এক দশকেও তদন্ত শেষ হলো না

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাড়িতে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির লাশ পাওয়া যায়।

মেহেরুন রুনি ও সাগর সরওয়ার।
ফাইল ছবি

মাস-বছর পেরিয়ে কেটে গেছে এক দশক। কী কারণে, কারা সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিকে হত্যা করেছে, তা আজও জানা যায়নি। প্রতি মাসে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদালতের কাছে র‍্যাবের সময় চাওয়া ছাড়া আরেকটি তথ্যের কথা বলছে র‍্যাব। তা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ল্যাবে ডিএনএ থেকে অজ্ঞাত দুই ব্যক্তির ছবি প্রস্তুতের কাজ চলছে। এর বাইরে আলোচিত এই হত্যা মামলার কোনো তদন্তই হচ্ছে না।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাড়িতে সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনির লাশ পাওয়া যায়। সাগর তখন মাছরাঙা টিভিতে আর রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের সময় বাসায় ছিল তাঁদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সরওয়ার মেঘ।

১৫ মাস আগে আদালতে মামলার তদন্ত অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করে র‍্যাব। ওই প্রতিবেদনে র‍্যাব জানায়, ঘটনাস্থল থেকে জব্দ আলামত যুক্তরাষ্ট্রে ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। ডিএনএ পরীক্ষায় দুজন অজ্ঞাতপরিচয় পুরুষের ডিএনএ পাওয়া গেছে। সেই ডিএনএ থেকে খুনে জড়িত ব্যক্তির ছবি প্রস্তুতের চেষ্টা চলছে।

র‍্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল কে এম আজাদ গতকাল বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, সব তদন্ত দ্রুত শেষ হয় না। অনেক জটিল ঘটনা থাকে যেগুলো তদন্ত সময়সাপেক্ষ। অনেক ঘটনা দীর্ঘদিন ধরে তদন্তাধীন রয়েছে। তিনি বলেন, র‍্যাব সাংবাদিক দম্পতির খুনের মামলাটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে।

এই মামলায় ১৬০ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে সন্দেহভাজন হিসেবে রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মো. সাইদ, মিন্টু ও কামরুল হাসান ওরফে অরুণকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা বাসার গ্রিল কেটে চুরির ঘটনায় করা বিভিন্ন মামলার আসামি ছিলেন। গ্রেপ্তার হওয়া বাকি আসামিদের মধ্যে ছিলেন সাগর-রুনির ভাড়া বাসার নিরাপত্তাপ্রহরী এনামুল ও পলাশ রুদ্র পাল এবং রুনির বন্ধু তানভীর রহমান। বর্তমানে জামিনে আছেন তানভীর ও এনামুল। বাকিরা কারাগারে।

সাগর-রুনি হত্যার আগের রাতে রুনির সঙ্গে মুঠোফোনে কয়েক সেকেন্ড কথা হয়েছিল তানভীরের। ওই কথার সূত্র ধরে তানভীরকে দফায় দফায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন ডিবি ও র‍্যাবের কর্মকর্তারা।

গত বুধবার তানভীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনার পর আমিসহ তানভীর নামের আরেকজনকে ডিবি জিজ্ঞাসাবাদ করে। আমাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এর কিছুদিন পর ওই তানভীর বিদেশে চলে যায়।’

তানভীর রহমান বলেন, ‘আমার ব্যবহৃত সমস্ত ডিজিটাল ডিভাইস ডিবি ও র‍্যাব ফরেনসিক করেছে। কিন্তু তারা আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা পায়নি।’

সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে। পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেছিলেন, তদন্তে প্রণিধানযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।

ওই হত্যাকাণ্ডের দুই বছর পর ২০১৪ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মহীউদ্দীন খান আলমগীর। সেই সময় তিনি হত্যার রহস্য উন্মোচনের সুনির্দিষ্ট তারিখও ঘোষণা করেছিলেন। সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে এই হত্যার রহস্য উন্মোচন হবে।’

মহীউদ্দীন খান আলমগীরের এই ঘোষণার পর ১০ অক্টোবর রুনির বন্ধু তানভীর রহমান ও বাসার দারোয়ান পলাশ রুদ্র পালকে গ্রেপ্তার দেখায় র‍্যাব। এভাবে তদন্ত সংশ্লিষ্টদের নানা আশ্বাসে ১০ বছর কেটে গেছে। তারপরও এই চাঞ্চল্যকর হত্যার রহস্য উদ্‌ঘাটন হয়নি। তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৮৫ বার আদালত থেকে সময় নেওয়া হয়েছে।

সাংবাদিক দম্পতির নিহতের ঘটনায় রুনির ভাই নওশের আলম শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা করেন। থানা-পুলিশের বাইরে মামলাটি ছায়া তদন্ত শুরু করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও র‍্যাব। চার দিনের মাথায় এই হত্যা মামলা ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়। এর দুই মাস পর উচ্চ আদালতের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল মামলাটি র‌্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মামলার বাদী নওশের আলম বলেন, ‘তদন্ত সংস্থার সদিচ্ছা নেই, বিচার চেয়ে চেয়ে আমরাই এখন লজ্জিত। তাই আর বিচার চাই না।’