একদিন ইউরোপের লিগে খেলতে চাই

সাবিনা খাতুন

র‌্যাঙ্কিংয়ে ৬১ ধাপ এগিয়ে থাকা মালয়েশিয়াকে ২৩ জুন ৬-০ গোলে উড়িয়ে আলোচনায় বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। ২৬ জুন শেষ ম্যাচে গোলশূন্য ড্রয়ে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ফিফা প্রীতি সিরিজে চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। এই দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, দেশের মেয়েদের ফুটবলে অনেক প্রথমের সঙ্গে জড়িয়ে যাঁর নাম। ২০১০ সাল থেকে একটানা খেলছেন জাতীয় দলে। দেশের ফুটবলে মেয়েদের আইকন হয়ে ওঠা সাবিনা খাতুনের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বদিউজ্জামান

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: ক্যাম্প থেকে ছুটি পেয়েই বাড়ি চলে গেছেন। কেমন কাটছে?

সাবিনা খাতুন: এমন একটা জয়ের পর বাড়িতে এসে ঈদের আনন্দ যেন বেড়ে গেছে।

প্রশ্ন :

মালয়েশিয়ার মতো বড় দলের বিপক্ষে জয়। এরপর সিরিজ জিতে হলেন চ্যাম্পিয়ন। এলাকায় যাওয়ার পর কেমন সাড়া পেয়েছেন?

সাবিনা: প্রচুর। বিশেষ করে ফেসবুকে মানুষের মন্তব্য দেখে খুব ভালো লেগেছে। মালয়েশিয়ার সঙ্গে দুই ম্যাচ খেলার পর মেয়েদের ফুটবলের প্রতি দর্শকদের যে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা দেখলাম, এটা অনেক ভালো লেগেছে।

প্রশ্ন :

বাংলাদেশের মেয়েদের ফুটবল কোন অবস্থায় আছে?

সাবিনা: মেয়েদের ফুটবল দিন দিন উন্নতি করছে। মেয়েরা গোছানো ফুটবল খেলছে। আমরা মাঠে দাপটের সঙ্গে ফুটবল খেলতে পারছি। এর চেয়ে বড় কিছু হতে পারে না।

প্রশ্ন :

ছেলেদের ফুটবলে তেমন সাফল্য নেই, কিন্তু মেয়েরা মুখ উজ্জ্বল করছে। ব্যাপারটা কেমন লাগে?

সাবিনা: ছেলেদের ফুটবল নিয়ে কিছু বলব না। তবে ফুটবল ফেডারেশন ও দেশের মানুষ মেয়েদের কাছে যা চায়, হয়তো আমরা তা আস্তে আস্তে পূরণ করতে পারছি। মানুষ চায় ভালো খেলা দেখতে। দিন শেষে আমরা ভালো কিছু করতে পারলে এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু হয় না।

প্রশ্ন :

সুযোগ-সুবিধায় ছেলেদের ফুটবলের চেয়ে পিছিয়ে মেয়েরা। এটা কখনো কষ্ট দেয়?

সাবিনা: মেয়েদের ফুটবলে বরাবরই একটা বৈষম্য থাকে। যদি আরও সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়, তাহলে মেয়েরা ফুটবলে বেশি আগ্রহী হবে। যেহেতু অনেক মেয়ে এখন ফুটবলকে পেশা হিসেবে নিচ্ছে, এটা একটা বড় প্ল্যাটফর্ম আমাদের জন্য।

প্রশ্ন :

আপনি ফুটবলে এলেন কীভাবে?

সাবিনা: সাতক্ষীরার নবারুণ হাইস্কুলে পড়ি তখন। বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশ নিতাম। ওই সময় জেলা ফুটবল দলের কোচ আকবর আলী স্যার আমার রানিং স্টাইল দেখে ভীষণ পছন্দ করলেন। এরপর ঢাকার বাইরে খেলানোর জন্য অনুমতি নিতে বাড়িতে গেলেন।

প্রশ্ন :

তারপর?

সাবিনা: বাবা চাইতেন না আমি ফুটবল খেলি। কিন্তু আমার বড় বোন সালমা খাতুন বাবাকে বোঝান। আসলে আমার এই পর্যায়ে আসার পেছনে বড় অবদান আকবর আলী স্যারের। গত মাসে স্যার মারা গেছেন। যেখানেই থাকুন না কেন, ওনার কথা মনে রাখতেই হবে। স্যারের পরিশ্রম, আমার পরিশ্রম সবকিছু মিলিয়ে এই জায়গায় এসেছি। বাবাও এখন অনেক খুশি।

প্রশ্ন :

বলা হয় মেয়েদের ফুটবলে সাবিনা একজন আইকন। এটা শুনতে কেমন লাগে?

সাবিনা: আমি জানি, অনেকে বলে আমি সাবিনার মতো হতে চাই। ঢাকার বাইরে কোথাও গেলে সবাই ছবি তুলতে চায়।

প্রশ্ন :

ফুটবলার হিসেবে সব স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছেন?

সাবিনা: ভারত, মালদ্বীপে ফুটবল লিগে খেলেছি। ইচ্ছা আছে ইউরোপের লিগে খেলার।

প্রশ্ন :

যে মেয়েরা ফুটবল খেলে, তাদের জন্য কিছু বলার আছে?

সাবিনা: অনেক মেয়েই এখন ফুটবল খেলতে চায়। অনেক মা-বাবা চায় মেয়েরা ফুটবল খেলুক। কারণ, ফুটবলে ভালো ভবিষ্যৎ আছে।

প্রশ্ন :

ড্রেসিংরুমে অধিনায়ক সাবিনার ভূমিকা কেমন?

সাবিনা: মারিয়া, কৃষ্ণাদের সঙ্গে বরাবরই বোঝাপড়া ভালো। বিশেষ করে কোনো ম্যাচের আগে ব্যক্তিগতভাবে ওদের সঙ্গে আলোচনা করি। বলি আমার কোনো সমস্যা আছে কি না, তোমরা সেটা খুঁজে দেখো।

প্রশ্ন :

প্রথম আলো: অধিনায়ক হিসেবে কী স্বপ্ন দেখেন?

সাবিনা: আমরা কখনো সাফ জিতিনি। আমার অধিনায়কত্বে সাফ জিততে চাই।