এবার বিশ্ববিদ্যালয় খোলার অপেক্ষা

ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হলের নিচতলায় চলছে চুনকামের কাজ। হলের বাইরে সাবান–পানি দিয়ে হাত ধোয়ার জন্য বসানো হয়েছে তিনটি বেসিন।

গতকাল সোমবার বেলা দুইটার দিকে সূর্য সেন হলে এমন চিত্র দেখা গেল। হল কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা জানালেন, এমনিতে হলটি অনেক পুরোনো। এর মধ্যে কিছু কিছু অংশে বেশি সমস্যা হয়েছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে, তাই সংস্কার করা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় কবে খুলছে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামালের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে কথা হয়। তিনি জানালেন, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সময় ঠিক করতে আগামীকাল বুধবার (১৫ সেপ্টেম্বর) প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা ডাকা হয়েছে। ওই সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল খোলা এবং বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত হবে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার প্রস্তুতি চলতি সপ্তাহেই শেষ হবে। আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে হল খোলার কথা থাকলেও এখন এ মাসের শেষ নাগাদ তা হতে পারে।

প্রাথমিক থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গত রোববার খুলেছে। গতকাল মেডিকেল কলেজেও সশরীর ক্লাস শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়টি এখন জোরেশোরে আলোচনায় এসেছে। এ নিয়ে আজ মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এ সভার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কবে খুলবে, তার ধারণা পাওয়া যেতে পারে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত নেবে একাডেমিক কাউন্সিল এবং সিন্ডিকেট সভা।

আজ হোক, কাল হোক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলতে হবে। তাই দ্রুত প্রস্তুতিগুলো শেষ করা উচিত।
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, সাবেক চেয়ারম্যান, ইউজিসি সদস্য

তবে অন্তত ১০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অক্টোবরের আগে সশরীর শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর সম্ভাবনা কম। পুরোপুরি প্রস্তুতি এখনো শেষ করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো; বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার কাজটি এখনো অনেক বাকি। এমনকি কত শিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হলো, তার সুনির্দিষ্ট তথ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিকে এখনো দিতে পারেনি অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়। গতকাল পর্যন্ত ১৫ থেকে ১৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের টিকাবিষয়ক তথ্য দিয়েছে।

এর আগে গত ২৬ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়াসহ কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আগামী ১৫ অক্টোবরের পর থেকে নিজ নিজ সিদ্ধান্তে খুলতে পারবে। তখন আরও আলোচনা হয়েছিল, ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার কাজটি শেষ করে ১৫ দিন অপেক্ষা করা হবে।

ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক দিল আফরোজা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, যেসব শিক্ষার্থী এখনো টিকা নিতে পারেননি, যাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র নেই বা এক ডোজ টিকা নেওয়ার পরও দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারেননি, তাঁদের তথ্য সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে দ্রুত দেওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে। টিকা দেওয়া সাপেক্ষে হয়তো অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খোলা যাবে।

বর্তমানে দেশে ৫০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামিক আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাদে বাকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোট শিক্ষার্থী সাড়ে ছয় লাখ। তাঁদের মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় তিন লাখ এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাড়ে তিন লাখের মতো শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। এর বাইরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অধিভুক্ত ২ হাজার ২৬০টি কলেজে মোট শিক্ষার্থী ২৯ লাখ ৭৫ হাজার ৮১৩ জন। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর বড় সাতটি কলেজে মোট শিক্ষার্থী প্রায় দুই লাখ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এসব কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরুর সিদ্ধান্ত হয়নি। অবশ্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন ক্লাসের পাশাপাশি সশরীর বা অনলাইনে পরীক্ষা নিচ্ছে।

ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আজ হোক, কাল হোক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলতে হবে। তাই দ্রুত প্রস্তুতিগুলো শেষ করা উচিত। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ করতে হবে।

বুয়েট কবে খুলছে

বর্তমানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষা কার্যক্রম অনলাইনে চলছে। পরীক্ষাও চলছে অনলাইনে, যা ২৭ সেপ্টেম্বর শেষ হবে।

বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কোনো শিক্ষার্থী যদি করোনার কারণে চলমান পরীক্ষা দিতে না পারে, তাহলে ২৭ সেপ্টেম্বরের পর তাদের সেই সুযোগ দেওয়া হবে। এটি করতে দু–তিন সপ্তাহ লাগতে পারে। আর সময়সূচি অনুযায়ী বুয়েটের নতুন টার্ম শুরু হওয়ার কথা ৩০ অক্টোবর।

এ পরিস্থিতিতে বুয়েট কবে খুলতে পারে জানতে চাইলে অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, তাঁরা আশা করছেন, ৩০ অক্টোবর থেকে হয়তো সশরীর শ্রেণিকক্ষে ক্লাস শুরু করা যাবে। তখন অনলাইন ও সশরীর—এ উভয় ব্যবস্থা থাকবে কি না, সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সিদ্ধান্ত হবে। এর আগে শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার কাজ, বিশেষ করে অন্তত এক ডোজ দেওয়া শেষ হয়ে যাবে।

অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় যা ভাবছে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেছেন, টিকা-সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের কাজ অন্তত আরও এক সপ্তাহ চলবে। সবার তথ্য পাওয়ার পর তা ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এরপর একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় খোলার সিদ্ধান্ত নিতে ৩০ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভা ডাকা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, আশা করা যায়, পূজার ছুটির পরে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হবে।

দুর্গাপূজা শুরু হবে আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ও আগামী মাসের মাঝামাঝি খোলার সম্ভাবনা আছে।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) উপাচার্য মোহাম্মদ রফিকুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় কবে খুলবে, সেটি ঠিক করার বিষয়ে আগামীকাল বুধবার সভা ডাকা হয়েছে। তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী টিকা নিয়েছেন। তাঁরা আশা করছেন, আগামী মাসে বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে পারবেন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকার বিশ্ববিদ্যালয় খোলার ঘোষণা না দেওয়ায় এ নিয়ে আপাতত কোনো সিদ্ধান্ত প্রশাসনের নেই। তবে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত অনলাইনে পরীক্ষার সময়সূচি করা আছে।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এমরান কবির চৌধুরী জানালেন, পরিস্থিতি বুঝে ক্যাম্পাস খোলা হবে। তবে সশরীর পরীক্ষা হচ্ছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন প্রথম আলোকে জানান, এক সভায় সরকারের পরিকল্পনা ছিল, অক্টোবরের মাঝামাঝি বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হবে। এখন পর্যন্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও সে অনুযায়ী সশরীর শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর কথা ভাবছে।

[প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা, সিলেট রাজশাহী এবং প্রতিনিধি, খুলনা]