এবারও বর্ষার আগে চালু হচ্ছে না ৪০ জলকপাট

জোয়ারজনিত জলাবদ্ধতা রোধে তিন প্রকল্পের আওতায় চলছে ৪০টি জলকপাটের নির্মাণকাজ। একটিও চালু হয়নি এখনো।

কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে যুক্ত রাজাখালী খালের মুখে চলছে জলকপাট নির্মাণের কাজ। গত বুধবার বিকেল পাঁচটায় খালের ফিশারিঘাটে
সৌরভ দাশ

চট্টগ্রাম নগর পানিতে তলিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ জোয়ারজনিত জলাবদ্ধতা। এই সমস্যা নিরসনে কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে যুক্ত খালগুলোর মুখে ৪০টি জলকপাট (স্লুইসগেট) নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল পাঁচ বছর আগে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনোটির কাজ পুরোপুরি শেষ হয়নি। ফলে চলতি মৌসুমের বর্ষার আগে চালু হচ্ছে না জলকপাট।

চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান তিনটি প্রকল্পের আওতায় কর্ণফুলী ও হালদা নদীর সঙ্গে যুক্ত খালগুলোর মুখে জলকপাট নির্মাণ করা হচ্ছে। সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এসব জোয়ার প্রতিরোধক ফটক নির্মাণ করছে। এতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। তিনটি প্রকল্পই নির্ধারিত মেয়াদে শেষ না হওয়ায় আবার সময় বাড়ানো হয়েছে।

চট্টগ্রাম নগরে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি না হলেও বঙ্গোপসাগরের জোয়ারের পানি কর্ণফুলী নদী হয়ে বিভিন্ন খালের ভেতর প্রবাহিত হয়। অনেক সময় খাল উপচে তা আশপাশের এলাকা প্লাবিত করে। আর জোয়ারের সময় বৃষ্টি হলে তখন জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করে। বছরের পর বছর ধরে এই জোয়ারজনিত জলাবদ্ধতার ভোগান্তি নিয়ে বসবাস করছে নগরবাসী।

সঠিকভাবে সময় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কাজ করা হলে একটি জলকপাট নির্মাণ করতে এক বছরের বেশি সময় লাগার কথা না।
দেলোয়ার মজুমদার, সাবেক চেয়ারম্যান, আইইবি চট্টগ্রাম কেন্দ্র

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার প্রকৌশলীরা দাবি করেছেন, ৪০টি জলকপাটের মধ্যে অন্তত ১০টির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এগুলো আগামী জুনে চালু করার সম্ভাবনা রয়েছে।

২০১৭ সালে অনুমোদিত ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় নগরের পাঁচটি খালে জলকপাট নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রথমে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০০ কোটি টাকা। সিডিএর নেওয়া এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।

প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, পাঁচটি খাল—মরিয়মবিবি, কলাবাগিচা, টেকপাড়া, ফিরিঙ্গিবাজার ও মহেশখালের মুখে জলকপাট নির্মাণের ভৌত অবকাঠামোগত নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। ইতিমধ্যে মরিয়মবিবি ও কলাবাগিচা খালের ফটক বসানো হয়েছে। অন্য তিনটি খালের জন্য ফটক আনা হচ্ছে। এ ছাড়া মহেশখালের জন্য বড় পাম্প চলে এসেছে। বাকি চারটি খালের জন্য আটটি পাম্প প্রয়োজন। তার মধ্যে চারটি চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। এ ছাড়া জেনারেটরও ইতিমধ্যে এসে পৌঁছেছে।

প্রকল্প পরিচালক ও সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. শাহ আলী প্রথম আলোকে বলেন, রেগুলেটরের নির্মাণকাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক। অবকাঠামোগত নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হয়ে গেছে। জেনারেট, পাম্পসহ প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আসা শুরু হয়েছে। সবকিছু স্থাপন করে আগামী মাসেই রেগুলেটরগুলো চালু করার লক্ষ্য রয়েছে।

এদিকে ২০১৭ সালে অনুমোদিত নগরের চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত কর্ণফুলী নদীর তীরে বাঁধসহ সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ১২টি জলকপাট নির্মাণের কথা রয়েছে।

সিডিএর এই প্রকল্পের অধীনে এখন পর্যন্ত ১০টি খালে জলকপাটের নির্মাণকাজ চলছে। এই ১০টি খালের মধ্যে রয়েছে নগরের পানিনিষ্কাশনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম চাক্তাই ও রাজাখালী খাল।

সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক রাজীব দাশ বলেন, ১২টি খালের মধ্যে চাক্তাই ও রাজাখালী খালসহ ৫টি হচ্ছে মূল খাল। মূল খালগুলোর ভৌত অবকাঠামোগত নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক কাজ বাকি রয়েছে।

আর ২০১৯ সালে অনুমোদিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকল্পের আওতায় ১৭৯ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী ও হালদা নদীর সঙ্গে যুক্ত ২৩টি খালের মুখে জলকপাট নির্মাণ করা হচ্ছে।

গত বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, চাক্তাই ও রাজাখালী খালের মুখে ফটক স্থাপনের জন্য অবকাঠামোগত নির্মাণকাজ প্রায় শেষ হয়েছে। পণ্যবাহী নৌযান চলাচলের জন্য ফটক রাখা হয়েছে। জোয়ার প্রতিরোধক ফটকের দুই পাশে চলছে মাটি ভরাটের কাজ। এ ছাড়া মরিয়মবিবি, কলাবাগিচা, টেকপাড়া, ফিরিঙ্গিবাজার ও মহেশখালের মুখে জোয়ার প্রতিরোধক ফটক নির্মাণের মূল অবকাঠামোর কাজ প্রায় শেষ হয়েছে।

প্রকল্পে সময় ব্যবস্থাপনা যথাযথভাবে মেনে চলা হয়নি উল্লেখ করে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের (আইইবি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, গতবারও বলা হয়েছিল বর্ষার পরপরই জলকপাটগুলো চালু হবে। কিন্তু কাজ শেষ হয়নি। সঠিকভাবে সময় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কাজ করা হলে একটি জলকপাট নির্মাণ করতে এক বছরের বেশি সময় লাগার কথা না।