উপাচার্য নেই তিন মাস ভর্তি পরীক্ষায় জটিলতা

দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদ তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে শূন্য। ফলে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষাসহ প্রাতিষ্ঠানিক অন্যান্য কার্যক্রমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. সাইফুর রহমান বলেন, চার বছর মেয়াদ শেষে গত ২৬ সেপ্টেম্বর সদ্য সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মো. রুহুল আমিন তাঁর সাবেক পদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিনের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। গত ১৮ থেকে ২১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষার সময়সূচি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু উপাচার্য না থাকায় ভর্তি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ তিনি ছাড়া বিপুল অঙ্কের আর্থিক ব্যবস্থাপনার দায়ভার কারও পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, উপাচার্য নিয়োগের বিষয়টি বাছাই পর্যায়ে রয়েছে। শিগগিরই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, একজনকে উপাচার্য করার জন্য সারসংক্ষেপ পাঠানো হলেও তা নাকচ হয়ে যায়। এ জন্য দেরি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা বলেন, ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১২ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মো. রুহুল আমিনকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। এর আগে তিনি ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন। উপাচার্য হিসেবে তাঁর চার বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদন সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে তাঁকে আবারও উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার একটি প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, রুহুল আমিনকে উপাচার্যের পদে পুনর্বহাল বা নতুন কাউকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ না দেওয়ায় এ পদটি শূন্য পড়ে আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৪৫টি শিক্ষা বিভাগ, প্রশাসনিক শাখা নয়টি, আটটি ডিন অফিসসহ বিভিন্ন শাখা পরিচালনার ব্যয় অনুমোদন করেন উপাচার্য। পদটি শূন্য থাকায় এসব বিভাগ, শাখা ও কার্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা কঠিন হয়ে পড়েছে। শৃঙ্খলাও ব্যাহত হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ফার্মে কর্মরত উত্তম রায় প্রথম আলোকে বলেন, ৮ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে মৌসুমি শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। প্রতিদিন ৩৩০ টাকা মজুরি পান। উপাচার্য না থাকায় তিন মাস ধরে তাঁর মতো ৭৫ জন মৌসুমি শ্রমিকের মজুরি বন্ধ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ও হিসাব শাখা সূত্রে জানা গেছে, উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত আর্থিক বিল বা লেনদেন ভাউচার অনুমোদন করার ক্ষমতা রেজিস্ট্রারের থাকলেও ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার তা করছেন না।
সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মো. রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়াদ শেষে আমি আমার সাবেক চেয়ারে ফিরে এসেছি। প্রধানমন্ত্রী যাঁকেই উপাচার্য নিয়োগ দেবেন তাঁর নেতৃত্বেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলবে।’