উদ্বোধনের অপেক্ষায় ভাস্কর্য 'অগ্নিঝরা-৭১'
বরগুনা শহরের টাউন হল মোড়ে স্বাধীনতা স্কয়ারে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসংবলিত ভাস্কর্য ‘অগ্নিঝরা-৭১’ স্থাপন করা হয়েছে। ভাস্কর মৃণাল হকের করা এই ভাস্কর্যটি এখন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষায় আছে। বরগুনা পৌরসভার অর্থায়নে ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে বরগুনার সংস্কৃতিকর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসংবলিত ভাস্কর্য স্থাপনের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
পৌরসভার স্থাপত্য বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জসিম উদ্দিন বলেন, লোহার অবকাঠামোর ওপর পাথরের ঢালাইয়ে নির্মিত এই ভাস্কর্যের ওপরের অংশে সাদা রঙের ব্যবহার করা হয়েছে। ভাস্কর্যে একজন নারী ছাড়াও বুদ্ধিজীবী, কৃষক ও ছাত্রসহ চারজন সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধার প্রতিকৃতি রয়েছে।
ভাস্কর মৃণাল হক মুঠোফোনে বলেন, ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধে নারীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নিয়েছেন। এই ভাস্কর্যে তারই প্রতিকৃতি চিত্রিত হয়েছে। এখানে একজন সশস্ত্র নারী যোদ্ধা আছেন। কারণ, নারীরা রণাঙ্গনে যে কেবল সেবক হিসেবেই নন, যুদ্ধেও অংশ নিয়েছেন, সেটা বোঝানোর জন্য এই ফিগারটি সংযোজন করা হয়েছে।’
মৃণাল হক বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি রাজশাহী ক্যাডেটের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিলাম। সে সময় দুবার যুদ্ধ করার জন্য পালিয়ে যাই এবং সারদা রেলক্রসিংয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে কয়েকজন শিক্ষক ও ছাত্র মারা যায়। এটা আমার মনে দাগ কেটেছিল। এরপর থেকে শিল্পের তাগিদে আমি মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক ভাস্কর্য নির্মাণ করছি। এ পর্যন্ত ১৫০টি ভাস্কর্য নির্মাণ করেছি।
ভাস্কর্যে সাদা রঙের ব্যবহার প্রসঙ্গে তিনি জানান, ওপরে সাদা সিমেন্টের প্রলেপ দিলে বেশ কিছুদিন পর এটায় শেওলা ধরে সৌন্দর্য হারায়। এ জন্য ওপরে সাদা রঙের ব্যবহার করা হয়েছে। এতে ওই রং নষ্ট হয়ে গেলে আবারও রং করে নিলেও এর নান্দনিকতা অক্ষুণ্ন থাকবে। পুরো ভাস্কর্যটি নির্মাণে দেড় মাস সময় লেগেছে বলে জানান তিনি।
শহরের টাউন হল মোড় চত্বরে ভাস্কর্য স্থাপনের পর ওই স্থানের নামকরণ করা হয়েছে স্বাধীনতা স্কয়ার। বরগুনা পৌরসভার মেয়র শাহাদাত হোসেন জানান, স্বাধীনতা স্কয়ার ও প্রায় ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন শহরের এতিহ্যবাহী নাথপট্টি লেকের নান্দনিক শোভাবর্ধন প্রকল্পটি একই দিনে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে।