এতিমদের জন্য সরকারি বরাদ্দ কোথায় যায়?

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ঝালকাঠিতে বেসরকারি এতিমখানার নামে মাদ্রাসাগুলো সমাজসেবা অধিদপ্তরের সরকারি বরাদ্দের টাকা সঠিক খাতে ব্যয় করছে না। মা-বাবা থাকলেও অনেক মাদ্রাসা ছাত্রদের এতিম বলে চালিয়ে দিচ্ছে। আবার কিছু এতিমখানার অস্তিত্ব কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবে নেই।

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, তাদের তালিকা অনুযায়ী জেলায় ৫৪টি বেসরকারি এতিমখানা রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ৮টি, নলছিটি উপজেলায় ৮টি, রাজাপুর উপজেলায় ২০টি এবং কাঁঠালিয়া উপজেলায় ১৬টি। এর অধিকাংশই মাদ্রাসাভিত্তিক লিল্লাহ বোর্ডিং এতিমখানা। এতিমদের সংখ্যা ১ হাজার ২৮০। প্রতি মাসে তাদের ১ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়। আর এতিমখানাগুলোর অধিকাংশ মাদ্রাসাভিত্তিক। নানা অভিযোগে কাঁঠালিয়া উপজেলার দুটি ভুয়া এতিমখানার ৫ লাখ টাকার বার্ষিক বরাদ্দ বন্ধ করা হয়েছে।

রাজাপুরের আংগারিয়া গ্রামে নেছারিয়া হাফিজিয়া এতিমখানা ও মাদ্রাসায় ২০ জন এতিমের জন্য মাসিক বরাদ্দ ২০ হাজার টাকা। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, এতিমখানার সাইনবোর্ড টাঙানো ঘরটির মধ্যে কিছুই নেই। জানালা-দরজা ভাঙা। এতিম পাওয়া যায়নি। এতিমদের তালিকা দেখাতে পারেননি মাদ্রাসার হাফেজ শিক্ষক পরিচয় দেওয়া আল আমিন।

আল আমিন বলেন, তালিকা ও কাগজপত্র কমিটির সাধারণ সম্পাদকের কাছে। তাঁর সামনেই এতিম হিসেবে দেখানো এক ছাত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার বাবা ও মা জীবিত আছেন। অপর এক শিশু ছাত্রও তার মা–বাবা থাকার কথা জানিয়েছে।

এতিমখানার উপদেষ্টা কাজী আবদুল আজিজ বলেন, তাঁদের এখানে অনেক এতিম আছে। সরকারি বরাদ্দ টাকায় এদের কিছু হয় না। তবে তাঁরা প্রচুর ব্যক্তিগত সাহায্য পান। তাঁদের প্রতিষ্ঠান ভালো চলছে বলে দাবি করেন তিনি।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিবন্ধিত রাজাপুর সদরের আরেকটি এতিমখানার নাম সালেহিয়া এতিমখানা। এ মাদ্রাসায় ৭৩ জন এতিমের জন্য মাসিক বরাদ্দ ৭৩ হাজার টাকা। এতিমখানার সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, এখানে ৬৩ জন ছাত্র থাকে। তারা কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাহফিলের চাঁদা তুলতে গেছে। এতিমদের তালিকা দেখতে চাইলে তিনি বলেন, এক শিক্ষক তালা মেরে ঝালকাঠি গেছেন। তাই দেখানো সম্ভব নয়। এ সময় এতিমখানার তিন শিশুছাত্রের সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, তাদের সবার মা-বাবা আছেন।

রাজাপুরের পুঁটিয়াখালীর আদাখোলা ছালেহিয়া মুসলিম এতিমখানা ১০ জন ছাত্রের বিপরীতে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা পায়। এতিমখানায় গিয়ে দেখা যায়, কোনো ঘর নেই। মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা পরিচয়দানকারী মাসুম বিল্লাহ বলেন, ছাত্ররা মসজিদের ভেতরে ঘুমিয়ে আছে। এতিমখানার ঘর পুরোনো হওয়ায় থাকার যোগ্য নয়। এ সময় হাফপ্যান্ট পরা কয়েকজন শিশু বের হয়ে আসে। তাদের নাম জানতে চেয়ে হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে মাসুম বিল্লাহ বলেন, রেজিস্টারসহ হাজিরা খাতা কয়েক মাস ধরে সমাজসেবা অফিসে।

রাজাপুরের মধ্য পুঁটিয়াখালী মোহাম্মদিয়া এতিমখানায় গিয়ে তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। ভেতরে কারও থাকার চিহ্ন নেই। মাসে বরাদ্দ পায় ১৫ হাজার টাকা করে। এটির প্রতিষ্ঠাতা ওলামা লীগের নেতা মো. ফারুক সিকদার। তাঁকে পাওয়া না গেলেও তাঁর চাচা আবদুল মজিদ বলেন, এতিমেরা বেড়াতে গেছে।

কাঁঠালিয়ার উত্তর তালগাছিয়া নেছারিয়া এতিমখানার ২৩ এতিমের জন্য বরাদ্দ পায়। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখা যায়, একটি রুমে মাত্র ৪-৫টি শিশু। সেখানে কর্তৃপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন জমিয়াতুল মোদার্রেছিন ঝালকাঠি জেলা সভাপতি আবু জাফর মো. সালেহ বলেন, এতিমদের হক এতিমদের বুঝিয়ে দেওয়া উচিত। এতিম না থাকলে বরাদ্দের টাকা সরকারের কোষাগারে ফিরিয়ে দিতে হবে।

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. রুহুল আমিন শেখ বলেন, তাঁদের নিয়ম অনুযায়ী, যাদের মা-বাবা বা শুধু বাবা নেই তারা বরাদ্দ পাবে। এ বিষয়টি মানবিক বলে বরাদ্দ দেওয়া অব্যাহত আছে। তবে সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। তাঁরা ইতিমধ্যে কাঁঠালিয়া সদর ও আওরাবুনিয়া ইউনিয়নের ছিটকি গ্রামের দুটি এতিমখানার ৫ লাখ টাকার বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়েছেন।