এনটিআরসিএ: তিন বছরেও শেষ হয়নি শিক্ষক নিয়োগপ্রক্রিয়া

শিক্ষক হিসেবে ৩৮ হাজার ২৮৬ জনকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ। কিন্তু পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষ না হওয়ায় নিয়োগ আটকে আছে।

এনটিআরসিএ

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের জন্য ৩৮ হাজার ২৮৬ জন চাকরিপ্রার্থীর অপেক্ষা শেষ হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, নিয়োগের সুপারিশ পাওয়া সবার পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষ হয়নি। এই কাজ শেষ হলে নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ হবে। উত্তীর্ণ হয়েও কাজে যোগ দিতে না পারায় হতাশ নিয়োগের জন্য সুপারিশ পাওয়া চাকরিপ্রত্যাশীরা।

■ ৫৪ হাজার ৩০৪ জন শিক্ষক নিয়োগে ২০১৮ সালের ২৮ নভেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ। ■ গত ১৫ জুলাই নিয়োগের সুপারিশ। এর মধ্যে ৩৪৬১০টি এমপিওভুক্ত পদে ও ৩৬৭৬টি নন-এমপিও পদে।

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) সূত্র জানায়, সারা দেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে ৫৪ হাজার ৩০৪ জন শিক্ষক নিয়োগের জন্য ২০১৮ সালের ২৮ নভেম্বর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ১৫তম শিক্ষক নিবন্ধনের এই প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালের ১৯ এপ্রিল। প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা হয় ২০১৯ সালের জুলাইয়ে। এরপর মৌখিক পরীক্ষা হয় ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা শেষে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয় গত বছরের ১৫ জানুয়ারি।

এনটিআরসিএ সূত্র জানায়, ১৫তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মধ্য থেকে স্কুল ও কলেজে শিক্ষক নিয়োগের জন্য এ বছরের ৩০ মার্চ তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। গণবিজ্ঞপ্তির আলোকে ৪ এপ্রিল আবেদন গ্রহণ শুরু হয়ে শেষ হয় ৩০ এপ্রিল। ১৫ জুলাই ৩৮ হাজার ২৮৬টি পদে নিয়োগের সুপারিশ করে এনটিআরসিএ। এর মধ্যে ৩৪ হাজার ৬১০টি এমপিওভুক্ত পদে ও ৩ হাজার ৬৭৬টি নন-এমপিও পদে নিবন্ধিত প্রার্থীর নিয়োগের জন্য সুপারিশ করা হয়।

এর আগে দুটি গণবিজ্ঞপ্তি জারির মাধ্যমে দুই দফায় শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছে এনটিআরসিএ। ওই দুই গণবিজ্ঞপ্তিতে ২০১৫ ও ২০১৬ সালে নিয়োগ পেয়েছেন প্রায় ৩৬ হাজার শিক্ষক।

তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীদের পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরম যাচাই শেষে ওয়েবসাইটে সুপারিশপত্র প্রকাশ করা হবে। এরপর প্রার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন। সুপারিশ পাওয়া প্রার্থীরা ২৫ আগস্ট থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এনটিআরসিএর ওয়েবসাইটে পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরম পূরণ করেন। তবে গত আড়াই মাসেও শেষ হয়নি পুলিশ ভেরিফিকেশন।

প্রাথমিক সুপারিশ পাওয়া অনেক প্রার্থী পুলিশ ভেরিফিকেশন নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন। তাঁরা বলছেন, শিক্ষক নিয়োগের জন্য প্রথম ও দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ ভেরিফিকেশনের বিষয়টি ছিল না। পুলিশ ভেরিফিকেশন না থাকায় প্রথম গণবিজ্ঞপ্তিতে চূড়ান্ত ফল প্রকাশের ৩০ দিনের মধ্যে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল এবং দ্বিতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে ১৫ দিনের মধ্যে নিয়োগ দেওয়া হয়।

চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগ না পাওয়ায় হতাশা ও অনিশ্চয়তায় দিন পার করছেন চাকরিপ্রার্থীরা। প্রাথমিকভাবে সুপারিশ পাওয়া সিলেটের শারমিন তন্নি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সব ধাপে উত্তীর্ণ হয়েও নিয়োগ না পাওয়া যে কত কষ্টের তা শুধু একজন বেকার জানে। এভাবে আর কত অপেক্ষা করতে হবে।’

নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে এনটিআরসিএর কর্মকর্তারা জানান, সুপারিশ পাওয়া সবার পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষ হওয়ার পর নিয়োগ কার্যক্রম শেষ হবে।

সার্বিক বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে কিছু বলতে রাজি হননি এনটিআরসিএর চেয়ারম্যান মো. এনামুল কাদের খান।

পুলিশ ভেরিফিকেশন কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) মো. কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আন্তরিকতা নিয়েই পুলিশ প্রতিবেদন শেষ করার কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এরপরও কোথাও থেকে ধীর গতির অভিযোগ পেলে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’