
প্রায় এক যুগ ধরে সংস্কার না হওয়ায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে রাজধানীর মৃধাবাড়ি থেকে শ্যামপুর পর্যন্ত জিয়া সরণি সড়ক। ঝুঁকি নিয়ে চলাচলের ফলে প্রায়ই উল্টে যায় ট্রাক, পিকআপের মতো যানবাহন। আর বাস, রিকশার মতো গণপরিবহন চলাচলের কোনো উপায় নেই বললেই চলে।
বছর দশেক আগে রাস্তাটির কাজ করা হয়। সেই সময় রাস্তাটির মৃধাবাড়ি থেকে সুলতানা কামাল পাঠাগার এলাকা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় পিচ ঢালাই দেওয়া হয়। এরপর দীর্ঘ এক যুগেও এই রাস্তার কোনো কাজ করা হয়নি। মাঝেমধ্যে রাস্তার বিভিন্ন অংশে বালু, ইটের টুকরা ফেলা হয়। তাতে কিছুদিনের জন্য চলাচলের উপযোগী হলেও পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরে আসে।
কদমতলী ও যাত্রাবাড়ী থানা এলাকায় প্রায় আট লাখ লোকের বসবাস। স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এর বড় একটি অংশ এ রাস্তাটি ব্যবহার করেন। তাঁরা বলছেন, রাস্তাটি ভালো থাকলে মৃধাবাড়ি থেকে শনির আখড়া হয়ে মিনিট দশেকের মধ্যেই শ্যামপুরে যাওয়া যেত। কিন্তু চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ায় এই রাস্তায় চলাচলকারীদের এখন রায়েরবাগ, জুরাইন কমিশনার রোড ও যাত্রাবাড়ী হয়ে চলাচল করতে হয়। তবে দূরত্ব অনেক কম বলে এখনো ঝুঁকি নিয়ে অনেক যানবাহন এই রাস্তাকে বাইপাস হিসেবে ব্যবহার করে। তবে বিপত্তি ঘটে প্রায়ই। রাস্তায় থাকা বড় গর্তের ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনায় শিকার হয় ট্রাক, পিকআপ ও অন্য যানবাহনকে।
ঢাকা-৫ আসনের সাংসদ হাবিবুর রহমান মোল্লা এ রাস্তাটির কাজ না হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে বলেন, বিভিন্ন সময়ে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা বিভাগে দৌড়ঝাঁপ করেও রাস্তাটির কাজ করানো যায়নি। তবে সম্প্রতি সংসদে বিষয়টি উপস্থাপন করলে যোগাযোগমন্ত্রী রাস্তাটি ১০০ দিনের মধ্যে মেরামতের আশ্বাস দিলেও তিনি আস্থা রাখতে পারছেন না।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শনির আখড়া সেতুর নিচ দিয়ে রাস্তাটির একটি অংশ মাতুয়াইলের দিকে গেছে, অন্য অংশটি গেছে শ্যামপুরের দিকে। চার কিলোমিটার আয়তনের রাস্তাটি সড়ক ও জনপথের। উভয় অংশের আয়তন প্রায় দুই কিলোমিটার করে। শ্যামপুরের দিকে রাস্তাটির ‘২৪ ফুট এলাকা’ পর্যন্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা ইত্যাদি চলাচল করতে পারে।
অন্যদিকে শনির আখড়া থেকে মাতুয়াইলের দিকের অংশে শনির আখড়া ব্রিজ থেকে রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী। বৃষ্টি হলে রাস্তায় হাঁটু পর্যন্ত কাদা জমে। তখন রাস্তার পাশের জিয়া সরণি খাল থেকে রাস্তার ওপরে পানি ওঠে, ফলে যানবাহন তো দূরের কথা জনসাধারণের হেঁটে চলারই উপায় থাকে না। সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) বলছে, শুধু রাস্তাটি মেরামত করলেই হবে না, পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জিয়া সরণি খালের সংস্কার করতে হবে। শুধু রাস্তা মেরামত করে সুফল পাওয়া যাবে না।
গোবিন্দপুর বাজার এলাকার ব্যবসায়ী আজিজুল হকের চালের দোকান। সাংবাদিক পরিচয় শুনে বললেন, ‘ভাই, এই রাস্তা নিয়া রিপোর্ট তো আর কম অয় নাই, পত্রিকা টেলিভিশন আসে, রিপোর্ট করে। পরে তো আর কিছু অয় না। রিপোর্ট কইরা লাভ অইব না।’
রাস্তাটির সংস্কার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানউদ্দিন আহমেদ বলেন, সড়ক ও জনপথের বাজেটের ঘাটতি রয়েছে। রাস্তা নির্মাণ ও মেরামতের ক্ষেত্রে জাতীয় সড়ক, মহাসড়ককে বেশি প্রাধান্য দিতে হয়, ফলে রাস্তাটি এত দিন মেরামত হয়নি। তবে চলতি অর্থবছরে ঢাকা অঞ্চলের জেলা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এই রাস্তাটিকেও রাখা হয়েছে। একনেকের অনুমোদন পেলে আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বর নাগাদ রাস্তাটির কাজ শুরু হতে পারে।
দ্রুত সংস্কার না হলে আন্দোলন: রাস্তাটি দ্রুত সংস্কার না হলে আগামী ৬ সেপ্টেম্বর শ্যামপুর-কদমতলী এলাকার জনগণকে নিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর অবস্থান ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে ‘ডিএনডি বাঁধের ভিতর উন্নয়ন বহুদলীয় সংগ্রাম পরিষদ’ নামের একটি সংগঠন। সংগঠনের আহ্বায়ক আলম খান বলেন, ‘রাস্তাটি মেরামতের জন্য আমরা বিভিন্ন স্থানে দৌড়ঝাঁপ করেছি, জনপ্রতিনিধিদের কাছে গিয়েছি। কোনো ফল আসেনি, এখন বাধ্য হয়ে এমন কর্মসূচি ডেকেছি।’