কঠিন চীবর দান উৎসবে শান্তি ও মঙ্গল কামনা

বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের শান্তি, সমৃদ্ধি ও মঙ্গল কামনার মধ্য দিয়ে রাঙামাটির রাজবন বিহারে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত ‘কঠিন চীবর দান’ উৎসব শেষ হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।
সমাপনী অনুষ্ঠানে চাকমা সার্কেল প্রধান রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, বুদ্ধের অহিংস নীতি অনুসরণ করলে সমাজে শান্তি ও সুখ আসবে। চাকমা সার্কেলের রানি য়েন য়েন ধর্মের নামে নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর করতে ভিক্ষু সংঘকে (বৌদ্ধ সাধক) ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে ধর্মের কথা বলে নারীদের হেয় করা হয়। কিন্তু বৌদ্ধধর্মে অন্ধবিশ্বাস ও মৌলবাদের কোনো স্থান নেই।
অনুষ্ঠানে রাঙামাটি থেকে নির্বাচিত সাংসদ ঊষাতন তালুকদার বলেন, ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’—সরকারের নীতিনির্ধারকেরা যখন এ কথা বলেন, তখন আশা জাগে। কিন্তু যখন কথায় ও কাজে মিল দেখা যায় না, তখন হতাশা জন্ম নেয়। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি-সমৃদ্ধির লক্ষ্যে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা বলেন, বুদ্ধের অহিংস নীতিতে চললে ভেদাভেদ, অশান্তি থাকবে না।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন রাজবন বিহার উপাসক উপাসিকা পরিষদের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি গৌতম দেওয়ান। বক্তব্য দেন সাবেক শিল্পমন্ত্রী দীলিপ বড়ুয়া। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হক, সাবেক উপমন্ত্রী মনি স্বপন দেওয়ান, সেনাবাহিনীর রাঙামাটি রিজিয়নের অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মালিক শামস উদ্দিন আহমেদ, জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন, পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা ও চিং কিউ রোয়াজা।
এর আগে বেলা আড়াইটায় চাকমা রাজা দেবাশীষ রায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তৈরি চীবর (বৌদ্ধ সাধকদের পরার কাপড়) উপস্থিত হাজার হাজার নারী-পুরুষের সাধুবাদ ধ্বনির মধ্য দিয়ে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দান করেন। পরে তা সব প্রাণীর সুখ ও মঙ্গল কামনায় উৎসর্গ করা হয়।
অনুষ্ঠানে চীবর দানের পাশাপাশি ধর্মীয় রীতিতে পঞ্চশীল গ্রহণ, অষ্টপরিষ্কার দানসহ নানা দানের কাজ সম্পন্ন করা হয়। এরপর পাঁচ শতাধিক ভিক্ষু একযোগে ধর্মীয় প্রার্থনা করেন। সমাপনী অনুষ্ঠানে রাজবন বিহারের আবাসিক প্রধান প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির, জ্যেষ্ঠ বৌদ্ধ সাধক ভৃগু মহাস্থবির ও জ্ঞানপ্রিয় মহাস্থবির পুণ্যার্থী নারী-পুরুষের উদ্দেশে ধর্মীয় দেশনা (উপদেশ বাণী) দেন। পরে বিহার প্রাঙ্গণে সারি সারি প্রদীপ জ্বালিয়ে পূজা করা হয়।