ওআইসির তহবিলে ৫ লাখ ডলার দিয়েছে বাংলাদেশ

মিয়ানমারের রাখাইনে দমন-পীড়নের শিকার হয়ে লাখো রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে
ছবি: রয়টার্স

আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলা চালাতে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) তহবিলে বাংলাদেশ পাঁচ লাখ মার্কিন ডলার দিয়েছে।

ওআইসিতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘গাম্বিয়াকে আইনি লড়াইয়ে সহায়তা দেওয়ার জন্য আমরা ইতিমধ্যে ওআইসির তহবিলে এ অর্থ প্রদান করেছি।'

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে গত বছরের নভেম্বরে আইসিজেতে মামলা করে গাম্বিয়া। মামলাটি চালাতে গিয়ে অর্থসংকটে পড়েছে গাম্বিয়া। এ জন্য দেশটি ওআইসির সদস্যদেশগুলোর কাছে জরুরি ভিত্তিতে অর্থ চেয়েছে। মূলত আইসিজেতে মামলা পরিচালনাকারী আইনি পরামর্শকদের ফির জন্য প্রায় ৫০ লাখ ডলারের তহবিল চায় গাম্বিয়া। আফ্রিকার দেশ নাইজারে অনুষ্ঠিত ওআইসির বৈঠকে গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী দাউদা এ জেলো বিষয়টি উত্থাপন করেন।

নাইজারে ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের কাউন্সিলে (সিএফএম) বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বদানকারী জাবেদ পাটোয়ারী বাসসকে বলেন, ওআইসির জেনারেল সেক্রেটারিয়েট এখন আইসিজেতে গাম্বিয়ার লড়াইয়ে সহায়তার জন্য একটি বিশেষ হিসাব খুলেছে। পশ্চিম আফ্রিকার দেশটিও তহবিলের জরুরি প্রয়োজনের ইঙ্গিত দিয়েছে।

গাম্বিয়ার মন্ত্রী দাউদা এ জেলো সিএফএমে রোহিঙ্গা মামলার সবশেষ পরিস্থিতি উপস্থাপন করতে গিয়ে বলেন, ‘এই আইনি মামলার জন্য আমি ওআইসির সদস্য দেশগুলোর কাছে জরুরি, স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ও গুরুত্বপূর্ণ অবদানের আহ্বান জানাচ্ছি।’

দাউদা এ জেলো বলেন, মামলাটি চালাতে বিশেষ করে আইনজীবীদের অর্থ প্রদানের জন্য গাম্বিয়ার প্রায় পাঁচ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দরকার। এই মামলার বাদীপক্ষে দাঁড়ানোর জন্য ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি নামী আইনি সংস্থাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

দাউদা এ জেলো বলেন, ‘দুর্ভাগ্যের বিষয়, আইনি সংস্থাটি ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে যে আইনি সেবা দিয়ে আসছে, সে জন্য তারা এখনো তেমন উল্লেখযোগ্য অর্থ পায়নি। এ মাসে এই আইনি সংস্থাকে তিন লাখ মার্কিন ডলার প্রদান করা হয়েছে, যা তাদের প্রাপ্য পরিমাণের ১০ শতাংশেরও কম।’

গাম্বিয়ার মন্ত্রী বলেন, এই মামলার লক্ষ্য হচ্ছে রোহিঙ্গা সংকটের একটি চূড়ান্ত ও স্থায়ী সমাধান। তিনি সতর্ক করে বলেন, আইসিজেতে রোহিঙ্গা সমস্যাসংক্রান্ত ওআইসির সম্ভাব্য যাবতীয় পদক্ষেপ মামলার স্বার্থে তাঁর দেশের সঙ্গে সমন্বয় করে পরিচালনা করা উচিত। ওআইসির যেকোনো সমন্বয়হীন পদক্ষেপ মামলাটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বিষয়টিকে আরও জটিল করতে পারে।

ওআইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, ঢাকা ছাড়াও ওআইসির ৫৭ সদস্যের মধ্যে সৌদি আরব, তুরস্ক ও নাইজেরিয়া এই মামলায় লড়তে গাম্বিয়াকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।

গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া ওআইসির দুই দিনের গুরুত্বপূর্ণ ৪৭তম সিএফএম অধিবেশনে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তাঁর করোনা শনাক্ত হওয়ায় তিনি তাঁর নির্ধারিত নাইজার সফর বাতিল করেন। এ অবস্থায় ওআইসিতে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও সৌদি আরবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জাবেদ পাটোয়ারী বৈঠকে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেন।

সিএফএমে রোহিঙ্গা সংকট মূল আলোচ্য বিষয় হিসেবে উঠে আসে।

১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। এই রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের রাখাইনে দমন-পীড়নের শিকার হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।