উত্তরা-মতিঝিলজুড়ে মেট্রোরেলের ১৬ স্টেশন

ঢাকার গণপরিবহনের জন্য নতুন সংযোজন আসছে মেট্রোরেল ও বাসের বিশেষ লেন (বিআরটি)। মেট্রোরেল হবে উত্তরা থেকে পল্লবী হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত। আর বাসের বিশেষ লেন হবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে উত্তরা হয়ে গাজীপুর পর্যন্ত। গতকাল রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই দুটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন।

মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। এটি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের একটি কোম্পানি। আর বাসের বিশেষ লেন নির্মাণ করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও সেতু বিভাগ যৌথভাবে। প্রায় ২০ কিলোমিটার মেট্রোরেলের পুরোটাই হবে উড়ালপথে। সমান দূরত্বের বাসের বিশেষ লেন করা হবে বিদ্যমান সড়কের মাঝখান দিয়ে। মাত্র চার কিলোমিটার উড়ালপথে। এই বিশেষ লেন দিয়ে শুধু বিশেষ ধরনের বাস চলবে।

ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, মেট্রোরেলের ডিপো হবে উত্তরা তৃতীয় পর্বে। গতকাল এই ডিপোর মাটি উন্নয়নের কাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর ডিপোর অবকাঠামো নির্মাণ, উড়ালপথ ও রেললাইন নির্মাণ, কোচ-বগি সংগ্রহ ও বিদ্যুতের কাজ হবে পর্যায়ক্রমে। এসব কাজ করার আগে সেবা সংস্থার লাইন সরানো হবে।

মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সাড়ে ১৬ হাজার কোটি টাকা দেবে জাপান। বাকিটা সরকার দেশীয় উৎস থেকে ব্যয় করবে। মেট্রোরেলের পথটির নাম দেওয়া হয়েছে এমআরটি লাইন-৬। ২০ দশমিক ১ কিলোমিটার দীর্ঘ এই পথে ১৬টি স্টেশন হবে। স্টেশনের স্থানগুলো হচ্ছে উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় ও মতিঝিল।

প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, বাস্তবায়নের মেয়াদ ২০২৪ সাল পর্যন্ত। তবে ২০১৯ সালের মধ্যে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত এবং ২০২০ সালে মতিঝিল পর্যন্ত চালু করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে সরকার। ইতিমধ্যে প্রাথমিক নকশা প্রণয়ন হয়েছে।

প্রকল্পের পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন ২০১৯ সালের মধ্যে ফার্মগেট পর্যন্ত চালু করতে। এটা নিয়ে পরামর্শকদের সঙ্গে বসে ঠিক করা হবে। তিনি বলেন, মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে জাপানি মানদণ্ড মেনে।

বাসের বিশেষ লেন: বিআরটির প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১২ সালে। এই প্রকল্পের আওতায় গাজীপুর থেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত বিদ্যমান সড়কের বিভাজক-সংলগ্ন উভয় পাশে দুটি লেন শুধু বিশেষ বাসের জন্য নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে জোড়া লাগানো বড় বাসও থাকবে। বিআরটির মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এই পথে নির্ধারিত বাসের বাইরে অন্য যানবাহন চলবে না। স্টেশনের স্থানগুলো এমনভাবে তৈরি করা হবে, যাতে বাসগুলো এসে থামলে যাত্রীরা সহজে উঠে যেতে পারে।

প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাড়ে ২০ কিলোমিটার বিআরটি পথের ১৬ কিলোমিটার হবে সমতলে। বাকি সাড়ে ৪ কিলোমিটার হবে উড়ালপথে। এর মধ্যে ২৫টি স্টেশন, ২টি টার্মিনাল, সেতু ও ফুটপাত থাকবে। গাজীপুরে নির্মাণ করা হবে বাস ডিপো।

এই প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪০ কোটি টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল ছাড়াও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা এবং গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফ্যাসিলিটি এতে অর্থায়ন করবে।