এবার পাট চাষে ভালো লাভের আশা মানিকগঞ্জের চাষিদের
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার মানিকগঞ্জে পাটের ভালো ফলন হয়েছে। আশানুরূপ দামও পাচ্ছেন চাষিরা। ফলে জেলার পাটচাষিরা এবার ভালো লাভের আশা করছেন।
জেলার পাটচাষি ও কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাট চাষে প্রচুর শ্রম দিয়ে এবং টাকা খরচ করেও গত কয়েক বছর চাষির ঘরে কিছুই থাকত না। কারণ, পাটের দাম আশানুরূপ ছিল না। কিন্তু দুই বছর ধরে পাটের দাম বেড়েছে। এতে করে যাঁরা পাটের চাষ ছেড়ে দিয়েছিলেন, তাঁরাও এ বছর পাটের চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন যথেষ্ট ভালো হয়েছে। আবার পাটের দাম আগের দুই বছরের তুলনায় আরও বেড়েছে। ফলে উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে ভালো লাভ থাকছে।
চাষিরা বলছেন, এ বছর তাঁদের এক বিঘা জমিতে (৩০ শতক) পাট চাষ করে জাগ দেওয়া পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৭-৮ হাজার টাকা। এর বাইরে আরও কিছু খরচ হবে। কিন্তু প্রতি বিঘায় এ বছর তাঁরা ১২ থেকে ১৫ মণ পর্যন্ত পাট পেয়েছেন। বর্তমানে বাজারে এ পাটের মূল্য মণপ্রতি ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা। সে হিসাবে এক বিঘা জমির পাট বিক্রি করে কমপক্ষে ২২ হাজার টাকা পাওয়া যাবে। বিঘাপ্রতি লাভ হবে ১৪ হাজার টাকার মতো।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, পাট চাষের ক্ষেত্রে এখন বড় সমস্যা হচ্ছে পানির অভাব। গত কয়েক বছর বর্ষার পানি না থাকায় কৃষক পাট পচাতে সমস্যায় পড়েছেন। তবে এবার প্রয়োজনীয় পানি ছিল। তিন বছর ধরে পাটের ভালো দামও পাচ্ছেন চাষিরা। তাই তাঁরা আবার পাট চাষে ঝুঁকছেন।
এ বছর জেলার সাতটি উপজেলায় ৪ হাজার ৪৮ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে চাষ হয়েছে ৫ হাজার ৮৬৩ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০ হাজার বেল (প্রতি বেলে ৫ মণ)। চাষ বেশি হওয়ায় উৎপাদন আরও বাড়বে বলে আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
গতকাল মঙ্গলবার সদর উপজেলার তিনটি গ্রামে গিয়ে পাট নিয়ে চাষিদের ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। মেঘশিমুল গ্রামের পাটচাষি মজিদ খান বলেন, তিনি পাটের চাষ ছেড়েই দিয়েছিলেন। গত দুই বছর অন্য কৃষকদের পাট চাষে লাভ করতে দেখে এবার তিনি দেড় বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেন। পাটের দামও পেয়েছেন ভালো।
কয়রা গ্রামের শামসুল ইসলাম বলেন, তিন বছর আগেও এক মণ পাটের দাম ছিল ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। গত বছর তা বেড়ে হয় ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা। এ বছর আরও বেড়েছে; ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আলীমুজ্জামান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, পাট চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। এ বছর পাট চাষের অনুকূল আবহাওয়া ছিল। এ ছাড়া চাষিরা উন্মুক্ত জলাশয়ে জাগ দিতে পারায় পাটের রং ভালো হয়েছে। আবার তাঁরা দামও ভালো পাচ্ছেন। এসব কারণে দুই বছর ধরে জেলায় পাটের চাষ বাড়ছে।