একনজরে সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে গতকাল শনিবার রাত ১১টায়। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলের আশপাশের অন্তত চার বর্গকিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। আশপাশের বাড়িঘরের জানালার কাচ ভেঙে পড়ে। বিস্ফোরণের পর এখনো আগুন জ্বলছে। ফায়ার সার্ভিস আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে।

আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে
ছবি: প্রথম আলো

হতাহত

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৪১ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়ে অনেকে চলে গেছেন। ৭০ জন চিকিৎসাধীন। আর ৪ জন হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের আট কর্মী রয়েছেন বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর।

ছবি: প্রথম আলো

হাসপাতালে আহাজারি

ঘটনার পরপরই হতাহত ব্যক্তিদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা শুরু হয়। গত রাতে অ্যাম্বুলেন্স, গাড়ি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে আহত ব্যক্তিদের সেখানে আনা হচ্ছিল। এদিকে হাসপাতালে মানুষ আহত ব্যক্তিদের রক্ত দিতে ভিড় করছেন। সেখানে চিকিৎসক ও নার্সদের জড়ো করা হয়েছে। হাসপাতালে আহত ও নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা ভিড় করছেন। স্বজনদের খোঁজ করছেন। তাঁদের কান্না ও আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।

থেমে থেমে বিস্ফোরণ

বিএম কনটেইনার ডিপোতে গত রাতে আগুন লাগার পর সারা রাত থেমে থেমে বিস্ফোরণ হয়। আজ বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। বেলা ১টার দিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত প্রথম আলোর প্রতিবেদক জানান, আর শব্দ শোনা যাচ্ছে না। আগুন নেভানোর কাজ চলছিল। বিষাক্ত ধোয়ার কারণে আগুন লাগার মূল জায়গায় এখনো ফায়ার সার্ভিস ঢুকতে পারেনি।

সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে দিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি দল
ছবি: গাজী ফিরোজ

ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী

আইএসপিআর জানায়, উদ্ধার অভিযানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৫০ জন সদস্য কাজ করছেন। উদ্ধার অভিযান ও আগুন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সহায়তার জন্য সেনাবাহিনীর একটি বিশেষজ্ঞ দল কাজ করছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার ও নিরাপত্তা দলও নিয়োজিত রয়েছে। রাসায়নিক দ্রব্যাদির বিস্ফোরণের কারণে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত রাসায়নিক সামগ্রী সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়া রোধে এ দল কাজ করছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর মিলিটারি পুলিশও সহায়তা করছে। তা ছাড়া বিস্ফোরণে আহত ব্যক্তিদের সেনাবাহিনীর মেডিকেল টিম গতকাল রাত থেকে কাজ করছে। আহত ব্যক্তিদের চট্টগ্রাম মেডিকেল ও সিএমএইচে স্থানান্তরে সেনাবাহিনীর অ্যাম্বুলেন্স সহায়তা করছে । এ পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ১৪ জন সদস্যসহ চট্টগ্রাম সিএমএইচে ১৫ জন চিকিৎসাধীন।

বিপুল রাসায়নিক

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ‘হাইড্রোজেন পারক্সাইড’ নামের বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস ও ডিপোর কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

হাইড্রোজেন পারক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ। এটি যদি উত্তপ্ত করা হয়, তাহলে তাপীয় বিয়োজনে হাইড্রোজেন পারক্সাইড বিস্ফোরক হিসেবে আচরণ করে।

আগুন নেভানোর কাজে ফায়ার সার্ভিস
ছবি: প্রথম আলো র

কালো ধোঁয়া

বিস্ফোরণে পুরো এলাকায় কেমিক্যালের বিষাক্ত ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যসহ ঘটনাস্থলে আসা লোকজন চোখ খুলতে পারছেন না। বেশির ভাগ সদস্যের চোখ লাল হয়ে গেছে। কারও কারও চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তাঁদের।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের ৪টি উপজেলা, ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ২৩টি ইউনিটের ১৮৩ জন সদস্য কাজ করছেন।

বাসাবাড়ির টেলিভিশন-ফ্রিজ নষ্ট

বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। সেটা সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়িতে। এটি মূল শহরের বাইরে। তবে আশপাশে জনবসতি হয়েছে। বড় ভবন কম। নিম্ন আয়ের মানুষের বসবাস বেশি। অনেকের ঘরের জানালার কাচ, দরজা ভেঙে গেছে। বেশির ভাগ বাসার টেলিভিশন, রেফ্রিজারেটর ও বৈদ্যুতিক পাখা নষ্ট হয়ে গেছে।

ডিপোর আশপাশে টিনের ছাউনির ঘর বেশি। বেলা ১টা নাগাদ সেখানকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তাঁরা কালো ও বিষাক্ত ধোয়ার কারণে ঘরে টিকতে পারছেন না। অনেককেই মুখে কাপড় বেঁধে বসে থাকতে দেখা যায়।

আগুন নেভানোর কাজে ফায়ার সার্ভিস
ছবি: প্রথম আলো

মালিকপক্ষ ঘটনাস্থলে যায়নি

আজ দুপুর পৌনে ১২টা পর্যন্ত ডিপোর মালিক বা কোনো কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে আসেননি। মালিকপক্ষের কেউ না থাকায় কনটেইনার ডিপোতে কী ধরনের কেমিক্যাল রয়েছে, তা জানতে পারছে না ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল। ফায়ার সার্ভিস বলছে, এ কারণে তারা উদ্ধার তৎপরতায় বেকায়দায় পড়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, কনটেইনার ডিপোটির মালিকপক্ষের কাউকে এখনো পাওয়া যায়নি। এখানে কী ধরনের কেমিক্যাল আছে, তা বলা যাচ্ছে না। পানি দিয়ে সব কেমিক্যালের আগুন নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এ কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে সময় লাগছে।

মরদেহ নেওয়া হচ্ছে
ছবি: প্রথম আলো

ঢাকার বার্ন ইনস্টিটিউটে রোগী

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনায় রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে তিনজন ভর্তি আছেন; আরও দুজনকে আনা হচ্ছে।

আজ ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক সামন্ত লাল সেন সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় তাঁরা সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। কাল সোমবার সকালে তাঁর নেতৃত্বে একটি দল চট্টগ্রাম যাবে। তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রামে আপাতত কোনো লজিস্টিক সাপোর্ট প্রয়োজন হচ্ছে না। তবে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট তাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে।

প্রধানমন্ত্রীর শোক

বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডে হতাহত হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন
প্রধানমন্ত্রী আজ এক শোকবার্তায় নিহত ব্যক্তিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। তিনি আহত ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য নির্দেশনা দেন।

প্রধানমন্ত্রী দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে এনে উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদানে সরকারের পাশাপাশি দলীয় নেতা–কর্মীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

তদন্ত চান সংসদ সদস্য

সীতাকুণ্ডের সংসদ সদস্য দিদারুল আলম বলেছেন, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কীভাবে রাসায়নিক ডিপো করা হয়েছে, তা তদন্ত করা উচিত

আজ রোববার দুপুরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শন করতে গিয়ে দিদারুল আলম এসব কথা বলেন।

বিএম কনটেইনার ডিপোর ট্রাকচালক মো. শাহাজাহানের অপেক্ষায় তাঁর স্ত্রী–সন্তানেরা
ছবি: প্রথম আলো

এত বড় দুর্ঘটনা আর ঘটেনি

আমদানি-রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ২৪ বছর আগে চট্টগ্রামে কনটেইনার ডিপো শিল্পের যাত্রা শুরু হয়। চট্টগ্রামে এ শিল্পের যাত্রা শুরুর পর এই প্রথম কোনো কনটেইনার ডিপোতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটল

বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান নুরুল কাইয়ূম খান আজ প্রথম আলোকে বলেন, এই শিল্পের যাত্রা শুরুর ২৪ বছরে এত বড় দুর্ঘটনা আগে ঘটেনি। এর আগে ডিপোতে ছোটখাটো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু সেসব ক্ষেত্রে খুব দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছিল।

বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪৯

বিস্ফোরণে লাগা আগুন প্রায় ২০ ঘণ্টায়ও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৯ জনে। আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি দল।

আজ রোববার বিকেল ৫টার দিকে ঘটনাস্থলে দেখা যায়, আগুন লাগা কনটেইনারগুলোয় ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ওপর থেকে যন্ত্রের সাহায্যে পানি ছিটাচ্ছেন। কিছু কিছু জায়গায় জ্বলছে আগুন। আর কিছু জায়গায় উঠছে ধোঁয়া।

গতকাল শনিবার রাত ৯টার দিকে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি এলাকায় বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করার সময় রাসায়নিক থাকা একটি কনটেইনারে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে দুই শতাধিক মানুষ আহত হন।

আগুন, উত্তাপ ও ধোঁয়া ছড়িয়েছে আড়াই বর্গকিলোমিটারজুড়ে

বিস্ফোরণের পর কনটেইনার ডিপো

বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আগুন, উত্তাপ ও ধোঁয়া প্রত্যক্ষভাবে ছড়িয়েছে আড়াই বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে। আর এর দূরবর্তী প্রভাব পড়েছে ১০ বর্গকিলোমিটার এলাকায়।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আর্থ জুমের স্যাটেলাইট ইমেজ বা ছবি বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য প্রথম আলোকে জানিয়েছেন স্কটল্যান্ডের ডান্ডি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নন্দন মুখার্জি।

নন্দন মুখার্জি প্রথম আলোকে জানান, আজ রোববার বেলা তিনটায় সীতাকুণ্ডের ওই ডিপো এলাকার ওপর দিয়ে বাতাস ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার বেগে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে যায়। ফলে আগুন, কালো ধোঁয়া ও উত্তাপের প্রভাব কুমিরা, বাড়বকুণ্ড ও সীতাকুণ্ড শহরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

ডিপো পরিদর্শন শেষে যা বললেন বন্দর চেয়ারম্যান

সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপো পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান। আজ রোববার তিনি ডিপো পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে ডিপোতে বিস্ফোরণ-অগ্নিকাণ্ডের সম্ভাব্য কারণসহ সর্বশেষ পরিস্থিতি প্রথম আলোর কাছে তুলে ধরেন।

আজ সকাল নয়টার দিকে বন্দর চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি দল দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসে। বেলা ১১টা পর্যন্ত তারা ডিপো পরিদর্শন করে। এ সময় ডিপোতে আগুন জ্বলছিল।

ডিপোতে এখনো অক্ষত থাকা হাইড্রোজেন পারক্সাইডসহ রাসায়নিক পণ্যভর্তি কয়েকটি কনটেইনার সরিয়ে নিতে নির্দেশনা দেন বন্দর চেয়ারম্যান। মালিকপক্ষ ও কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তাদের এই নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এম শাহজাহানের মতে, অক্ষত কনটেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।

বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, ডিপোতে হাইড্রোজেন পারক্সাইডবাহী ২৬টি কনটেইনার ছিল। ডিপোর টিনশেডেও প্লাস্টিকের জারে এই রাসায়নিক ছিল। আগুন লাগার পর কনটেইনারে থাকা রাসায়নিকভর্তি জার ফেটে যায়। এতে হাইড্রোজেন পারক্সাইড বের হয়ে কনটেইনারের সংস্পর্শে আসে। অক্সিজেন নির্গত হয়ে পানি ও আগুনের সংস্পর্শে কনটেইনারের ভেতরে তাপমাত্রা বেড়ে বিস্ফোরণ ঘটে। কনটেইনার ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে স্প্রিন্টারের মতো তা ছড়িয়ে পড়ে।

নিহত প্রত্যেক শ্রমিকের পরিবার পাবে ২ লাখ টাকা

বিস্ফোরণে নিহত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারকে দুই লাখ টাকা সহায়তা দেবে সরকার। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে।

আজ রোববার শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এ ঘোষণা দেন। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন তহবিল থেকে এই আর্থিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসায় আরও সহায়তার প্রয়োজন হলে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

আগুন লাগার পরও বন্ধ ছিল পকেট গেট

সীতাকুণ্ডে ডিপোতে বিস্ফোরণের আগে আগুন লাগার সময়ও ডিপোর পকেট গেট বন্ধ ছিল বলে জানিয়েছেন বেঁচে ফেরা কয়েকজন শ্রমিক। তাঁদের অভিযোগ, ডিপোর দক্ষিণ পাশের পকেট গেটটি তালাবদ্ধ অবস্থায় রেখে পালিয়ে যান নিরাপত্তাকর্মী।

তাঁরা বলেন, ডিপোতে আগুন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বরত শ্রমিকেরা ডিপোর দক্ষিণ পাশের পকেট গেট দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাইরে তালা লাগিয়ে গেটের দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মী পালিয়ে যাওয়ায় আর কোনো শ্রমিক ভেতর থেকে বের হতে পারেননি।

ডিপোর ভেতরে আটকে পড়া শ্রমিকেরা বলেন, বিএম কনটেইনার ডিপোতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অংশে মূল গেট। ডিপোর দক্ষিণ পাশের মাঝামাঝিতে নিরাপত্তা দেয়ালের সঙ্গে আছে ছোট একটি পকেট গেট। এই গেট দিয়ে ডিপোতে কর্মরত কর্মকর্তা ও শ্রমিকেরা খাবার খেতে এবং আবাসিক ভবনে যাতায়াত করেন। এ গেট খোলা রাখার সময় সকাল ৭-৯টা, বেলা ১টা থেকে আড়াইটা ও সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত।

পাঁচজনের লাশ শনাক্ত, সাতজনকে খুঁজছে ফায়ার সার্ভিস

আগুন লাগার ঘটনা শোনার পর দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়েছিল ফায়ার সার্ভিসের সীতাকুণ্ড ও কুমিরা ইউনিটের দুটি দল। তাঁদের কেউ আগুন নেভাতে কনটেইনারে পানি দিচ্ছিলেন, আবার কেউ সঞ্চালন লাইন ঠিক করছিলেন। এমন সময় বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয় রাসায়নিক থাকা কনটেইনারগুলো। এতে হতাহত হয়েছেন বহু মানুষ।

এখন পর্যন্ত ৪৯ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। আহত হয়েছেন দেড় শতাধিক মানুষ।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ কর্মীর লাশ শনাক্ত হয়েছে। তবে এখনো সাতজনের বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। নিহত ও নিখোঁজ ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের মধ্যে এই বাহিনীর দুজন টিম লিডার রয়েছেন।

প্রাণ হারালেন ফায়ার সার্ভিসের যেসব কর্মী

ফায়ার সার্ভিস বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগার খবর পায় শনিবার রাত ৯টা ২৫ মিনিটে। আগুন নেভাতে নিকটস্থ কুমিরা ফায়ার স্টেশন ও সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশন থেকে দুটি দল দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। ওই দুটি দলের ২৬ সদস্যের সবাই হতাহত হয়েছেন। তাঁদের ৯ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। তাঁদের একটি লাশ শনাক্ত করা যায়নি। ৩ জন নিখোঁজ। বাকি ১৪ জন দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

কুমিরা ফায়ার স্টেশন থেকে ১৫ জনের যে দলটি ঘটনাস্থলে যায়, তাঁদের মধ্যে ৫ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন মো. রানা মিয়া (বাড়ি-মানিকগঞ্জ), মনিরুজ্জামান (কুমিল্লা), আলাউদ্দিন (নোয়াখালী) এবং মো. শাকিল তরফদার ও মিঠু দেওয়ান (রাঙামাটি)। মো. ইমরান হোসেন মজুমদার (চাঁদপুর) ও শফিউল ইসলাম (সিরাজগঞ্জ) নামের দুই কর্মী নিখোঁজ। আটজন আহত হন।

সীতাকুণ্ড ফায়ার স্টেশন থেকে যাওয়া দলটিতে ছিলেন ১১ জন। তাঁদের মধ্যে ৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন নিপন চাকমা (রাঙামাটি), রমজানুল ইসলাম (শেরপুর) ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (ফেনী)। মো. রবিউল ইসলাম (নওগাঁ) ও ফরিদুজ্জামান (রংপুর) নিখোঁজ। ছয়জন দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।