একটি ব্র্যান্ডকে প্রাধান্য দিয়ে ১০০ কোটি টাকার দরপত্র

বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)
ফাইল ছবি

বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) তাদের একটি প্রকল্পের জন্য অনলাইনে দরপত্র আহ্বান করেছে। সেখানে পণ্যের বিবরণ বোঝাতে গিয়ে সরাসরি একটি ব্র্যান্ডের নাম তারা অন্তত ৩৩ বার উল্লেখ করেছে।

অভিযোগ উঠেছে, এতে প্রতিযোগিতার সুযোগ কমবে এবং অন্যদের অংশগ্রহণের সুযোগ সংকুচিত হবে।

ব্যানবেইস সরকারি খরচে ৩১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে চার বছর মেয়াদি ‘ইন্টিগ্রেটেড এডুকেশনাল ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (আইইআইএমএস)’ নামে একটি প্রকল্প করতে যাচ্ছে। প্রকল্পের অধীনে তারা দুই ধাপে তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনবে। এর মধ্যে রয়েছে হার্ডওয়্যার, সার্ভার কক্ষের জন্য সরঞ্জাম, রাউটার, ফায়ারওয়্যাল, কানেকটিভিটি সুইচ, র‌্যাক, ইউপিএস, এভিআর, ডিজেল জেনারেটর ইত্যাদি।

সরকারের ই-প্রকিউরমেন্ট ওয়েবসাইটে প্রথম ধাপে প্রায় ১০০ কোটি টাকার সরঞ্জাম কেনার জন্য গত ৬ ও ৭ এপ্রিল দুটি দরপত্র আহ্বান করা হয়। অংশ নেওয়ার শেষ সময় ১২ মে ও ১৬ মে।

ব্যানবেইস তাদের দরপত্র ও পণ্যের বিবরণে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক নেটওয়ার্কিং পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিসকোর নাম বারবার উল্লেখ করেছে। দরপত্রে লেখা হয়েছে, আন্তর্জাতিক নামী ব্র্যান্ড সিসকো বা তার সমতুল্য মানের পণ্য হতে হবে। সিসকো বাংলাদেশেও ব্যবসা করে।

ব্যানবেইসের এই দরপত্র কেউ চ্যালেঞ্জ করলে সেটা বাতিল হয়ে যাবে।
ফারুক হোসেন, সাবেক মহাপরিচালক, সিপিটিইউ

আইইআইএমএস প্রকল্প পরিচালক মো. শামছুল আলম দাবি করেন, আইন ও বিধি মেনেই দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সরকার ২০২১ সালের ১৩ জুন একটি পরিপত্র জারি করে। সেটি অনুযায়ী ‘এইরূপ বা সমতুল্য’ শব্দ উল্লেখ করে ব্র্যান্ডের নাম উল্লেখ করা যাবে। দরপত্রে সিসকোর মতো বলা হয়েছে, কিন্তু সিসকোই হতে হবে এমনটা বলা হয়নি।

পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬ বলা আছে, দরপত্রে প্রতিযোগিতা সীমিত করতে পারে, এমন কোনো শর্ত আরোপ করা যাবে না৷ একই আইনের বিধিমালায় বলা হয়েছে, কোনো পণ্যের ট্রেডমার্ক বা পণ্যের ব্যবসায়িক নাম সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা যাবে না।

সরকার গত বছর জুনে যে পরিপত্র জারি করে তাতে বলা হয়, দরপত্রদাতাদের কাছে সহজবোধ্য করতে কোনো সুনির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের পণ্যের বিবরণ উল্লেখ করা যাবে। তবে সেখানে ‘একইরূপ বা সমতুল্য’ শব্দ যোগ করতে হবে। কিন্তু কোনোভাবেই বিশেষ ব্র্যান্ড বা উৎসের প্রতি আনুকূল্য প্রদর্শনের জন্য উল্লেখ করা যাবে না। পরিপত্রে এটাও উল্লেখ ছিল যে দরপত্র আহ্বানের ক্ষেত্রে কোনো কোনো ক্রয়কারী পণ্যের ব্র্যান্ড নাম, মডেল, নির্দিষ্ট দেশ বা অঞ্চলের নাম উল্লেখ করছে, যা বিধান পরিপন্থী।

সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত কারিগরি মূল্যায়ন সংস্থার (সিপিটিইউ) সাবেক মহাপরিচালক ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ব্যানবেইসের এই দরপত্র কেউ চ্যালঞ্জ করলে সেটা বাতিল হয়ে যাবে। যদি কোনো পণ্যের সুনির্দিষ্ট বিবরণ তৈরি করা না যায় তখন কোনো ব্র্যান্ডকে অনুসরণ করে তার বিবরণ উল্লেখ করা যেতে পারে। তবে এমনভাবে উল্লেখ করতে হবে যাতে একই মানের অন্যরাও প্রতিযোগিতা করতে পারে।

ব্যানবেইস যেভাবে নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের নাম উল্লেখ করেছে, তাতে তারা মূল্যায়ন কীভাবে করবে, সেই প্রশ্ন তোলেন ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, ব্যানবেইসকে তো এখন সিসকোকে সামনে রেখে মূল্যায়ন করতে হবে, যেটা করা যাবে না।

সূত্র জানিয়েছে, দরপত্র দুটিতে অংশ নিতে আগ্রহ দেখিয়েছে সাতটি প্রতিষ্ঠান। প্রাক্‌-দরপত্র বৈঠকে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান একটি নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডকে প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়গুলো বাতিল করার অনুরোধ জানিয়েছিল। তবে তা রাখা হয়নি।

একটি প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে বলেন, এভাবে একটি কোম্পানির উৎপাদিত পণ্যকে প্রাধান্য দেওয়ায় প্রতিযোগিতা থাকবে না। সরঞ্জাম কিনতে হবে বেশি দামে, যা জনগণের অর্থের অপচয়।