এক মাস ধরে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে অধ্যাপক সিরাজুল

সিরাজুল হক
সিরাজুল হক

রাজশাহী থেকে ঢাকায় গিয়েছিলেন বাংলা একাডেমির বার্ষিক সাধারণ সভায় যোগ দিতে। ওই সভা ছাড়াও অপর একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন। এরপরই হঠাৎ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। হাসপাতালে অস্ত্রোপচার শেষে নেওয়া হয় নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ)। এরপর এক মাস কেটে গেছে। এখনো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে আছেন অধ্যাপক খোন্দকার সিরাজুল হক।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক সভাপতি খোন্দকার সিরাজুল হক (৭৬)। গবেষণায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১২ সালে পান বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার। এ ছাড়া গবেষণা ও সাহিত্যে অবদানস্বরূপ ‘সা’দত আলী আখন্দ সাহিত্য পুরস্কার’ পান ২০১১ সালে। ১৯৬৬ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগদান করা এই গবেষক ২০০৬ সাল থেকে অবসর জীবন যাপন করছেন।
অধ্যাপক সিরাজুল হকের বড় ছেলে জাহাঙ্গীর সিরাজ জানান, গত ২৬ ডিসেম্বর বাংলা একাডেমির বার্ষিক সাধারণ সভায় অংশ নিতে তাঁর বাবা ঢাকায় যান। ২৭ ডিসেম্বর বিকেলে সৈয়দ শামসুল হকের এক অনুষ্ঠান শেষে নিউ ইস্কাটনে এক স্বজনের বাসায় ওঠেন। সেখানে রাত সাড়ে আটটার দিকে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরের দিন মহাখালীর মেট্রোপলিটন হাসপাতালে জরুরি ভিত্তিতে তাঁর মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর জ্ঞান না ফেরায় ১২ জানুয়ারি তাঁকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেই থেকে ২০ নম্বর কেবিনে অচেতন অবস্থায় আছেন তিনি।
বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জাহাঙ্গীর সিরাজ বলেন, তাঁর বাবাকে এখনো লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়েছে। শরীরের বাঁ পাশ অবশ হয়ে গেছে। সচেতনতার মাত্রা ৬-৭ শতাংশ। এটা কখনো বাড়ছে, কখনো কমছে। ঠিকমতো ওষুধ আর যত্ন নিতে পারলে সচেতনতার মাত্রা ১১-১২ হতে পারে। তবে তাঁর জন্যও সময় লাগবে ছয় মাস থেকে এক বছর। বেশিও লাগতে পারে। আর সচেতনতার মাত্রা বেড়ে ১১-১২ হলে তাঁর বাবা হয়তো দেখতে পারবেন, চিনতে পারবেন। তবে আগের মতো স্বাভাবিকভাবে কাজকর্ম আর করতে পারবেন না।
জাহাঙ্গীর সিরাজ বলেন, এখন পর্যন্ত তাঁর বাবার চিকিৎসা খরচ হয়েছে প্রায় আট লাখ টাকা। প্রতিদিন খরচ হচ্ছে প্রায় সাত হাজার টাকা। অবসরে যাওয়ার পর থেকে চলেছেন পেনশনের টাকায়। রাজশাহী থেকে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা প্রায় ৫০ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন। অন্য কোথাও থেকে এখন পর্যন্ত সহযোগিতা পাননি। সরকার থেকে সাহায্যের জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি চিঠি দিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক অমৃতলাল বালা বলেন, ‘একজন লেখক ও গবেষক হিসেবে খোন্দকার সিরাজুল হকের খ্যাতি সারা দেশে। তাঁর দ্রুত সুস্থতার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীরা এগিয়ে আসবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।’