ইভিএমে ভোট ১১% কম

ইভিএমে ভোট

■ ২০১২ সালে প্রথম কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে।

■ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকার দুটিসহ মোট ছয়টি আসনে।

■ গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৮০.২০%। তবে ইভিএমে যে ছয়টি আসনে ভোট হয়েছিল, সেখানে ভোটের হার ছিল গড়ে ৫১.৪১%।

ইভিএম মেশিন
প্রথম আলো ফাইল ছবি

সংসদ নির্বাচনের মতো পৌরসভা নির্বাচনেও কাগজের ব্যালটের চেয়ে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট কম পড়েছে। দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে ব্যালটের চেয়ে ইভিএমে প্রায় ১১ শতাংশ ভোট কম পড়েছে। ঠিক কী কারণে ইভিএমে ভোট কম পড়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ইভিএমে ভোট নেওয়া নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক আছে।

এবার পাঁচ ধাপে পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপে ৬০টি পৌরসভায় ভোট গ্রহণ করা হয় ১৬ জানুয়ারি। এর মধ্যে চারটি পৌরসভায় প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় মেয়র পদে ভোট হয়নি। বাকি ৫৬টি পৌরসভার মধ্যে ২৬টিতে ভোট নেওয়া হয় ইভিএমে। বাকি ৩০টিতে ভোট হয় কাগজের ব্যালটে।

ভোটের হার বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কাগজের ব্যালটে ভোট পড়ার হার ছিল ৬৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। আর ইভিএমে ভোট পড়েছে ৫৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ। অবশ্য এর আগে প্রথম ধাপে গত ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত প্রথম ধাপে ২৪টি পৌরসভার সব কটিতে ভোট হয়েছিল ইভিএমে। ওই নির্বাচনে ৬৫ শতাংশ ভোট পড়েছিল।

দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনের ভোটের হার বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, কাগজের ব্যালটে যেসব পৌরসভায় ভোট হয়েছে সেগুলোর মধ্যে ৬০ শতাংশের কম ভোট পড়েছে ৪টি পৌরসভায়। তবে কোনোটিতেই ৫৫ শতাংশের নিচে ভোট পড়েনি। আর ৭৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে ১৪টি পৌরসভায়।

দ্বিতীয় ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে কাগজের ব্যালটে ভোট পড়েছে গড়ে ৬৮.১৫%। ইভিএমে ভোট পড়ার গড় হার ৫৭.৩৪%।

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, জাতীয় নির্বাচনে ইভিএমের সঙ্গে ব্যালটের ভোটের ব্যবধান ছিল ৩০ শতাংশের মতো। এখানেও ব্যবধান দেখা যাচ্ছে। একই সময়ের নির্বাচনে ভোটের হারের অল্প কিছু ব্যবধান হতে পারে। কিন্তু ১০ শতাংশের বেশি ব্যবধান দেখা যাচ্ছে, যা স্বাভাবিক নয়। ইসি বিভিন্ন সময় বলেছে, ইভিএমে জাল ভোটের সুযোগ নেই। এটি সঠিক ধরে নিলে বলতে হবে, যেসব পৌরসভায় ব্যালটে ভোট হয়েছে সেখানে জালিয়াতি হয়েছে। আর যদি ব্যালটের ভোটের হার সঠিক ধরা হয়, তাহলে বলতে হবে ইভিএমে মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না। ব্যালট ও ইভিএমে ভোটের হারে এত ফারাক কেন, নির্বাচন কমিশনকেই তার যৌক্তিক ব্যাখ্যা দিতে হবে।

অন্যদিকে ইভিএমে হওয়া পৌরসভাগুলোর মধ্যে ৫টিতে ভোটের হার ৬০ শতাংশের কম ছিল। এর মধ্যে তিনটিতে ভোটের হার ৪১ শতাংশের কম। আর ৭৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে ৫টি পৌরসভায়। দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে ঢাকার সাভারে। এখানে ভোটের হার ছিল ৩৩ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে চারটি পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে একটিতে ভোট হয়েছে ইভিএমে। বাকি তিনটিতে ব্যালটে। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন আটটি পৌরসভায়। এর চারটিতে ভোট হয়েছে ইভিএমে।

নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম মনে করেন ঢাকার সভারে কম ভোট পড়ার কারণে ইভিএমে সার্বিকভাবে ভোটের হার কমে গেছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সাভার একটি বড় পৌরসভা, এখানে অনেক ভোটার। এখানকার ভোটারদের বড় অংশ ‘ফ্লোটিং’, ৫০ শতাংশের বেশি ভোটার বাইরের, তাঁরা মূলত বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক। কোভিডের কারণে অনেক কারখানা বন্ধ, ভোটারদের বড় অংশ এলাকায় চলে গেছেন। ফলে এখানে ভোট কম পড়েছে। সাভার বাদ দিলে দেখা যাবে ইভিএমে ভোটের হার কম নয়। ইভিএমে ৮০ শতাংশ ভোটও পড়েছে।

সাভারের ভোটের হার বাদ দিলে ইভিএমে ভোটের হার দাঁড়ায় ৬৪ দশমিক ১৫ শতাংশ। সেটাও কাগজের ব্যালটের ভোটের চেয়ে ৪ শতাংশ কম।

২০১২ সালে প্রথম কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ভোট পুরোপুরি ইভিএমে হয়েছিল। বর্তমান কমিশনের অধীনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকার দুটিসহ মোট ছয়টি সংসদীয় আসনে ইভিএমে ভোট হয়। এর আগে–পরে বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে শুরু থেকেই বিএনপি ইভিএমে ভোট নেওয়ার বিরোধিতা করে আসছে।

গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের হার ছিল ৮০ দশমিক ২০ শতাংশ। তবে ইভিএমে যে ছয়টি আসনে ভোট হয়েছিল সেখানে ভোটের হার ছিল গড়ে ৫১ দশমিক ৪১ শতাংশ। এরপর বিভিন্ন উপনির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও কাগজের ব্যালটের সঙ্গে ইভিএমে ভোটের হারের ব্যবধান দেখা গেছে। বিভিন্ন সময় নির্বাচন কমিশন বলেছিল, প্রযুক্তিভীতি, করোনাকালে নেতিবাচক প্রচারণা, জাল ভোট দেওয়ার সুযোগ না থাকার কারণে ইভিএমে ভোটের হার কম।

শুরু থেকে ইভিএম ব্যবহারে বিরোধিতা করে আসছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। তবে গত বছরের জানুয়ারিতে তিনি ইভিএমের পক্ষে অবস্থান নেন। তখন সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, ‘ইভিএম নিয়ে পূর্বে আমি ক্রিটিক্যাল থাকলেও দুটি কারণে এখন ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে। একটি হচ্ছে, এতে ভোটের আগের রাতে ব্যালট পেপারে বাক্স ভর্তি করার সংস্কৃতির অবসান ঘটতে পারে। দ্বিতীয় কারণটি হচ্ছে, নির্বাচনে কোনো কোনো কেন্দ্রে একশ ভাগ ভোট পড়ার যে অভিজ্ঞতা আমরা অর্জন করেছি, ইভিএম ব্যবহারে তারও অবসান হবে।’