এটা যৌথ ব্যর্থতা, কমিটির ব্যর্থতা

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক
ফাইল ছবি

তীব্র বিতর্কের মুখে মরহুম মো. আমির হামজার নাম স্বাধীনতা পুরস্কারের তালিকা থেকে গত শুক্রবার বাদ দিয়েছে সরকার। এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘ভুল হতে পারে। আমরা ভুল সংশোধন করেছি। আমাদের আরও বেশি সতর্ক থাকা উচিত ছিল।’

আজ বুধবার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপনসংক্রান্ত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।

আমির হামজাকে যাঁরা স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য নির্বাচন করেছেন, তাঁদের কী শাস্তি হবে—এমন প্রশ্ন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীকে করেন সাংবাদিকেরা।

আরও পড়ুন

জবাবে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘দায়িত্ব তো দায়িত্বই। আমরা পার পেতে পারি না। দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা রয়েছে। ভুলত্রুটি হয়েছে। এটা যৌথ ব্যর্থতা, কমিটির ব্যর্থতা।’

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আরও বলেন, ‘তবে যাঁরা ভুল তথ্য দিয়েছেন, তাঁরাও এটার সঙ্গে জড়িত। তাঁরা আমাদের বিভ্রান্ত করেছেন। যাঁরা বিভ্রান্ত করেছেন, তাঁদের শাস্তি হবে। যেহেতু একটি কমিটি রয়েছে, সেহেতু কমিটিই বৈঠক করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।’

এ বছর সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মরহুম মো. আমির হামজার নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু সাহিত্যজগতে একেবারেই অপরিচিত ও খুনের মামলার আসামি মাগুরার আমির হামজাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে সমালোচনা শুরু হয়। এ প্রেক্ষাপটে গত শুক্রবার তাঁর নামটি বাদ দিয়ে স্বাধীনতা পুরস্কারের সংশোধিত তালিকা প্রকাশ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

সংশোধিত তালিকা অনুযায়ী, এবার আর সাহিত্যে কাউকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে না। এখন ৯জন বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে দেশের সর্বোচ্চ জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় এ পুরস্কার দেওয়া হবে। তাঁরা হলেন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী, শহীদ কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা (বীর বিক্রম), আবদুল জলিল, সিরাজ উদ্দীন আহমেদ, মরহুম মোহাম্মদ ছহিউদ্দিন বিশ্বাস ও মরহুম সিরাজুল হক, চিকিৎসাবিদ্যায় অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া ও অধ্যাপক মো. কামরুল ইসলাম এবং স্থাপত্যে প্রয়াত স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন। আর গবেষণা ও প্রশিক্ষণে স্বাধীনতা পুরস্কার পাচ্ছে বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট।

আরও পড়ুন

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আমির হামজা মাত্র দুটি বই লিখেছেন। এর মধ্যে ‘বাঘের থাবা’ ও ‘পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব তুমি’ বের হয় ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে।

আমির হামজা ছিলেন খুনের মামলার আসামি। মাগুরার শ্রীপুরের বরিশাট গ্রামে ১৯৭৮ সালে খুনের ওই ঘটনা ঘটে। ওই মামলায় আমির হামজাসহ ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। নিহত ব্যক্তির স্বজন ও দণ্ডিত অন্য আসামিরা এ তথ্য জানান। যদিও খুনের মামলার আসামি হওয়ার কথা স্বীকার করলেও সেই মামলায় আমির হামজার দণ্ড পাওয়ার কথা অস্বীকার করেন তাঁর বড় ছেলে মো. আলী মর্তুজা। ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি ৮৭ বছর বয়সে আমির হামজা মারা যান।

আরও পড়ুন

জানা গেছে, আমির হামজার মেজ ছেলে খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) মো. আছাদুজ্জামান সরকার নির্ধারিত ফরম পূরণ করে তাঁর বাবার জন্য এ পুরস্কারের আবেদন করেন। আর তাতে সুপারিশ করেন বাণিজ্যসচিব তপন কান্তি ঘোষ। তিনি জাতীয় পুরস্কার দেওয়ার জন্য ১৬ জন সচিবের সমন্বয়ে গড়া ‘প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটি’র সদস্য।

২০২০ সালে সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য ঘোষণা করা হয়েছিল খুলনা বিভাগীয় সাবেক উপ-ভূমি সংস্কার কমিশনার এস এম রইজ উদ্দিনের নাম। সাহিত্যজগতে পরিচয়হীন এই ব্যক্তিকে পুরস্কার দেওয়া নিয়েও বিতর্ক শুরু হলে তাঁর পুরস্কারও বাতিল করা হয়।