এক মাসে রোগী বেড়েছে ২০৭ শতাংশ

করোনাভাইরাস
প্রতীকী ছবি

এক মাসের ব্যবধানে খুলনা বিভাগে চিকিৎসাধীন করোনা রোগী বেড়েছে ৩ হাজার ৯৬৭ জন। চিকিৎসাধীন রোগী বাড়ার হার ২০৭ শতাংশ। আবার হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। গত এক মাসে ১ হাজার ৩৯ জন করোনা রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর আগের এক মাসে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫৪০ জন।

করোনা রোগীদের চিকিৎসায় যুক্ত চিকিৎসক ও কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার চলমান ঢেউয়ে দৈনিক শনাক্ত বেশি হচ্ছে। সুস্থ হওয়া রোগীর চেয়ে শনাক্ত দুই থেকে পাঁচ গুণ বেশি হওয়ায় সক্রিয় রোগী বাড়ছে। চিকিৎসাধীন রোগী বাড়তে থাকায় হাসপাতালের শয্যাসংকট দেখা দিচ্ছে।

বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, খুলনা বিভাগে গত বছরের ১৯ মার্চ প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। শনাক্তের প্রথম দুই মাসে সংক্রমণের গতি ধীর ছিল। গত বছরের জুনে সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে থাকে। জুলাই মাসে দুটিই অনেক বেড়ে যায়। আগস্টে সংক্রমণ বাড়লেও মৃত্যু কিছুটা কমে। সেপ্টেম্বর থেকে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমতে থাকে। এরপর থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্তও পরিস্থিতি উন্নতির দিকে ছিল। এপ্রিলের শুরু থেকে করোনাভাইরাসে সংক্রমণ বাড়ছে। চলতি জুন মাসে শনাক্তের রেকর্ড কয়েক দফায় ভেঙে তা শুধু ঊর্ধ্বমুখীই হচ্ছে।

চিকিৎসকেরা বলছেন, আগের মাসেও যেখানে প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ২৫ জন হাসপাতালে এসে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছিলেন। সেখানে এখন প্রতিদিন গড়ে ৫০ বা তার বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। বর্তমানে অধিকাংশ রোগীই তীব্র উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।

করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মোট শনাক্ত রোগীর চেয়ে সুস্থ হওয়া ও মারা যাওয়া ব্যক্তিদের বাদ দিলে বিভাগে ১৩ জুন চিকিৎসাধীন রোগী ছিলেন ৫ হাজার ৮৮৩ জন। ঠিক এক মাস আগে, মে মাসের ১৩ তারিখে চিকিৎসাধীন রোগী ছিলেন ১ হাজার ৯১৬ জন। চিকিৎসাধীন রোগী বাড়ার হার ২০৭ শতাংশ।

বিভাগের ১০ জেলায় এ পর্যন্ত করোনায় মোট সংক্রমিত হয়েছেন ৩৯ হাজার ৬১৪ জন। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৩৩ হাজার ১২ জন। মারা গেছেন ৭১৯ জন। হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫ হাজার ৬০ জন। অর্থাৎ, প্রায় ১৩ শতাংশ রোগী হাসপাতালে থেকে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। অন্যরা বাসায় ছিলেন।

গত এক মাসে (১৩ মে–১৩ জুন) সময়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ হাজার ৩৯ জন। শেষ ১৫ দিনে হাসপাতালে সেবা নিয়েছেন ৬৮২ জন। ঠিক এক মাস আগেও এই চিত্র ভিন্ন ছিল। আগের এক মাসে (১৩ এপ্রিল-১৩ মে) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫৪০ জন। এক মাসের ব্যবধানে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ৯২ শতাংশ।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যমতে, খুলনা বিভাগে করোনার রোগীদের জন্য ১০টি জেলায় সরকারি ব্যবস্থাপনার ৯৪১টি শয্যা রয়েছে। এর বাইরে প্রতিটি উপজেলায় করোনা রোগীদের জন্য ৫টি করে শয্যা রয়েছে। বিভাগে মোট ৪০টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে। ১৩ জুন বিভাগের হাসপাতালগুলোতে ৩৭৩ জন করোনা রোগী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে তিন জেলার হাসপাতালে আইসিইউতে ছিলেন ১৯ জন। তবে এসব হিসেবের বাইরেও উপসর্গ নিয়ে কিছু রোগী হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।

বিভাগের একমাত্র করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল খুলনার ১০০ শয্যার করোনা হাসপাতাল। রোববার সকাল আটটা পর্যন্ত ওই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ১৪৩ জন। এর মধ্যে করোনা রোগী ছিলেন ১১৩ জন। অন্য ৩০ জন উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছেন। হাসপাতালের আইসিইউতে ১৩ জন ও এইচডিইউতে ৩৪ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক বিধান চন্দ্র ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। ইতিমধ্যে করোনা ইউনিটে বিদ্যমান ১০০ শয্যার সঙ্গে সেখানেই কিছু শয্যা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া হাসপাতালের সাবেক গ্যাস্ট্রোঅ্যান্টোলজি বিভাগে নতুন করে শয্যা দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে করোনার জন্য হাসপাতালটি ১৫০ শয্যার হবে। এরই মধ্যে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের মাধ্যমে এখানে আরও ১০ জন চিকিৎসক এবং ৪০ জন নার্সকে ডেপুটেশনে নিযুক্তি দেওয়ার অর্ডার হয়েছে। খুব শিগগিরই সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।