এখনো দর্শক ধরে রেখেছে বলাকা সিনেমা হল

শো শুরু হয়ে গেছে। একটু দেরিতে যাঁরা এসেছেন, তাড়াহুড়ো করে ঢুকছেন। বাইরে থেকেই কানে ভেসে আসছে সিনেমার সংলাপ। ‘বলাকা সিনেওয়ার্ল্ড’ এখনো দর্শক ধরে রেখেছে। তবে তাদেরই আরেকটি হল ‘বলাকা-২’ বন্ধ।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকার বলাকা সিনেওয়ার্ল্ডে গিয়ে দেখা যায়, হলের সামনে সিনেমার বড় বড় পোস্টার টাঙানো—কোনটা চলছে, আগামী দিনে কোনটা আসছে। শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে পৌষ মাসের পিরিতি।
বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী জোবায়দা জবা শিকারি সিনেমাটি দেখতে এসেছেন। সময় পেলেই এখানে আসেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকার মধ্যে এই হলেই সিনেমা দেখতে ভরসা পাই। নিরাপত্তাসহ সবকিছু মিলিয়ে এটাই ভালো।’ আরও বললেন, সিনেমা হলের পরিবেশও এখন আগের চেয়ে ভালো। হলে এসে সিনেমা দেখার অনুপ্রেরণাও পান।
বলাকা ভবনের ভেতরে প্রবেশ করে চারদিকের দেয়ালে একটু খেয়াল করলেই চোখে পড়বে পুরোনো দিনের নায়ক-নায়িকাদের ছবি। দোতলার দেয়াল দেশি-বিদেশি সিনেমার পোস্টার দিয়ে সাজানো। বলাকার বয়স ৬৫ বছর। হলের ব্যবস্থাপক সামছুল আরিফ ১৭ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে আছেন। তিনি বলেন, ‘আমরাই প্রথম ডিজিটাল টিউনিং সিস্টেম চালু করি। এতে দৃশ্যের চাহিদা অনুযায়ী দর্শক সাউন্ড উপভোগ করতে পারেন।’
বলাকা চালুর পরে ১৯৮৫ সালে বলাকা-২ চালু হয়। কিন্তু এক বছর ধরে সেটা বন্ধ। সামছুল বলেন, ওই হলটিতে দর্শক হতো না। তাই কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দিয়েছে। আবার চালু হবে কি না, তারও নিশ্চয়তা নেই। দেশে যদি সিনেমা হলের ব্যবসার আরও প্রসার ঘটে, ভালো সিনেমা বেশি হয়, তাহলে চালু হতে পারে।
২০০১ সালে বলাকাকে আধুনিকায়ন করে সাজানো হয়। এখনো প্রতিবছরই হলে আধুনিকায়ন ও সাজসজ্জার কাজ হয়। রোজার এক মাস হল বন্ধ থাকে। তখনই আধুনিকায়নের কাজ হয়। একেকটি সিনেমা এক সপ্তাহ ধরে চলে। তবে জনপ্রিয়তা পেলে আরও বেশি দিন চালানো হয়। নিচতলা ও দোতলায় দুটি ক্যানটিন আছে। সেখানে ফাস্ট ফুড পাওয়া যায়।
একসঙ্গে বেশ কয়েকটি সিনেমা মুক্তি পেলে, তখন সিনেমা বাছাই প্রসঙ্গে সামছুল বলেন, ‘আশপাশের এলাকায় শিক্ষার্থী বেশি। তাঁদের চাহিদার কথা চিন্তা করি। এ ছাড়া বলাকার কিছু রিজার্ভ দর্শক তো আছেই।’
দিনে চারটি শো চলে—সকাল ১০.১৫, দুপুর ১২.৩০, বিকেল ৩.৩০ ও সন্ধ্যা ৬.৩০। টিকিটের দাম এক্সিকিউটিভ প্লাস ২৫০ ও স্পেশাল প্লাস ১৫০ টাকা। তবে প্রতিদিন সকাল সোয়া ১০টার শোতে টিকিটের দাম অর্ধেক রাখা হয়। ১ হাজার ১১ জন দর্শকের বসার ব্যবস্থা আছে। পে পয়েন্ট ডটকম ডট বিডি নামের সাইট থেকে অনলাইনে টিকিট কাটা যায়। হলটিতে প্রতিদিন প্রায় ৭০০ দর্শক হয়।
বলাকার হাউস ম্যানেজার মো. আকতার বলেন, ‘ভালো ছবির সংখ্যা বাড়ছে। মানুষও হলে ফিরছে। বলাকার এখনো অনেক দর্শক।’ জানালেন, আসছে ঈদে তাঁরা ঈদের নতুন সিনেমা রক্ত দেখাবেন।
রাকিব আহমদে শিকারি দেখে হল থেকে বের হয়ে পোস্টারের সামনে বন্ধুদের নিয়ে সেলফি তুলছিলেন। বললেন, ‘সিনেমা ভালো লেগেছে। আমাদের মতো ছাত্রদের জন্য বলাকাই ভরসা।’