একটি ঘরের গল্প
অনেক দিন প্রবাসে ছিলেন জাহেদা আজিজ। নব্বই দশকের শুরুর দিকে একদিন সিদ্ধান্ত নিলেন, এবার মাটির টানে ফেরা যাক। নীলক্ষেতের বাড়িতে প্রায় ১৭ বছর যে শৈশব তিনি কাটিয়েছেন, তার অনেক গল্প করতেন ছেলে টিমি আজিজের কাছে। টিমি নিজেও ওই বাড়িতে বছর দুই ছিলেন।
টিমির নানা ১৯৬৯ সালে ধানমন্ডিতে আরেকটি বাড়ি বানিয়েছিলেন। মা জাহেদা যখন দেশে থিতু হতে চাইলেন, টিমি ঠিক করলেন ধানমন্ডির নানাবাড়ি-লাগোয়া এমন এক বাড়ি বানাবেন, যেখানে মা ও ছেলে খুঁজে পাবেন তাঁদের শৈশবকে। ১৯৯১-এ স্বপ্নের সেই বাড়ি বানানো শুরু হলো, শেষ হলো ১৯৯৩-এ।
ধানমন্ডির সেই বাড়ি কীভাবে ‘ঘর’ হয়ে উঠল, তার পুরোটা জানতে হলে যেতে হবে ধানমন্ডির জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক বিদ্যাপীঠে। সেখানেই চলছে ‘বাড়ি ৯১/২, সময় ও স্মৃতি’ স্থাপত্য প্রদর্শনীটি। শুরু হয়েছে ১৬ মার্চ। চলবে ৮ এপ্রিল পর্যন্ত। প্রদর্শনীতে স্থপতি টিমি আজিজের বানানো সেই ঘরের নানা আলোকচিত্র, ডিজাইন, অনুলিপি ও গল্পগুলো পাওয়া যাবে। যৌথভাবে প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন স্থপতি সাইফ-উল-হক; বেঙ্গল ইনস্টিটিউট আর্কিটেকচার, ল্যান্ডস্কেপ অ্যান্ড সেটেলমেন্ট, বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের ভিজ্যুয়াল আর্টস প্রোগ্রাম ও স্থাপত্যবিষয়ক প্রকাশনা আড্ডা।
গত মঙ্গলবার প্রদর্শনীতে ঢুকতেই দেখা গেল সারি সারি চিঠির অনুলিপি। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক থেকে টিমি সেসব চিঠি পাঠিয়েছিলেন মা জাহেদাকে, তাঁর যুক্তরাজ্যের লন্ডনের বাড়িতে। সেসব চিঠিতে বাড়িটির ডিজাইনের নানা বর্ণনা। এ নিয়ে টিমি আজিজকে জিজ্ঞেস করতেই হেসে বললেন, এমন চার-পাঁচ রকমের ডিজাইন তিনি পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু প্লেনে করে প্রথম যখন বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দিলেন, তখন খেয়াল হলো, সেসব ডিজাইন তিনি বাড়িতেই ফেলে এসেছেন!
না, দমলেন না টিমি এতটুকুও। ডিজাইনের অনেকটা তো মাথাতেই ছিল। তিনতলা সেই বাড়িতে জাহেদা আজিজ ছিলেন গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত, আমৃত্যু।