ওঁরা কেন ছাদে?
ফিরোজ বিশ্বাসের বয়স ষাটের কাছাকাছি। তবুও মুহূর্তের মধ্যে ট্রেনের ছাদে উঠে গেলেন তিনি। পরে নিলেন কালো চশমা। রোদের খরতাপে টিকতে না পেরে এরপর গামছা দিয়ে মাথা ঢেকে নিলেন। এভাবে অন্তত এক ঘণ্টা ছাদে অপেক্ষার পর তাঁর রাজশাহী এক্সপ্রেস টেন স্টেশন ছেড়ে গেল।
ছাদে ওঠার ব্যাপারে ফিরোজের যুক্তি, ট্রেনের ভেতর গাদাগাদি। প্রচণ্ড গরম। তাই ট্রেনের ছাদে উঠেছি। বাতাস লাগে। হাসতে-খেলতে চলে যাবে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায়। যেখানে তাঁর বাড়ি। ট্রেনের ছাদে ওঠা বেআইনি এমন কথা জানানোর পর ফিরোজ বললেন, ‘আমি জানি ছাদে ওঠা অন্যায়। কিন্তু দেখেন আনসার-পুলিশ আমাদের সামনেই দাঁড়ানো। তাঁরা কিছুই বলেনি। যদি তাঁরা কঠোর হতো তাহলেতো আমার ছাদে থাকার কথা না।’ এমন কথা বলে হো হো করে হাসতে থাকেন ফিরোজ।

ফিরোজের মতো আরও অনেক ষাট বছর বয়সী মানুষকে তরতর করে ট্রেনের ছাদে উঠতে দেখা যায়। কমলাপুরে ট্রেন স্টেশনে এমন অনেক নারী যাত্রীকে দেখা গেল, কাঁধে ব্যাগ নিয়েও ছাদে উঠেছেন। শত শত যাত্রী যখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনের ছাদে উঠছিলেন তখন তাঁদের সামনেই ছিল রেলের কর্মকর্তা, আনসার ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। তবে রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে ট্রেনের ছাদে উঠতে নিষেধ করতে দেখা গেছে।
কমলাপুর রেলস্টেশনের ব্যবস্থাপক সিতাংশু চক্রবর্তী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাদে যাতে যাত্রীরা না ওঠেন তার জন্য যা করার দরকার আমরা করছি। যাত্রীদের মাইকিং করে জানাচ্ছি। সব মানুষ জানে, ছাদে চড়া বিপজ্জনক। তারপরও যাত্রীরা ছাদে উঠছে। আমরা যদি লাঠিপেটা করি তাহলে অনেকে এর সমালোচনা করবেন। আমরা যদি সব লোক নামাইতে যায়, তাঁরা নামবে না। বহুবার চেষ্টা করেছি। আমরা ব্যর্থ হয়েছি। আমরা বাধা দিচ্ছি। গাড়ির ভেতরে ফাঁকা। অথচ লোকে ছাদেই যাচ্ছে।’

বেলা দুইটার দিকে রংপুর এক্সপ্রেস স্টেশন ছেড়ে যায়। এর আগে বেলা একটার দিকে ট্রেনটি স্টেশনে আসে। দেখা যায়, ট্রেনের ছাদে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। ট্রেন ছাড়ার মাত্র তিন মিনিট আগে চার যুবক ট্রেনের পরিচালকের কক্ষের কাছাকাছি জায়গা দিয়ে ছাদে ওঠে। সরেজমিনে দেখা গেছে, আজ শনিবার রংপুর এক্সপ্রেস, একতা এক্সপ্রেস ও রাজশাহী এক্সপ্রেসের ছাদেও মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রা করেছেন। রাজশাহী এক্সপ্রেসের ছাদে ওঠা আবদুল আলিম বলছিলেন, ‘ঈদে বাড়ি যেতে হবে। ভেতরে জায়গা পাইনি তাই ছাদে উঠেছি।’ আর রংপুর এক্সপ্রেসের ছাদের যাত্রী পঞ্চাশ বছর বয়সী আবদুল মোতালেব বলছিলেন, ‘৫০৫ টাকা দিয়ে ট্রেনের টিকিট কেটেছি। কিন্তু ভেতরে দম বন্ধ হয়ে আসে। তাই ছাদে উঠেছি।’
ছাদে চড়া দণ্ডনীয় অপরাধ হওয়ার পরও কেন যাত্রীদের ছাদে উঠতে দেওয়া হচ্ছে-এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে কমলাপুর রেলওয়ে (জিআরপি) থানার ওসি ইয়াসিন ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের চেষ্টা হলো যাত্রীদের নামানোর। কিন্তু যাত্রীদের সংখ্যা এত বেশি যে সেখানে লাঠিপেটা করা সম্ভব হচ্ছে না। ছাদের ওপর যাত্রীদের ওঠা অপরাধ। কিন্তু যাত্রীরা ছাদে যাচ্ছেই। আমরা মাইকিং করছি, যাতে যাত্রীরা ছাদে না ওঠে। ছাদ থেকে যাত্রীরা পড়ে মরে যাচ্ছে। রাতে ছাদ থেকে যাত্রীদের ফেলেও দেওয়া হয়েছে। মানুষ মরেছে।’ রেলওয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তার বলছেন, কমলাপুরে ট্রেনের ভেতর থেকে ছাদের ওপর যাত্রীদের সংখ্যা বেশি। টিকিট কেটে যাত্রীরাও ছাদে চড়ছে।