এই অপেক্ষা মুক্তির

কাশিমপুর কারাগারের সামনে গণমাধ্যমকর্মীদের অপেক্ষা।
ছবি: প্রথম আলো

প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক কারাবন্দী রোজিনা ইসলামের মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদ ও আন্দোলন হয়েছে দেশজুড়ে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের করা মামলায় আজ রোববার সকালে জামিন পেয়েছেন রোজিনা ইসলাম। সাংবাদিক রোজিনা কারাগার থেকে মুক্ত হবেন, এমন প্রত্যাশায় সকাল থেকেই কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের ফটকের সামনে অবস্থান নিয়েছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা।

রোজিনা ইসলামের জামিনের আদেশকে বিজয় হিসেবে দেখছেন উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীরা। তাঁরা বলছেন, রোজিনা ইসলামের জামিন হয়েছে, সেটা আনন্দের, কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। তাঁকে হেনস্তাকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তাঁরা।

রোজিনা ইসলামের জামিন আবেদনের ওপর গত বৃহস্পতিবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ভার্চ্যুয়ালি শুনানি শেষ হয়। রাষ্ট্রপক্ষের তথ্য উপস্থাপন ও জামিন বিষয়ে আজ আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত। রোজিনা ইসলামের জামিন হবে এমন প্রত্যাশায় গত বৃহস্পতিবারও গণমাধ্যমকর্মীরা কারাগারের সামনে জড়ো হয়েছিলেন।

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের স্বজনেরা।
ছবি: প্রথম আলো

আজ সকাল থেকে গাজীপুরের স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা কারাগারের সামনে জড়ো হতে থাকেন। রোজিনা ইসলামের জামিন আদেশের পর ঢাকা থেকে বিভিন্ন টেলিভিশন, পত্রিকা ও অনলাইন সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিকেরাও কারাফটকে আসছেন।

চ্যানেল ২৪-এর সিনিয়র রিপোর্টার শফিকুল ইসলাম সবুজ প্রথম আলোকে বলেন, সন্তুষ্টি এতটুকুই যে আদালত শেষ পর্যন্ত হেনস্তার শিকার হওয়া একজন সাংবাদিককে জামিন দিয়েছেন, যিনি জনগণের স্বার্থে লকডাউনের মধ্যেও মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলেন স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম–দুর্নীতির সন্ধান করতে। রোজিনা ইসলামের পক্ষে দেশে-বিদেশে নানা মহলে ঝড় ওঠাতেই তিনি জামিন পেয়েছেন।

কাশিমপুর কারাগারের সামনে অপেক্ষা।
ছবি: প্রথম আলো

সময় টেলিভিশনের গাজীপুর প্রতিনিধি রাজীবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, রোজিনা ইসলামের মতো অনুসন্ধানী সাংবাদিকের জন্য কারাগারের সামনে দাঁড়াতে হচ্ছে, এটি লজ্জাজনক। তাঁর জামিন হয়েছে, সেটা সাময়িক স্বস্তির। রোজিনা ইসলামের মামলা প্রত্যাহার ও তাঁকে হেনস্তাকারীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত মাঠে থাকবেন সাংবাদিকেরা।

তীব্র গরম ও প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করেও কারাবন্দী রোজিনা ইসলামের মুক্তির জন্য অপেক্ষা করছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমের সহকর্মীরা। রোজিনা ইসলামের পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে দুটি মাইক্রোবাস কারাগারের ভেতরে গেছে। কারাগারের সামনে প্রথম আলোর সহকর্মীরাও আসছেন। জামিনের নথি কারাগারে পৌঁছানোর পর সব প্রক্রিয়া শেষ হলে মুক্তি মিলবে রোজিনা ইসলামের।

রোজিনা ইসলাম গত সোমবার দুপুরে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তাঁকে একটি কক্ষে আটকে রাখেন। প্রায় ছয় ঘণ্টা পর রোজিনাকে শাহবাগ থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও দণ্ডবিধিতে মামলা করা হয়।

পুলিশ রোজিনা ইসলামকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গত মঙ্গলবার আদালতে হাজির করে। একই সঙ্গে রোজিনাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে পুলিশ। অন্যদিকে রোজিনা ইসলামের জামিনের আবেদন জানান তাঁর আইনজীবীরা। ওই দিন শুনানি নিয়ে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম রিমান্ড আবেদন নাকচ করেন এবং রোজিনার জামিন আবেদনের ওপর অধিকতর শুনানির জন্য ২০ মে দিন ধার্য করেন। সেদিন আদালতের নির্দেশে রোজিনাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তি দাবিতে কয়েক দিন ধরেই প্রতিবাদ ও আন্দোলন চলেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও প্রতিবাদ হয়েছে।