এইচআইভি এইডস সচেতনতা আমাদের করণীয়

আলোচনা
মতিউর রহমান: আজকের আলোচনার বিষয় ‘এইচআইভি এইডস সচেতনতা: আমাদের করণীয়’। এ অালোচনায় অংশগ্রহণের জন্য তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও এই অনুষ্ঠানে এসেছেন। আমরা মনে করি, সরকারের সহযোগিতা ছাড়া এ ধরনের কাজ ফলপ্রসূ হয় না।
১৯৯৮ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত এ বিষয়ে আমরা কিছু কাজ করেছি। আজ আবার স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও প্রথম আলো যৌথভাবে এ অনুষ্ঠান করছি। ভবিষ্যতেও আমরা একসঙ্গে এ কাজ করে যেতে চাই।
বিশেষ করে মানুষকে সচেতন করার কাজটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেবল মহানগর ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরেও এ ধরনের অনুষ্ঠান করা প্রয়োজন। বিশ্বব্যাপী এইডস নিয়ে যে ভয়াবহতা, যে উদ্বেগ সেটা আমরা জানি।
এইডসের বিষয়ে প্রথম জানা যায় আশির দশকে। বাংলাদেশে ১৯৮৯ সালে প্রথম এইডস রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়। তারপর দিন দিন কিছুটা বাড়তে থাকে। এক তথ্যমতে, ২০১৩ সালে এইডসে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ৮২ জন। ২০১৪ সালে এ রোগে আক্রান্ত হয় ৪৩৩ জন। মারা যায় ৯১ জন।
আমাদের পাশের দেশগুলো যেমন: ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মিয়ানমারসহ অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশ অনেক নিরাপদ আছে। এর কারণ, আমাদের সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ, সামাজিক অনুশাসন, ধর্মীয় মূল্যবোধ ইত্যাদি। কিন্তু আমাদের সতর্ক ও সজাগ থাকতে হবে। এ জন্য এইডস বিষয়ে প্রয়োজন গণসচেতনতার। এখানেই রয়েছে প্রচারমাধ্যমের ভূমিকা।
আজকের এ আলোচনা অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ আলোচকেরা আছেন। তাঁরা এ বিষয়ে করণীয় ও দিকনির্দেশনামূলক আলোচনা করবেন। সবাইকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।

আনিসুর রহমান: ২০১৪ সালে বিশ্বে ২০ লাখ মানুষ এইচআইভি এইডসে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে নারী-শিশুসহ প্রায় সব শ্রেণির মানুষ আছে। বাংলাদেশে আমরা তথ্যগতভাবে অনেক ভালো অবস্থানে আছি। ১৯৮৯ সালে আমাদের দেশে প্রথম এইচআইভি রোগী ধরা পড়ে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিবছর রাষ্ট্রীয়ভাবে এইচআইভি রোগীর সংখ্যা ঘোষণা করা হয়। এ ঘোষণা অনুযায়ী ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৭৪। মারা গেছে ৫৬৩ জন। চীনে ৭ দশমিক ৮ লাখ এইচআইভি পজিটিভ রোগী আছে। নেপালে ৪৯ হাজার। ভুটানে ১ হাজার ১০০। মিয়ানমারে দুই লাখ। ভারতে ২ দশমিক ১ লাখ। থাইল্যান্ডে ৪ দশমিক ৫ লাখ।
এই হিসাবে বংলাদেশ অনেক নিরাপদ। কিন্তু আমরা অনেক ঝুঁকিতে আছি। যেমন আমাদের দেশের প্রায় এক কোটি মানুষ বিদেশে কাজ করে। তাদের মধ্যে হয়তো এইচআইভি পজিটিভ থাকতে পারে। এদের মাধ্যমে এইচআইভি পজিটিভের সংখ্যা বাড়তে পারে। আবার আমাদের পাশের দেশগুলোয় এইচআইভি পজিটিভের সংখ্যা অনেক বেশি। তাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রয়েছে। এভাবেও বাড়তে পারে।
সিলেট, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম—এসব অঞ্চলে এইচআইভি পজিটিভের সংখ্যা বেশি। কারণ, এসব অঞ্চলের বেশি মানুষ বিদেশে থাকে। এত দিন যাবৎ গ্লোবাল ফান্ডের অর্থায়নে এইচআইভি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চলত। গত মে মাস থেকে সরকারি অর্থায়নে এ কার্যক্রম চলছে। দেশের ১২টি হাসপাতালে এইচআইভি নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চলছে। এনজিওগুলোও কাজ করছে। আরও একটা ভালো খবর হলো অনেকেই এইচআইভি পরীক্ষা করাচ্ছে।
মতিউর রহমান: এখন মাননীয় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুকে আলোচনার জন্য অনুরোধ করিছ।

হাসানুল হক ইনু: এইডস দিবস সামনে রেখে আজকের এ অনুষ্ঠান সচেতনতামূলক কর্মসূচি। বাংলাদেশ এখনো এইডসের ঝুঁকিমুক্ত। তবে এটা এমন একটা রোগ যেকোনো সময় সংক্রমণ হতে পারে। যেকোনো সময় এটা বেড়ে যেতে পারে। তাই এই এইচআইভি এইডস বিষয়ে মানুষের জানা দরকার। এইচআইভি সংক্রমিত রোগীদের সেবার পদ্ধতিও জানা প্রয়োজন।
একসময় যক্ষ্মা ও কুষ্ঠরোগকে মানুষ অনেক ভয় পেত। একটা স্লোগান ছিল যে, ‘যার হয় যক্ষ্মা তার নেই রক্ষা’। এসব রোগকে আমরা জয় করেছি। মানুষ এখন এসব নিয়ে ভয় পায় না। যক্ষ্মা ও কুষ্ঠরোগ নিরাময়যোগ্য হয়েছে। এইডস একটি রক্তবাহিত রোগ। এটা প্রধানত ঝুঁকিপূর্ণ যৌনমিলনের মাধ্যমে ছড়ায়। আবার এইডস রোগীর ব্যবহৃত সুচ অন্য কেউ ব্যবহার করলে তারও হতে পারে। এইডসের বিষয়টিকে আমরা দুটি ধাপে বিবেচনা করতে পারি। এক. কী করলে এইডস হয় না অর্থাৎ প্রতিরোধের ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করা। দুই. এইডস হয়ে গেলে কীভাবে সারিয়ে তোলা যায় তার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা।
ইতিমধ্যে সরকার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা করছে। তবে আমি মনে করি, এ খাতে সরকারের আরও কিছুটা বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। আমি এ ব্যাপারে সুপারিশ করব। এ ক্ষেত্রে ব্যাপক সচেতনতার বিষয় রয়েছে। যেমন আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে চলাফেরা করলে, একসঙ্গে বসে খাবার খেলে, তার সঙ্গে ঘুমালে এইডস হয় না। তাই তাকে কোনোভাবে ঘৃণা করা যাবে না। তাকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করতে হবে। তাহলে এই রোগী কিছুটা হলেও মানসিক শান্তিতে থাকবে। আবার যদি প্রাথমিক পর্যায়ে কারও রোগ ধরা পড়ে তাহলে তার চিকিৎসা অনেকটা সহজ হয়। দেশের প্রায় এক কোটি মানুষ প্রবাসী। তাদের মধ্যে কেউ কেউ এইডসের বাহক হতে পারেন।
তা ছাড়া যৌনপল্লির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা, বস্তিবাসী, মাদকসেবী এবং বিভিন্ন স্টেশনে ও রাস্তায় যারা থাকে এসব মানুষের মাধ্যমে এইডস ছড়াতে পারে। আর বিশেষ করে যারা বিদেশে যান তাঁরা এবং কলেজ–বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত যেসব শিক্ষার্থী আছে এদের সবার মধ্যে অনিরাপদ যৌনমিলন ও আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত সুচ ব্যবহার না করাসহ সতর্কতামূলক একটি ছোট্ট লেমিনেটিং প্রচারপত্র দেওয়া জরুরি। এতে খুব বেশি অর্থের প্রয়োজন হয় না।
কেবল নির্দিষ্ট কোনো দেশে নয়, বিশ্বের যেকোনো দেশে গেলেই এইডস হতে পারে। এ ব্যাপারে সবাইকে ব্যাপকভবে সচেতন করা গেলেই এইডস নিয়ে আমাদের ঝুঁকি থাকবে না।

বিটপী দাশ চৌধুরী: বাংলাদেশে ১২ বছর ধরে এইচআইভি এইডস নিয়ে কাজ করছি। আমরা প্রধানত তরুণ ও পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করি। আমরা একাধারে পাঁচ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও পোশাকশিল্পের কর্মীদের মধ্যে এইচআইভি এইডস সচেতনতামূলক কর্মশালা করেছি। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বছর দুতিনবার গিয়েছি। আমরা লক্ষ করেছি, এ কাজের ফলে পরিবর্তন এসেছে। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সেবামূলক কর্মকাণ্ড করে। আমাদের কর্মীদের মধ্যেও বিভিন্ন প্রকার সচেতনতামূলক কাজ করা হয়। আমাদের প্রতিষ্ঠানে যারা নতুন যোগদান করে, তাদের একটা অনলাইন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। আমাদের প্রতিষ্ঠানে নতুন কেউ যোগদানের সময় তার যদি এইচআইভি থাকে বা তার পরিবারে এইচআইভি থাকে, তাহলেও সে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে কাজ করার সুযোগ পায়। কারণ, আমরা জানি এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে মিশলে বা কাজ করলে কারও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই। তা ছাড়া আমাদের প্রতিষ্ঠান সব রকম বৈষম্যের ঊর্ধ্বে। এইচআইভি এইডস সম্পর্কে আমাদের কর্মীদের ধারণা আছে। তারা জানে কেন এইডস হয়। কেন হয় না। এইচআইভি নিয়ে কাজ করার জন্য আমাদের কর্মীরা তিন দিন বেতনসহ ছুটি পায়। এই তিন দিন তারা তাদের কমিউনিটিতে এইচআইভির বিষয়ে সচেতনতার কাজ করে।
জতিসংঘ ১৭টি লক্ষ্য নিয়ে বিশ্বে কাজ করবে। আমরা এর প্রচারণার অংশীদার হিসেেব আছি। বাংলাদেশে এর অংশ হিসেবে স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে কাজ করব। সামাজিক বৈষম্য দূর করার ব্যাপারে আমাদের কাজ করতে হবে। সর্বোপরি সবাইকে সচেতন করার কোনো বিকল্প নেই।
আব্দুল কাইয়ুম: এইডস প্রতিরোধে সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলো কাজ করছে। বেসরকারি কিছু সংস্থার মাধ্যমে রোগীদের সেবা দেওয়া হলেও যথেষ্ট নয়। সরকারি সেবার আওতা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। এখন আলোচনা করবেন লিমা রহমান

লিমা রহমান: সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে ২০০৪ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ধাপে ধাপে তরুণদের মাঝে গণসচেতনতার কাজ করে আসছে। সে সময় আমাদের অন্যতম সহযোগী ছিল প্রথম আলো। মাদককে ‘না’ বলার মতো, এইডসকে ‘না’ বলার মতো সচেতনতা জাগানোর কাজ করছে প্রথম আলো বন্ধুসভা। সচেতনতার প্রথম দিকে বলা হতো: ‘বাঁচতে হলে জানতে হবে’। কীভাবে এইডস ছড়ায় বা ছড়ায় না? ধীরে ধীরে তা আরও স্পষ্ট করে প্রচার হলো। দেখা গেল এইডস আক্রান্ত হওয়ায় একটা ছেলে তার মাকে রক্ত দিতে পারছে না। এখন জোর দেওয়া হচ্ছে এইচআইভি পরীক্ষায়।
সরকারি অর্থায়নে যদি এই গণসচেতনতা সৃষ্টি করা যায়, তাহলে এই সচেতনতামূলক বার্তাগুলো আলোর মুখ দেখবে। বিভিন্নভাবে সচেতনতামূলক কাজের প্রচার হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ বিষয়ে প্রচার ঘটেছে অনেক।
সারা দেশের সব স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার পাঠ্যপুস্তকের অন্তর্ভুক্ত করা হয় এই এইডস সচেতনতা–বিষয়ক কারিকুলাম। এমনকি সব জায়গার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। তবে শিক্ষকদের পাঠদােন এ বিষয়টি খুব একটা গুরুত্ব পায়নি। স্কুল-কলেজ কিংবা ক্লাবগুলোতে যদি আলাদা করে একটি যুববান্ধব কর্নার করা যেত, তাহলে বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে আরও সচেতন হওয়া যেত।

জাহাঙ্গীর হোসেইন: আমরা জানি যে এই সমস্যার সূচনা হয় ১৯৮৯ সাল থেকে। তখন থেকেই আমরা এইচআইভি এইডস নিয়ে কাজ করছি। গত ২০ বছরে আমরা খুঁজে বের করেছি কারা এইচআইভি পজিটিভ, কারা ঝুঁকিতে আছে। এদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য অনেক সংগঠন তৈরি হয়েছে। দুর্জয় নারী সংঘ, মুক্ত আকাশ বাংলাদেশ, আশার আলো সোসাইটি, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি ইত্যাদি বেশ ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আমাদের পাশে সাহায্যের হাত অতটা না থাকলেও আমরা জানি যে আমাদের সমস্যা কোথায়। আমাদের কী করার আছে।
মাদক সেবকদের বেশির ভাগই পরিবার–বিচ্ছিন্ন। এরা নিজেরা যেমন আক্রান্ত হয়ে আছে, তেমনি এদের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে অন্যরা। ঢাকায় ২০০৭ সালে সুই-সিরিঞ্জ দিয়ে মাদকসেবীর সংখ্যা ছিল ৭ শতাংশ। বর্তমানে এই সংখ্যা কমে এসেছে ৫ শতাংশে। এদের বেশির ভাগই পথশিশু। তাই আমি মনে করি, সরকারি ও বেসরকারিভাবে এ ক্ষেত্রে আরও দৃষ্টিপাত করা উচিত।

সায়মা খান: বতর্মানে যেসব ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা আছে, তাতে একজন এইডস আক্রান্ত লোক দিব্যি স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন। দেশে এখন প্রায় ৮ হাজার ৯০০ এইচআইভি পজিটিভ আক্রান্ত রোগী রয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, এদের সবারই এআরটি বা অ্যান্টিরেক্টোভাইরাল থেরাপি পাওয়া উচিত। কিন্তু অ্যান্টিরেক্টোভাইরাল থেরাপি পাচ্ছে মাত্র ১৩০০-১৪০০ জন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনেসকো এবং বিশ্বের অন্যান্য অঙ্গসংগঠন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে এই সিদ্ধান্তে এসেছে যে তিনটি ৯০-৯০-৯০ টার্গেট পূর্ণ করতে হবে। এর প্রথম ৯০ হলো দেশে যতজন এইচআইভি পজিটিভ আক্রান্ত রোগী আছেন, তাঁদের ৯০ ভাগ জানবেন যে তাঁরা এইচআইভি পজিটিভ। দ্বিতীয় ৯০ হলো যতজন এইচআইভি পজিটিভ আক্রান্ত রোগী, তাঁদের মধ্যে অন্তত ৯০ ভাগ রোগীকে এআরটি বা অ্যান্টিরেক্টোভাইরাল থেরাপির আওতায় আনা উচিত।
শেষের ৯০ হলো যাঁরা অ্যান্টিরেক্টোভাইরাল থেরাপির আওতায় আছেন তাঁদের ৯০ ভাগের এইচআইভি ভাইরাস বৃদ্ধির পরিমাণ কমে আসবে। আমাদের দেশে আমরা প্রথম ও দ্বিতীয় ৯০তে আছি, তাও খুব কম পরিমাণে। শেষ ৯০তে এখনো নামতেই পারিনি। সুতরাং, বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রমের পাশাপাশি নিজেদের সচেতন হতে হবে।

মো. ফসিউল আহ্সান: আমরা যারা হিজড়া ও সমকামীদের নিয়ে কাজ করি তারা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে আরও বেশি ঝুঁকিতে আছি। এই জনগোষ্ঠী সাধারণত ১৫ থেকে ১৮ বছরেই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পেড়। তখন বেঁচে থাকার তাগিদে হয় তারা দোকানে দোকানে ঘুরে টাকা তোলে, অন্যথায় জড়িয়ে পেড় যৌনতায়।
এ ক্ষেত্রেই এইচআইভি পজিটিভে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় অনেক। তাই ওদের জন্য বিকল্প জীবনধারণের উপায় খুঁজে বের করা অত্যন্ত জরুরি। সবার জন্য পারিবারিক পরামর্শ খুব প্রয়োজন। এটুকু বোঝা উচিত যে এইচআইভি পজিটিভে আক্রান্ত হলেই তাকে ফেলে দেওয়ার নয়। বরং তার পাশে দাঁড়ানো উচিত, তাকে সহযোগিতা দেওয়া উচিত।
পারিবারিক পরামর্শ সহায়তা ও বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে হিজড়া জনগোষ্ঠীকে পরিবারে সবার সঙ্গে বসবাসের সুযোগ তৈরি করে দেওয়া জরুরি।

হাবিবা আক্তার: এ বছরের মে মাস থেকে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ২০টি হাসপাতালে এইচআইভি পরীক্ষাকেন্দ্র খোলা হয়েছে। এর মাঝে ১২টিই সরকারি হাসপাতাল। কিন্তু সামাজিক অপবাদের ভয়ে মানুষ এইচআইভি পরীক্ষাকেন্দ্রে আসছে না।
একজন এইচআইভি পজিটিভ আক্রান্ত রোগী কিন্তু সব জায়গায় গিয়ে চিকিৎসা করাতে পারেন না। তাই এই বিষয়গুলোর প্রতি আমাদের নজর দিতে হবে। ২০টি এইচআইভি পরীক্ষাকেন্দ্র খুলেছি। কিন্তু এ বিষয়ে যদি সচেতনতা বাড়াতে না পারি, তবে এগুলো কাজে আসবে না।
অন্যান্য রোগের বেলায় দেখা যায় চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগী পাঠানো হচ্ছে ঢাকায়। কিন্তু এইচআইভি পজিটিভ আক্রান্ত রোগীরা কি সেই একই সেবার আওতায় পড়ছে? আমাদের এই অবস্থারও পরিবর্তন করা প্রয়োজন।
প্রচারণা যেন আবার একতরফাভাবে ভীতি প্রদর্শনমূলক না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। না হয় যারা এইচআইভি পজিটিভে আক্রান্ত, তারা আবার নিজেদের অন্যদের থেকে দূরে সরিয়ে রাখবে।

ব্রাদার রোনাল্ড ড্রাহোজাল: এক শ্রেণির মাদক সেবনকারী সুই-সিরিেঞ্জর মাধ্যমে শরীরে মাদক নেয়। কেউ বলেন তাদের সংখ্যা ৪০ লাখ, কেউ বলেন ৮০ লাখ। তবে আমাদের ধরাণা তাদের সংখ্যা ৪০ লাখের বেশি। এ ছাড়া আছে ইয়াবা সেবনকারী। এরা সবাই অসুস্থ। তবে তাদের সুস্থ করে তোলাও অসম্ভব কিছু না। আমাদের পুনর্বাসনকেন্দ্রে আছে যারা তাদের অনেকেই খুব ছোটবেলা থেকেই যৌন কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। ইউনিসেফের গবেষণায় দেখা যায় ৪৯ দশমিক ২ শতাংশ পথশিশু নেশা করছে। এদের বয়স বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ১০ বছরের নিচে। তারা একে তো নেশা করছে, সেই সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে যৌন কর্মকাণ্ডেও। আজ যারা পথশিশু, কদিন পরেই তারা তরুণ হয়ে উঠবে। তখন হয়তো তাদের অসামাজিক কর্মকাণ্ডের মাত্রা আরও বেড়ে যাবে। এ ব্যাপারে সবাইকে আরও সচেতন হতে হবে।

মো. আখতারুজ্জামান: দেশে এইচআইভি প্রতিরোধের কাজ হচ্ছে। কিন্তু এটা কোনো খণ্ডকালীন সময়ের কাজ নয়। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। সব সময় করতে হবে। এ ক্ষেত্রে এইচআইভি সচেতনতার কাজটি কীভাবে সরকারি কাঠামোর মধ্যে আনা যায়, সেটা গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।
সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ব্যাপক কর্মীবাহিনী আছে। যেমন: পরিবারকল্যাণ সহকারী, স্বাস্থ্য সহকারী ইত্যাদি। তাঁরা দেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত কাজ করেন। এরা ব্যাপকভাবে মানুষের মধ্যে সচেতনতার কাজটি করতে পারেন।
দীর্ঘমেয়াদে বাংলাদেশকে এইচআইভি ঝুঁকিমুক্ত করতে হলে এটা সরকারি কাঠামোর মধ্যে আনতেই হবে। দীর্ঘদিন ধরে দেশে এনজিওগুলো সফলতার সঙ্গে কাজ করেছে। এ জন্য আমাদের দেশে এখনো এইচআইভি সংক্রমণের মাত্রা আতঙ্কের পর্যায়ে যায়নি। এ জন্য বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম বলেছে, সক্ষমতার বিচারে এইডস প্রতিরোধে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে এক নম্বর।
আমাদের সম্পদ কম হলেও আমরা অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। এ অভিজ্ঞতা যদি দক্ষতার সঙ্গে কাজে লাগাই, তাহলেও আমরা সফল হব। সরকারের পক্ষ থেকে যতটুকু বরাদ্দ এইচআইভি খাতে আছে, সেটুকুও ব্যবহার হয় না। বছর শেষে এ অর্থ ফেরত যায়।
সবাই মিলে সঠিকভাবে সরকারের বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয় করতে পারলেও আমরা এইচআইভি এইডস শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে পারব।

শরফুল ইসলাম খান: সারা পৃথিবীতে অনেকগুলো গবেষণাপত্র আছে, আমাদের দেশেও আছে। জ্ঞান ও সচেতনতা বৃদ্ধি পেলেই যে মানুষের আচরণ পরিবর্তন হবে, তা ঠিক নয়। অর্থাৎ আপনার জ্ঞান বাড়ছে, কিন্তু একই সঙ্গে আপনার আচরণে যে পরিবর্তন আসার কথা, তা আসছে না। এর মানে হলো জ্ঞান ও সচেতনতা বৃদ্ধি আপনার আচরণ পরিবর্তনের সমান্তরাল নয়।
এইচআইভি এইডসের কথা নাই-বা বললাম, কিন্তু ধূমপান করলে যে ক্যানসার হয়, এ কথা তো সবারই জানা। ঠিক একইভাবে অনিরাপদ যৌনমিলনে যে এইডস হতে পারে, এই তথ্যটিও এখন সবার জানা আছে। কিন্তু তবু যে হারে কন্ডমের ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়া উচিত ছিল, সে হারে বাড়ছে না।
এখানেই বিষয়টি বোঝা যায় যে জ্ঞান ও সচেতনতা বৃদ্ধি পেলেই মানুষের আচরণ পরিবর্তন হয় না, দরকার তার বিকল্প উপায়। যদি অন্য কোনো উপায় না খুঁজে পায়, তাহলে তো সে সেই পুরোনো অভ্যাসেই থেকে যাবে।
আমরা তো জানি, ফলমূল-শাকসবজিতে ফরমালিন মেশানো হচ্ছে। তবু আমরা এসব খাই, কারণ আমাদের আর বিকল্প উপায় নেই। ঠিক তেমনি যৌনকর্মীদের বেলায়ও এমনটা ঘটছে।
এই যে দেশব্যাপী এত গণসচেতনতা চলছে, এটা ভালো। কিন্তু মন্দ দিকটি হলো এই, তাদের জীবনের মানোন্নয়নের জন্য আমাদের কোনো পদক্ষেপ নেই। টিভিতে দুএক মিনিটের বিজ্ঞাপন দিয়ে এইচআইভি এইডসের মতো এত জটিল বিষয় নিয়ে সচেতন করা সম্ভব নয়। প্রয়োজন দেশের সব সাংবাদিক, কবি, সাহিত্যিক, ঔপন্যাসিকের এগিয়ে আসা। একেকজন যৌনকর্মীকে নিয়ে একেকটি বিরাটকায় গল্প-উপন্যাস লেখা সম্ভব, আর সেসবের মাধ্যমে ভিন্নভাবে সর্বত্র সচেতনতা জাগিয়ে তোলা সম্ভবপর হয়ে উঠবে

নজরুল ইসলাম: শ্রীলঙ্কার ম্যাচের প্যাকেটে লেখা দেখেছি, ‘তুমি যদি মনে করো তোমার এইচআইভি এইডস হতে পারে, তাহলে তুমি ওই জায়গাগুলোতে পরীক্ষা করাও।’ এটা থেকে বোঝা যায় ওরা কতটা সচেতন।
কেউ যদি অনিরাপদ যৌনমিলন করে বা কোনো কারণে অনিরাপদ ইনজেকশন নেয়, তাহলে সে এইচআইভি এইডস পরীক্ষা করাতে পারে।
আর সচেতনতা এক না। সিগারেট খেলে ক্যানসার হতে পারে, কিন্তু আমি সিগারেট খাচ্ছি। একবার লন্ডনে এক রেস্টুরেন্টে কিছু সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। কিছু লোক বলছে সব খাবার আমরা রান্না করেছি। আমিসহ সবাই হাততালি দিচ্ছি। ওই লোকগুলো বলল, আমার সবাই এইচআইভি আক্রান্ত। সঙ্গে সঙ্গে হাততালি বন্ধ হলো।
সত্যি কথা হলো এইচআইভি আক্রান্ত মানুষের সঙ্গে মিশলে, তাদের রান্না করা খাবার খেলে, তারা হাঁচি-কাশি দিলে, তাদের সঙ্গে চলাফেরা করলে, ঘুমালে অন্যদের এইচআইভি হয় না। অর্থাৎ আমরা যে সিগারেট খাচ্ছি, হাততালি বন্ধ হলো, এর অর্থ আমরা জানলাম জ্ঞান অর্জন করলাম, কিন্তু সচেতন হলাম না।
সচেতনতা অর্জন করা খুব বড় বিষয়। একবার আমার অফিসে এইচআইভি নিয়ে করা অজানা ঘাতক নামে একটি বাংলা ছবি দেখছি। ছবিটির বেশ প্রশংসা করলাম। ওই ছবি দেখে এক নারী হাউমাউ করে আমার কাছে কেঁদে বলল, ‘স্যার, আমি তো বাঁচব না। আমার তো এইডস হয়েছে।’ তখন আমার মনে হলো আমাদের বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে অনেক সচেতন হতে হবে।
কোনো বিজ্ঞাপন এমন হবে না যাতে লেখা থাকবে এইডস হলেই করুণ মৃত্যু, নিশ্চিত মৃত্যু, বেঁচে থাকার কোনো উপায় নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো এইডস নিয়েও অনেকে বেঁচে আছে, ঘর–সংসার করছে। তাই আমাদের সবকিছুতে সতর্ক থাকতে হবে।

মেহের আফরোজ চুমকি: সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ছয় নম্বরে ছিল এইচআইভি প্রতিরোধ। আমরা এ বিষয়ে কাজ করেছি। আমরা গর্ববোধ করি এ জন্য যে বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় আমাদের দেশে এইচআইভি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক কম। কারণ, আমাদের দেশের সামাজিক মূল্যবোধ, মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বস্ততা এখনো অনেক বেশি।
তারপরও আমরা ঝুঁকিমুক্ত—এ কথা বলা যাবে না। তবে দেশের অনেক নারী দেশে-বিদেশে বিভিন্নভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হন। তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনেক কিছু করতে হয়। এভাবে অনেক সময় তাঁরা এইচআইভি এইডসে সংক্রমিত হন। অনেক ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি করার সময় এইচআইভি আক্রান্ত হয়ে কেউ কেউ দেশে এসে বিয়ে করেছেন।
এভাবে তাঁর স্ত্রী ও সন্তান এইচআইভি আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু এই স্ত্রী ও সন্তান কোনোভাবেই এই নিষ্ঠুর নিয়তির জন্য দায়ী নয়। তার ওপর সমাজ এই স্ত্রী-সন্তানকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। আমাদের সেই চেষ্টা করতে হবে, যাতে এমন পরিণতি মানুষের না হয়।
টাকাপয়সা থাকলেই বিয়ে দিতে হবে, এ মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। ছেলে কোথায় ছিল, কী করত—এসব খোঁজখবর নিয়ে বিয়ে দিতে হবে। এইচআইভি সংক্রমণের ক্ষেত্রে আমরা অনেক নিরাপদে আছি। এ অবস্থা ধরে রাখতে হবে।
এখন আমাদের প্রধান কাজ হলো গ্রামগঞ্জের মানুষদের সচেতন করা। শহরের বস্তিবাসী, ভাসমান মানুষ, যৌনপল্লির সঙ্গে জড়িত সবাইকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে সচেতন করতে হবে।
আব্দুল কাইয়ুম: এইচআইভি এইডস নিয়ে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা হলো। সবাই সচেতনতার ওপর জোর দিয়েছেন। দুজন মন্ত্রী অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও আমাদের সময় দিয়েছেন। এ থেকেই বিষয়টির গুরুত্ব বোঝা যায়।
এইচআইভি এইডস প্রতিরোধের বিষয়ে দুজন মন্ত্রীই অনেক আন্তরিক। তাঁরা এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু পদক্ষেপ ও উদ্যোগের কথা বলেছেন।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে মনোযোগী হলে আমরা এইচআইভি নিরসনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করতে পারব। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।
যাঁরা অংশ নিলেন
হাসানুল হক ইনু : সাংসদ, মন্ত্রী, তথ্য মন্ত্রণালয়
মেহের আফরোজ চুমকি : সাংসদ, প্রতিমন্ত্রী, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়
নজরুল ইসলাম : ভাইরোলজিস্ট, সাবেক উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
বিটপী দাশ চৌধুরী : হেড অব করপোরেট অ্যাফেয়ার্স, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, বাংলাদেশ
আনিসুর রহমান : উপপরিচালক, জাতীয় এইডস, এসটিডি কর্মসূচি
হাবিবা আক্তার : নির্বাহী পরিচালক, আশার আলো সোসাইটি
ব্রাদার রোনাল্ড ড্রাহোজাল : নির্বাহী পরিচালক, আসক্তি পুনর্বাসন নিবাস, আপনগাঁও
শরফুল ইসলাম খান : বিজ্ঞানী, সেন্টার ফর এইচআইভি অ্যান্ড এইডস, আইসিডিডিআরবি, গ্লোবাল ফান্ড প্রজেক্ট
লিমা রহমান : চিফ অব পার্টি, সেভ দ্য চিলড্রেন
জাহাঙ্গীর হোসেইন : পরিচালক, স্বাস্থ্য, কেয়ার বাংলাদেশ
মো. আখতারুজ্জামান : পরামর্শক, জাতীয় এইডস, এসটিডি, কর্মসূচি
সায়মা খান : স্ট্র্যাটেজিক ইনফরমেশন অ্যাডভাইজার, ইউএনএইডস
মো. ফসিউল আহ্সান : কর্মসূচি পরিচালক, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি
সঞ্চালক
মতিউর রহমান : সম্পাদক, প্রথম আলো
আব্দুল কাইয়ুম : সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো
এই গোলটেবিল আলোচনায় আমন্ত্রিত অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্য সম্পূর্ণ তাদের নিজস্ব মতামত। আলোচনায় অংশগ্রহণকারীদের যেকোনো মতামতের জন্য স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক কোনো দায়দায়িত্ব বহন করে না।