এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরাও নতুন স্কেলে বেতন পাবেন

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্ত (বেতন বাবদ সরকারি অনুদান পাওয়া) শিক্ষক-কর্মচারীরাও গত ১ জুলাই থেকে নতুন জাতীয় বেতন স্কেলে বেতন পাবেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল রোববার এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানিয়েছে।
নতুন স্কেলে এমপিওভুক্ত কলেজের একজন প্রভাষকের মূল বেতন হবে ২২ হাজার টাকা (নবম গ্রেড)। বর্তমানে তাঁরা ১১ হাজার টাকা পাচ্ছেন। সহকারী অধ্যাপকেরা পাবেন ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা (ষষ্ঠ গ্রেড)। এখন পাচ্ছেন ১৮ হাজার ৫০০ টাকা। আর অধ্যক্ষদের হবে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এত দিন পাচ্ছিলেন ২৫ হাজার ৭৫০ টাকা।
উল্লেখ বেসরকারি কলেজের শিক্ষকেরা চাকরিজীবনে একবারই পদোন্নতি পেয়ে সহকারী অধ্যাপক হতে পারেন।
আর বেসরকারি হাইস্কুলের সহকারী শিক্ষকের মূল বেতন হবে ১০ম গ্রেডে ১৬ হাজার টাকা। এখন পাচ্ছেন আট হাজার টাকা। আর জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষকের বেতন হবে ২২ হাজার টাকা (নবম গ্রেড)। এখন পান ১১ হাজার টাকা।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সকালে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ-সংক্রান্ত নির্দেশনার চিঠি এনে তারপর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এর ফলে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের সমস্যার সমাধান হলো।
বর্তমানে সারা দেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী আছেন প্রায় পাঁচ লাখ। তাঁরা মূল বেতনের শতভাগ সরকার থেকে পেয়ে থাকেন। এর বাইরে কিছু ভাতাও পান। তবে সরকারি চাকরিজীবীরা আগামী মাসে (জানুয়ারি) বেতন তোলার সময় নতুন স্কেলে পেলেও এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা একই সময়ে তা পাবেন কি না, তা ঘোষণা করা হয়নি। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, একটু সময় লাগলেও তাঁরা বকেয়া হিসেবে জুলাই থেকেই নতুন স্কেলে বেতন পাবেন। এতে কোনো অসুবিধা হবে না।
১৫ ডিসেম্বর নতুন বেতন স্কেল ঘোষণা করা হলেও এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বিষয়টি স্পষ্ট না করায় তাঁদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে প্রায় সব কটি শিক্ষক-কর্মচারী সংগঠন আন্দোলনের হুমকি দেয়। প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ায় তারা সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজশিক্ষকদের আপত্তি: সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের গ্রেড-১ এবং গ্রেড-২-তে উন্নীত হওয়ার বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে তাতে আপত্তি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। তাঁরা বলছেন, নতুন প্রক্রিয়ায় তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বাধীন একটি কমিটির অনুমোদনক্রমে শিক্ষকেরা গ্রেড-১ ও গ্রেড-২-এ যেতে পারবেন। গ্রেড-১ভুক্ত অধ্যাপকের সংখ্যা গ্রেড-২ভুক্ত যত অধ্যাপক আছেন তার ২৫ শতাংশের বেশি হতে পারবে না। অথচ বর্তমানে মোট অধ্যাপকের মধ্য থেকে ২৫ শতাংশ গ্রেড-১-এ উন্নীত হন।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব এস এম মাকসুদ কামাল প্রথম আলোকে বলেন, নতুন সিদ্ধান্তে অধ্যাপকদের গ্রেড-১-এ যাওয়ার সুযোগ প্রায় অর্ধেক কমে যাবে। এটা তাঁরা মানবেন না। শিগগির সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা তাঁদের অবস্থান ঘোষণা করবেন।
আর বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের (সরকারি কলেজশিক্ষক) অধ্যাপকদের গ্রেড-৩-এ উন্নীত হওয়ার জন্য নিয়োগ ও পদোন্নতি বিধিমালা সংশোধন করতে হবে। এ বিষয়ে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহাসচিব আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার প্রথম আলোকে বলেন, এটি একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এটা তাঁরা মানবেন না।
প্রকৃচি-২৬টি বিসিএস ক্যাডার কর্মকর্তাদের কালো ব্যাজ ধারণ: নতুন বেতন স্কেলের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে ‘সৃষ্ট বৈষম্যমূলক’ সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবিতে গতকাল থেকে কালো ব্যাজ ধারণ শুরু করেছেন প্রকৌশলী, কৃষিবিদ, চিকিৎসক এবং ২৬টি ক্যাডারভুক্তসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে। গতকাল সচিবালয়ে তথ্য ক্যাডারের কিছু কর্মকর্তা কালো ব্যাজ পরে কাজ করেন। ফার্মগেটে খামারবাড়ি এলাকায় কৃষি ক্যাডারের কর্মকর্তারাও এ কর্মসূচি পালন করেন।
কর্মকর্তারা বলেছেন, একই দাবিতে ২৩ ডিসেম্বর সারা দেশে মানববন্ধন ও ২৪ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। এরপর ২৭ থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাঁরা প্রতিদিন এক ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করবেন।