষতি হবে না, আবার ইটের কাজটাও চলবে। আলোচনায় এসব বিষয় আসবে। এখন আলোচনা করবেন মো. রইছউল আলম মণ্ডল।

মো. রইছউল আলম মণ্ডল
মো. রইছউল আলম মণ্ডল

মো. রইছউল আলম মণ্ডল: আজকের আলোচনার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের অর্থনীতি, উন্নয়ন, পরিবেশ, স্বাস্থ্য ইত্যাদি বিষয়ের সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে যেভাবে ইটভাটা চলছে, এ থেকে পরিত্রাণ পেতেই হবে। তা না হলে আমাদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের ব্যাপক বিপর্যয় ঘটবে।
ইট প্রস্তুতের ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, এ ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদান, ঋণসুবিধা, প্রশিক্ষণ ইত্যাদি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। ইটভাটার ফলে কৃষিজমির ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। ফলে খাদ্যনিরাপত্তার বিষয়টি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
ইটভাটার বায়ুদূষণের ফলে স্বাস্থ্য ব্যয় অনেক বেড়ে যাচ্ছে। আমাদের সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিকল্প ইট যেমন: হলো ব্রিকস, কমপ্রেসড ব্রিকস ব্যবহার শুরু করতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ১০ থেকে ২০ শতাংশ বিকল্প ইটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা যেতে পারে। ইট পোড়ানো থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসা যায়, আমাদের সেদিকে যেতে হবে।

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান

সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান: ইউএনডিপিকে ধন্যবাদ জানাই, তারা একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে হাত দিয়েছে। ২০১৩ সালের ইটভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন কেন বাস্তবায়ন হচ্ছে না, বাধা কোথায়, সেটি আজকের আলোচনা।
একটা আইন হলেই ভাবি সব সমস্যার সমাধান হলো। বাংলাদেশের বাস্তবতা ভিন্ন। আইন হলেই বরং সমস্যা শুরু হয়। বাস্তবায়নে এত বাধা আসে, এটা সামাল দিতে অনেক সময় লাগে। দেশে ইটের চাহিদা কত, এর জন্য কত ভাটার প্রয়োজন, এমন কোনো পরিসংখ্যান কারও কাছে নেই। ২০১১ সালে সরকারের পক্ষ থেকে জানা গেল দেশে ইটভাটার সংখ্যা পাঁচ হাজার। ২০১৫ সালে জানা গেছে, এ সংখ্যা ৬ হাজার ৯০০টি। অর্থাৎ প্রতিবছর প্রায় ৫০০টি করে ভাটা বৃদ্ধি পেয়েছে।
২০০১ সালে সরকারের একটি খণ্ডকালীন সিদ্ধান্ত ছিল যে নতুন করে আর কোনো ইটভাটা হবে না। এ সিদ্ধান্তের কোনো প্রভাবই পরবর্তী সময়ে পড়ল না। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, বছরে ইটের চাহিদা ১ হাজার ৫০০ কোটি। কিন্তু এ জন্য ১২৭ কোটি সিএফটি মাটি লাগে।
২০১৩ সালের আইনের উদ্দেশ্য ছিল পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা। এর জন্য ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। এ আইনে চার ধরনের ইট যেমন: হাইব্রিড, টানেল, জিগজ্যাগ ও ভার্টিক্যাল শ্যাফট পদ্ধতি ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। এখন যে পদ্ধতিতে করা হোক না কেন, এর মাটি কোথা থেকে আসবে? আইনে বলা আছে পাহাড়, টিলা ও কৃষিজমি থেকে মাটি নেওয়া যাবে না। কৃষিজমি বলতে দুই বা তার বেশি ফসলি জমিকে বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ একফসলি জমি থেকে মাটি নেওয়া যাবে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের একফসলি জমি থেকে মাটি নেওয়ার ক্ষেত্রেও আপত্তি দিয়েছে।
আইনে বলা আছে, জলাশয় থেকে মাটি তোলা যাবে না, এলজিইডির রাস্তা ব্যবহার করা যাবে না। জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করা যাবে না। মানমাত্রা ঠিক রেখে কয়লা আনতে হবে। ২০১৩ সালের আইনে বালু ও সিমেন্ট দিয়ে ইট তৈরির ক্ষেত্রে মোটেই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এসব অসংগতি দূর করে পোড়া ইটের ব্যবহার যাতে বন্ধ হয়, এমন একটি যুগোপযোগী আইন করতে হবে।

মোহাম্মদ আবু সাদেক
মোহাম্মদ আবু সাদেক

মোহাম্মদ আবু সাদেক: কমবেশি ১ হাজার ৫০০ কোটি ইট প্রতিবছর তৈরি হয়। ইটভাটাগুলো নদীর পাশে হওয়ার কথা থাকলেও জ্বালানির প্রাপ্তির জন্য সাধারণত বনের পাশে হয়ে থাকে। প্রতিবছর ১ শতাংশ জমি হারাচ্ছি। এর ১৭ শতাংশ জমি ইটভাটার জন্য হারাচ্ছি। এভাবে চলতে থাকলে খাদ্যনিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে।
প্রতিবছর ২০ লাখ টন জ্বালানি কাঠ ও ২০ লাখ টন কয়লা পোড়ানো হয়। বছরে ৯০ লাখ টন গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ করছি। আমাদের এক ক্যাম্পাসে তিন, চার ও পাঁচতলা তিনটি বাড়ি নির্মাণ করছি। নির্মাণ প্রায় শেষের পথে। এসব বাড়িতে একটিও পোড়া ইটের ব্যবহার করিনি। আমাদের দেশে পোড়া ইট ছাড়াই একতলা থেকে ১০০ তলা ভবন নির্মাণ করা সম্ভব। আমরা চাই দেশে পোড়া ইটের ব্যবহার নিষিদ্ধ হোক।
২৮ ডিসেম্বর ২০১৪ প্রধানমন্ত্রী গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় প্রায় ৩০টি নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এর একটি নির্দেশনা ছিল, আমাদের দেশের নদীর উজানে বালুর পরিমাণ বেশি থাকবে। ভাটিতে কাদা থাকবে। এই বালু ও কাদা দিয়ে ইট তৈরি করা যায় কি না দেখুন। এর এক বছরের মধ্যে আমরা প্রমাণ করেছি যে এটা সম্ভব। আমার শেষ কথা হলো, শুধু ড্রেজিং বালু, মাটি দিয়েই এক শ ভাগ ইটের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব।

মিজানুর রহমান
মিজানুর রহমান

মিজানুর রহমান : পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির সঙ্গে আমি একমত। সবাই এ দেশের নাগরিক। দেশটাকে সবাই বাঁচাতে চাই। বিভিন্ন কারণে পরিবেশ দূষিত হয়। তবে এর মধ্যে একটা বড় কারণ হয়তো ইটভাটা। কয়েক দিন আগে পত্রিকায় একটা খবরে দেখলাম, এখনো ড্রাম চিমনি চলছে। আমাদের একটা বড় সমস্যা হলো, এখানে আইনের প্রয়োগ খুবই কম।
কেবল বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের খেজুরগাছ থেকে রস-গুড় হয়। বিশ্বের আর কোথায় এই সুস্বাদু বস্তু পাওয়া যায় না। তথাকথিত ইটভাটার মালিকেরা ইট পোড়ানোর জন্য খেজুরগাছ কেটে ধ্বংস করছেন। আমাদের অধিকাংশ ইটভাটার মালিক সচেতন নন। তার ওপর আইনের সঠিক প্রয়োগ হয় না।
দেশে এমন অনেক জমি আছে, যেখানে শিল্প করলে কৃষিজমি নষ্ট হয় না। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন সুদূরপ্রসারী নীতি ও পরিকল্পনা। আমাদের সবচেয়ে বড় অভাব হলো পরিকল্পিত নীতি ও সিদ্ধান্তের। দেশে আরও দুঃখজনক ঘটনা হলো, যারা আইন প্রণয়ন করেন, তাঁদের অনেকেই আইন ভাঙেন। এখন আধুনিক পদ্ধতির কথা বলছেন। এ পদ্ধতিতেও মাটি লাগবে। আমার মনে হয়, ৫ থেকে ১০ বছর পর এটাও বন্ধ করে দেবেন। কিন্তু আমরা ইতিমধ্যে ৪০ থেকে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ফেলছি। তখন আমাদের বিপর্যয় নেমে আসবে।
পৃথিবীর অধিকাংশ দেশই পোড়ানো ইট ব্যবহার করে না। তাই এখনই চিন্তাভাবনা করে এমন একটি পদ্ধতি আমাদের দিন, যার মাধ্যমে আমরা দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করতে পারব।

আমানউল্লাহ বিন মাহমুদ
আমানউল্লাহ বিন মাহমুদ

আমানউল্লাহ বিন মাহমুদ: গ্রিন ব্রিক প্রকল্প ২০১০ সাল থেকে উন্নত প্রযুক্তির ইট তৈরির পদ্ধতি প্রচলনের চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রকল্পের সরাসরি সহযোগিতায় ইতিমধ্যে পাঁচটি ডেমো কিলন স্থাপিত হয়েছে ও তিন বছরের মধ্যে পরোক্ষ সহযোগিতায় আরও ৪৭টি কিলন স্থাপিত হয়েেছ। আমরা আধুনিক প্রযুক্তির চুল্লির ব্যবহারকে গ্রিন ব্রিকফিল্ড বলছি। এটা এখনো সংখ্যায় খুব কম বলতে হবে। আমরা বিভিন্ন সময়ে প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন সহযোগিতা দিয়ে আসছি। ঢাকার চারদিকের নদীগুলোর পাশে ও জলাভূমিতে অসংখ্য ইটভাটা। অথচ এ দুই জায়গায় ইটভাটা করা নিষিদ্ধ। দুই বছরের মধ্যে ভাটাগুলোকে সরে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ ভাটা কোথায়, কীভাবে সরানো হবে তার কোনো নির্দেশনা নেই।
পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয়ের সংজ্ঞা থাকলে ভালো। আইনে কোনো সায়েন্টিফিক টার্ম থাকলে সেটা সহজ করে বলা প্রয়োজন। সবাই মনে করে, হলো ব্রিক মানে ভেতরে ফাঁকা থাকবে। কিন্তু কতটুকু ফাঁকা থাকবে, ফাঁকার মানদণ্ড কী হবে, সেটা ঠিক করে দিতে হবে। আইনে এসব বিষয়ে একটা সঠিক দিকনির্দেশনা থাকা দরকার।

মো. নওশেরুল ইসলাম
মো. নওশেরুল ইসলাম

মো. নওশেরুল ইসলাম: জাতিসংঘের ধারণামতে, ইটভাটার মাধ্যমে বাংলাদেশের পরিবেশ সবচেয়ে বেশি দূষিত হয়। এই দূষণ কমানোর জন্য বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ সনদে সই করেছে।
আমরা প্রায় ১০০ জন উদ্যোক্তা ১৫ কোটি থেকে শুরু করে ৮০ কোটি টাকা পর্যন্ত সরকারের নির্দেশিত পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করেছি। সরকারের কাছেও আমাদের ভাবমূর্তি অনেক ভালো। কিন্তু আইনটি পড়ার পর আমাদের মনে হলো আমরা অপরাধী।
আমি পরিবেশদূষণ কমাচ্ছি। যাঁরা পরিবেশদূষণ কমাচ্ছে না তাঁদের সঙ্গে আমাকে এক পাল্লায় মাপছেন। অর্থাৎ আমিও অপরাধী। বাংলাদেশের মানুষের মানসিকতা হলো লাল ইট কেনা। আমি বালু দিয়ে ইট বানাতে পারি। কিন্তু একটাও বিক্রি হবে না। আইনটি বাংলাদেশের বাস্তবতার অনেক পরিপন্থী। আমরা যারা বিশাল বিনিয়োগ করেছি, তাদের মুক্তির একটা ব্যবস্থা আপনারা করে দিন।

আলমগীর হোসেন
আলমগীর হোসেন

আলমগীর হোসেন: বাংলাদেশে উন্নত প্রযুক্তির ইট নির্মাণের জন্য জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রিন ব্রিক প্রকেল্প কাজ করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে দুটো গবেষণা কমিশন করেছি। একটা বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির সঙ্গে। এখানে ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন নিয়ে কাজ হচ্ছে।
পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় চিন্তা করছে এই আইনটির কী কী ধরনের পরিবর্তন আনা যায়। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এই আইনটি প্রথম। এ আইনের কিছু ধারা বাস্তবায়নযোগ্য কি না সেটি একটি প্রশ্ন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আমরা আরেকটি কাজ করছি। এর মাধ্যমে ইতিমধ্যে যাঁরা এই শিল্পে বিনিয়োগ করে ফেলেছেন, তাঁদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করা হবে, যাতে তাঁদের বিনিয়োগ কার্যকর হয়। ইট প্রস্তুতের ক্ষেত্রে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। যেমন একজন ৮০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার পরও ব্যবসায়িক সম্মান ও সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না।
গত বাজেটে টানেল কিলনের ক্ষেত্রে আর্থিক প্রণোদনার বিষয়টি এসেছে। কিন্তু অন্যান্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে কী প্রণোদনা দেওয়া হবে, তার কোনো নির্দেশনা নেই। সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত নীতিমালাতে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে তৈরি ইট ক্রয়কে উৎসাহিত করতে হবে। টানেল কিলন করার জন্য একটি খাতে ৪০০ কোটি টাকা আছে, এডিবির থেকে আর্থিক সহযোগিতা পাওয়ার সুযোগ আছে। এসব সুযোগ ব্যবহার করার উপযোগী হয়ে উঠতে হবে।

মো. জিয়াউর রহমান খান
মো. জিয়াউর রহমান খান

মো. জিয়াউর রহমান খান: দেশে ইট প্রস্তুতের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো মাটির ব্যবহার। আজ যেটা আধুনিক প্রযুক্তি, কাল সেটা পেছনে পড়ে যাবে। ২০১৩ সালের আইন নিয়ে আলোচনা করছি ২০১৫ সালে। ২০১৫ সালে এ আইনের কার্যকারিতা অনেকখানি কমে গেছে।
ব্রিকফিল্ডে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের উন্নত প্রযুক্তি সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই। তাঁরা কোনো একটা নতুন প্রযুক্তিতে যেতেও চান না। হাউস বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট যেমন তাদের ক্যাম্পাসে কাজ করছে, তেমনি সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে মাটির ব্যবহার ছাড়া বিকল্প ইট ব্যবহার করতে হবে।
সরকার নিজে বিকল্প ইটের ব্যবহার না করলে অন্যরা করতে চাইবে না। ইটের তৈরি ও বিক্রিতে বিশাল বিনিয়োগ থাকে। এ জন্য একে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা প্রয়োজন।
স্বীকৃতি না থাকলে উৎসাহ থাকে না। যাঁরা ৭০ থেকে ৮০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন, তাঁরা যেন কোথাও হারিয়ে না যান। এত বড় বিনিয়োগকারীদের সহযোগিতা করা দরকার।

সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ
সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ

সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ: যেকোনো শিল্পকারখানার ক্ষেত্রে কোনো প্রযুক্তি বা উদ্যোগ শ্রমিকদের মাধ্যমেই বাস্তবায়িত হয়, অনেক সময় তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হন বলে প্রতিরোধটাও তাঁদের কাছ থেকে আসে। আবার যাঁরা প্রচলিত শিল্পকে ধরে রাখতে চান, তাঁরা শ্রমিকদের ব্যবহার করেন।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর কারখানা বিধিমালা হয়েছে। প্রযুক্তিগত ও বিভিন্ন কারণে কারখানা স্থানান্তর হচ্ছে। কোনো প্রযুক্তি প্রবর্তন, কারখানা স্থানান্তর ইত্যাদির জন্য যেন শ্রমিেকর জীবিকা ঝুঁকির মধ্যে না পড়ে সে নিশ্চয়তা শ্রমিককে দিতে হবে।
ইটভাটায় কেবল মাটি ও পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। এখানে বাধ্যতামূলক শ্রম আছে, দাদনভিত্তিক শ্রম আছে, শিশুশ্রম আছে। পরিবেশ, প্রযুক্তি ও শ্রম আইন নিয়ে যারা কাজ করে—এই তিন পক্ষকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। তাহলে একটি ভারসাম্যপূর্ণ আইন পাওয়া যাবে বলে মনে করি। নকশা অনুমোদন কর্তৃপক্ষের কাছে সব তথ্য থাকা উচিত। এ ক্ষেত্রে কোনো একটির ব্যত্যয় ঘটলে কর্তৃপক্ষ অনুমোদনই দেবে না। এটাতেও অনেক কাজ হবে।

আলতাফ হোসেন
আলতাফ হোসেন

আলতাফ হোসেন: চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুটি ইউনিয়নের কথা বলব। এ দুটি ইউনিয়নে ২১টি ইটভাটা আছে। ইটভাটার জন্য এ দুটি ইউনিয়নে সীমাহীন বিপর্যয় ঘটেছে। আমরা সবাই জানি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমের জন্য বিখ্যাত। ইটভাটার জন্য এখানকার আমের ফলন কমে গেছে, অধিকাংশ আম গাছ থেকে ঝরে যাচ্ছে। আমের পেছনের দিকটা লম্বা হয়ে যাচ্ছে। আম পুষ্ট হওয়ার আগে পচে যাচ্ছে। আমের স্বাদ কমে গেছে। অন্যান্য ফসল, পরিবেশ, নারী, শিশুসহ প্রায় সবকিছু মারাত্মক সমস্যার মধ্যে পড়েছে।
স্থানীয় জনগণ জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে, মানববন্ধন করেছে, শোভাযাত্রা করেছে কিন্তু কোনো কিছুতে কোনো কাজ হয়নি। ওই এলাকার নারী ও শিশুদের শ্বাসকষ্টসহ এমন অবস্থা হয়েছে যে ইটভাটা না তুলে দিলে ওই গ্রামগুলোই তুলে দিতে হবে। কোথাও ইটভাটা থাকলে তার পাশের জমি ভেঙে যায়, জমির উৎপাদনক্ষমতা নষ্ট হয়। ফলে তাঁরা ইটভাটার মালিকদের কাছে জমি বিক্রি করতে বাধ্য হন। অনেক ক্ষেত্রে মালিকেরাও জমি বিক্রি করতে বাধ্য করেন। ইটভাটার মালিকেরা প্রশাসনকে হাতে নিয়ে আরও ইটের ভাটা বৃদ্ধি করছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে মনে হয় ইট পাচার হয়। কারণ, এখানে চাহিদার তুলনায় ইটভাটার সংখ্যা অনেক বেশি। যেকোনোভাবেই হোক না কেন আমরা এ অবস্থার অবসান চাই।

সোহেল আহমেদ
সোহেল আহমেদ

সোহেল আহমেদ: ২০১৩ সালের ইটভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইনের কোনো অপব্যবহার হলে এর বিরুদ্ধে একমাত্র পরিবেশ আদালতই ব্যবস্থা নিতে পারবে। কিন্তু বাংলাদেশে পরিবেশ আদালত মাত্র দুটো। একটা ঢাকায়, অপরটি চট্টগ্রামে।
পরিবেশ আদালতের বিচারক হচ্ছেন একজন যুগ্ম জেলা জজ কর্মকর্তা। পরিবেশ আপিল আদালতের বিচারক জেলা জজ কর্মকর্তা। পরিবেশ আদালতে মামলার সংখ্যা খুবই কম। এর কারণ হলো, যেকোনো মামলায় অনেক ধরনের ঝামেলা থাকে। এ ক্ষেত্রে খুলনা, বরিশাল, যশোর, ফরিদপুরের মানুষ কখনো সম্ভবত ঢাকায় মামলা করতে আসবেন না। পরিবেশ অধিদপ্তরকে আইন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা নিয়ে আরও পরিবেশ আদালতের সংখ্যা বাড়াতে হবে।
খুব দুর্বল অজুহাতে পরিবেশ অধিদপ্তর এলজিইডির রাস্তা না ব্যবহারের ধারাটি বিলুপ্ত করার সুপারিশ করেছে। উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামীণ সড়ক থেকে কতটুকু দূরত্বে ইটভাটা হবে এর কোনো নির্দেশনা নেই। তবে শেষ কথা হলো, বাস্তব অবস্থার নিরিখে আইনটিকে যুগোপযোগী করা দরকার।

মোহাম্মদ সোলায়মান হায়দার
মোহাম্মদ সোলায়মান হায়দার

মোহাম্মদ সোলায়মান হায়দার: ১৯৮৯ সালে একটি আইন হয়েছিল। এ আইনটির মূল উদ্দেশ্য ছিল ইটভাটায় যেন জ্বালানি ব্যবহার করা না হয়। পরে ২০০১ সালে আইনটি সংশোধন করা হয়। সংশোধিত আইনে ছিল কোনো স্থাপনা, বাড়িঘর বা বনভূমির তিন কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ইটভাটা থাকতে পারবে না। কিন্তু এটা বাস্তবায়ন করা যায়নি।
এলজিইডি, কৃষি মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর প্রতিটির একধরনের চাহিদা রয়েছে। তার ওপর রয়েছে ভূমির সংকট। এসব কারণে আইন বাস্তবায়ন করা যায় না। এখন ভূমির সংকট প্রচণ্ড। ওপর থেকে কতগুলো কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেমন এলজিইডির সড়ক রক্ষা করতে হবে। কৃষিজমি মোটেই ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না। ইটের ভাটা নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ। এ অভিযোগ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এ খাতের একটা ভালো অবস্থার জন্য আমরা প্রযুক্তির কথা ভেবেছি, আইন ও নীতির পরিবর্তনের কথা ভেবেছি। কিন্তু ইটভাটার মালিকদের কাছ থেকে যতটুকু সহযোগিতা পাওয়ার কথা, সেটি কিন্তু কখনো পাওয়া যায়নি।
মাটি দিয়ে তৈরি ইটের বিকল্প আমাদের বের করতেই হবে। কারণ, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে মাটি পাওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়বে। আইনটা সেভাবেই করতে হবে, যাতে ইটের ক্ষেত্রে মাটির ব্যবহার থেকে বেরিয়ে আসতে পারি।

এস এম মঞ্জুরুল হান্নান খান
এস এম মঞ্জুরুল হান্নান খান

এস এম মঞ্জুরুল হান্নান খান: আসলে আমাদের সবার মানসিক বিপর্যয় ঘটেছে। শুধুই টাকার পেছনে ছুটছি। আমি যদি নির্মল বায়ু না নিতে পারি, তাহলে অনেক টাকা আমার কোনো কাজে আসবে না। কারণ, টাকা আমাকে সুস্থতা দেবে না।
দুই বছর আগের একটা তথ্য থেকে জানা যায়, ঢাকাতে প্রতিবছর ৩ হাজার ৫০০ জন মারা যায় বায়ুদূষণের জন্য। এঁদের অধিকাংশ বাস, অটোরিকশা ও রিকশার চালক। কারণ এরা জীবিকার জন্য সারা দিন বাইরে থাকেন। অর্থাৎ বায়ুদূষণের জন্য প্রতিবছর ৩ হাজার ৫০০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ঢাকার প্রায় ৪০ শতাংশ বায়ুদূষণের জন্য দায়ী ঢাকার আশপাশের ইটভাটা। বাংলাদেশের প্রায় দুই কোটি মানুষ বায়ুদূষণের জন্য স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে। এই স্বাস্থ্য সমস্যার ব্যয় কত, সেটা আমাদের ভাবতে হবে।
২০৩০ সাল নাগাদ সাড়ে তিন কোটি মানুষ বায়ুদূষণজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগবে। আমি ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, আইনজীবী, সাংবাদিক যা-ই হই না কেন, নির্মল বাতাস সবার প্রয়োজন। দেশের বিভিন্ন জেলায় আটটি জিগজ্যাগ প্রকল্প করেছি। কারণ, মানুষ যাতে দেখে শিখতে পারে।
আমরা আধুনিক পদ্ধতির ভাটা বেশি করতে পারিনি। কারণ, ভাটার মালিকদের আগ্রহে ভাটা তৈরি হয়। আবার অনেকে সনাতন পদ্ধতিতে ভাটা করে পার পেয়ে যাচ্ছেন। যাঁরা নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে চান, তাঁদের বেশি করে আর্থিক সহযোগিতা দিতে হবে। আমাদের কাছে ইট বানানের পরিপূর্ণ উন্নত জিগজ্যাগ প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ আছে। কিন্তু কাজটি করার মতো মানবসম্পদ নেই। ভাটার মালিকদের উচিত প্রশিক্ষিত জনবল তৈরি করা এবং আমাদের ডিজাইন অনুসারে ভাটা প্রস্তুত করা।

অমিত কুমার বাউল
অমিত কুমার বাউল

অমিত কুমার বাউল: ইটভাটার মালিকদের সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত তাঁদের মানসিকতার পরিবর্তন না হবে, ততক্ষণ যতই আইন করি, পুলিশ নিয়ে ঘন ঘন কারখানা বন্ধ করি, কোনো কাজ হবে না। মাটি ছাড়া বিকল্প ইট ব্যবহারের জন্য হাউস বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট, পরিবেশ অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে একটি পরিকল্পনা কমিশন করে পরিপূর্ণ প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর অফিসে জমা দিতে পারেন। এ ক্ষেত্রে বেলা, ইউএনডিপিসহ অন্যান্য সংস্থাও যুক্ত থাকতে পারে। প্রস্তাবে দেখানো হবে পোড়ানো ছাড়া আধুনিক প্রযুক্তির ইট কতটা টেকসই, কতটা ভূমিকম্প সহনীয়, কতটা পরিবেশবান্ধব, কতটা খরচসাশ্রয়ী, কতটা বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ইত্যাদি।
প্রস্তাবে তাঁরা আরও বলবেন, যেকোনো সরকারি কাজে এটা ব্যবহার করা প্রয়োজন। সরকার যদি নিজে কাজ শুরু না করে তাহলে অন্যরা এগিয়ে আসবে না। সরকারকেই প্রথমে উদ্যোগ নিতে হবে। ইটভাটায় যাঁরা কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন, তাঁরা কারও শত্রু নন। তাঁদের সহযোগিতা করতে হবে। সংশোধিত আইনটি মানার জন্য সব পক্ষকে প্রয়োজনীয় ভূমিকা নিতে হবে। পুলিশ, লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে কাউকে কোনো কিছু করতে বাধ্য করা যায় না। এটি সাময়িকভাবে কিছুটা কাজ করলেও দীর্ঘমেয়াদে ফলপ্রসূ হয় না।

মো. মাছুমুর রহমান
মো. মাছুমুর রহমান

মো. মাছুমুর রহমান: আজ আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হলো, সবাই যাতে আইনটি গ্রহণ করতে পারেন, সে রকম একটি আধুনিক আইন প্রণয়ন। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ তাদের সুপারিশ দেবে, যাতে যতদূর সম্ভব আইন সংশোধনের সময় এসব সুপারিশ বিবেচনায় আসে। তাহলে আইনটি সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে।
আমি ম্যাজিস্ট্রেট থাকার সময় ইটভাটায় আইন মানায় অনিয়ম রোধ করতে গিয়ে দেখেছি, এটা কখনো সুখকর হয় না। মালিকেরা মনে করেন, তাঁরা সঠিক। তাঁদের বিরুদ্ধে অন্যায় করা হচ্ছে। সবচেয়ে ভালো হয় সবাই যদি বিষয়টি বুঝতে পারি এবং আইনের প্রয়োগে ব্যবস্থা না নিতে হয়।

মো. আবু বকর
মো. আবু বকর

মো. আবু বকর: ১৯৮৯ সাল থেকে শুরু করে প্রতিবার আইনে কিছু অবাস্তব ধারা থেকে গেছে। যেমন আধা কিলোমিটার দূরে যদি ইটভাটা হয় তাহলে প্রধান সড়কে আসতে অনেক কৃষিজমি নষ্ট হবে। আবার আমরা যখন ফিক্সড চিমনি করলাম, তার কয়েক বছরের মধ্যেই সেটা বন্ধ হয়ে গেল। আবার জিগজ্যাগ করব, এটাও যে বন্ধ হবে না এ বিষয়ে ভাটার মালিকেরা নিশ্চিত হতে পারছেন না। তাই জিগজ্যাগ নিয়ে আগে ব্যাপক গবেষণা করা হোক। আমি িজগজ্যাগ করেছি। আমার পাশের ভাটা আগের মতো রয়ে গেছে। তাদের কাজ করতে কোনো অসুবিধা না হলে কেন জিগজ্যাগ করবে? আমার কথা হলো, পরিবেশের মান ঠিক রেখে একটা সহনীয় আইন করা হোক।

মো. রইছউল আলম মণ্ডল: আমরা কাজ করে যচ্ছি। দুর্ভাগ্য হলো, বাংলাদেশে মাত্র ২১টি জেলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের অফিস আছে। এ অফিসগুলোও খুব বেশি কার্যকর নয়। মাত্র একজন করে সহকারী পরিচালক আছেন।
রিজওয়ানা হাসানসহ আপনারা যে মতামত দিয়েছেন, সব নোট নিয়েছি। এসব বিষয়ে বিবেচনা করব। প্রযুক্তি কিছুদিন যেতে না যেতেই পরিবর্তন হয়। তাই আমি বলব, যে পদ্ধতিতে আপনারা কাজ করেন না কেন, বায়ুর পরিমিত মান ঠিক থাকতে হবে। পরিবেশ আদালত সব জেলায় নেই। এ ক্ষেত্রে জুডিশিয়াল আদালতকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে পরিবেশ আদালতের কাজটি চালিয়ে নিতে হবে। সম্প্রতি কয়েকটি জেলা ঘুরে এসেছি, অনেকে খুব ভালো কাজ করেছেন। কেবল একটা জেনারেটর দিয়ে পানির শাওয়ার তৈরি করে এই শাওয়ারের মধ্য দিয়ে ধোঁয়া ছাড়লে ভীষণভাবে দূষণের মাত্রা কমে যায়। এতটুকু কাজ অনেকে করেন না।
আমি অনুরোধ করব, হাউস বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক সাদেক ভাইকে। আপনারা নেতৃত্ব দিন, যাঁরা বেশি ইট ব্যবহার করে, যেমন রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে, এলজিইডি, পিডব্লিউডিসহ অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ না পোড়ানো ইটের ব্যবহার যেন বাধ্যতামূলক করা হয়। এ ক্ষেত্রে আপনারা পরিবেশ অধিদপ্তর, বুয়েট, ইটভাটার মালিক, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ সবাইকে নিয়ে বসে একটা কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেন। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করব।

আব্দুল কাইয়ুম: পরিবেশকে মানসম্মত রাখার ক্ষেত্রে আমরা সবাই একমত। কারণ, পরিবেশ বিপর্যয় হলে কোনো একটি পক্ষ এককভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সবার জন্য মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থা তৈরি হবে। সংশ্লিষ্ট সবাই এ ব্যাপারে গুরুত্বের সঙ্গে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে আশা করি। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।

আলোচনায় সুপারিশ
* দেশের খাদ্য উৎপদান, কৃষিজমি ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং ইটের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চাহিদা বিবেচনা করে ইট প্রস্তুত নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন
* মাটির ব্যবহার ছাড়া বিকল্প ইট জনপ্রিয় করে তোলার জন্য সব ধরনের সরকারি কাজে বিকল্প ইটের ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানকে বিকল্প ইট ব্যবহারে উৎসাহিত করা
* ইটভাটাকে শিল্পের মর্যাদা দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা
* ইটভাটা স্থাপনের ক্ষেেত্র জেলা প্রশাসকের সনদ বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। জেলা প্রশাসক পরিবেেশর ছাড়পত্র ছাড়া সনদ দেবেন না
* ইট প্রস্তুতের জন্য কোনোভাবেই কৃষিজমি, পাহাড়, টিলা ইত্যাদি থেেক মাটি নেওয়া যাবে না
যাঁরা অংশ নিলেন
মো. রইছউল আলম মণ্ডল : মহাপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর
অমিত কুমার বাউল : অতিরিক্ত সচিব, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান : অ্যাডভোকেট, সুপ্রিম কোর্ট ও প্রধান নির্বাহী, বেলা
মোহাম্মদ আবু সাদেক : পরিচালক, হাউস বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট
এস এম মঞ্জুরুল হান্নান খান : যুগ্ম সচিব ও প্রকল্প পরিচালক, কেস প্রকল্প, পরিবেশ অধিদপ্তর
মো. জিয়াউর রহমান খান : অধ্যাপক, সেন্টার ফর এনার্জি স্টাডিজ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
মোহাম্মদ সোলায়মান হায়দার : প্রকল্প পরিচালক, ব্রিককিলন ইফিসিয়েন্সি প্রকল্প ও পরিচালক (পরিকল্পনা), পরিবেশ অধিদপ্তর
সোহেল আহমেদ : উপসচিব, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়
মো. মাছুমুর রহমান : উপসচিব, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়
আলমগীর হোসেন : কর্মসূচি অ্যানালিস্ট (পরিবেশ), জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি
আমানউল্লাহ বিন মাহমুদ : প্রকল্প ব্যবস্থাপক, গ্রিন ব্রিক প্রকল্প, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি
সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ : সহকারী নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ
মো. নওশেরুল ইসলাম : সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ অটো ব্রিকস ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশন
মিজানুর রহমান বাবুল : সভাপতি, বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি
মো. আবু বকর : মহাসচিব, বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি
আলতাফ হোসেন : নির্বাহী পরিচালক, বিসিডিপি (কমিউনিটি প্রতিনিধি)
সঞ্চালক
আব্দুল কাইয়ুম : সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো