কঠোরতম বিধিনিষেধের আগে ঢাকা ছাড়ছেন অনেকে

গাবতলী বাস টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড়
ছবি: প্রদীপ সরকার

করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আগামীকাল শুক্রবার কঠোরতম বিধিনিষেধ শুরুর আগে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা ছাড়ছেন অনেকে।

ছুটি না পাওয়া, যানবাহন না পাওয়াসহ নানা কারণে যাঁরা ঈদের আগে ঢাকা ছাড়তে পারেননি, তাঁরা আজ যানবাহন চালু থাকার শেষ দিনে গ্রামে যাচ্ছেন। আজ যাঁরা ঢাকা ছাড়ছেন, তাঁদের মধ্যে বিধিনিষেধে কাজ ও উপার্জন বন্ধ থাকবে, এমন শ্রেণির লোক উল্লেখযোগ্য। আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনালে এই চিত্র দেখা যায়।

সকাল থেকে গাবতলী বাস টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় লেগে থাকতে দেখা যায়। যাত্রীদের একটা অংশ পরিবার-পরিজন নিয়ে বাস টার্মিনালে এসেছে।

গাবতলী বাস টার্মিনালে থাকা সব কটি পরিবহন কোম্পানির কাউন্টার আজ খোলা রয়েছে। কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের চাপ রয়েছে।

বেশ কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কঠোরতম বিধিনিষেধে সবকিছু বন্ধ থাকবে। ফলে ঢাকায় তাঁদের করার কিছু থাকবে না। এ কারণে তাঁরা পরিবার নিয়ে গ্রামে যাচ্ছেন। বিধিনিষেধ উঠে গেলে আবার ঢাকায় ফিরবেন। গ্রামে গিয়ে তাঁরা কিছু কাজকর্ম করে টিকে থাকার চেষ্টা করবেন।

এমনই একজন যাত্রী মো. সালমান। তিনি রাজধানীর ফুটপাতে প্যান্ট বিক্রি করেন। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত বেচাবিক্রি করেছেন। তারপর পরিবার নিয়ে ঢাকাতেই ঈদ করেছেন। আজ গাবতলী বাস টার্মিনালে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এসেছেন। যাবেন ফরিদপুরে, গ্রামের বাড়িতে।

সালমান বলেন, ‘কাল থেকে আবার বিধিনিষেধ, এই সময় ঢাকায় থেকে কী করব? গ্রামে চলে যাচ্ছি। বিধিনিষেধ তুলে নিলে আবার আসব। এর মধ্যে গ্রামে কিছু একটা করার চেষ্টা করব।’

দিনাজপুর যাবেন দুই ভাই মো. মাজিদ ও মনির হোসেন। তাঁরা দুজনই রাজধানীর একটি ফার্নিচারের শোরুমে কাজ করেন। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত শোরুমে কাজ করেছেন। তারপর ঢাকায় ঈদ করেছেন। গ্রামে যেতে আজ তাঁরা বাস টার্মিনালে এসেছেন।

মাজিদ বলেন, ‘বিধিনিষেধের কারণে আগামীকাল থেকে আমাদের শোরুম বন্ধ থাকবে। বসে থেকে লাভ নেই। তাই গ্রামে চলে যাচ্ছি। গ্রামে কৃষিজমি আছে, সেগুলো দেখভাল করব।’

ঢাকা-ফরিদপুর-বরিশাল-বাকেরগঞ্জ-পটুয়াখালী-আমতলী-খেপুপাড়া-কুয়াকাটা রুটে চলে গোল্ডেন লাইন। এই পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার শাহ আলম বলেন, বাইরে থেকে যত মানুষ আসছে, তার চেয়ে দ্বিগুণ মানুষ আজ ঢাকা ছাড়ছে। ১৪ দিনের বিধিনিষেধের কারণে মানুষ এখন গ্রামে যাচ্ছে।

গাবতলী বাস টার্মিনালের কাউন্টারগুলোতে আজ যাত্রীদের চাপ রয়েছে।
ছবি: প্রদীপ সরকার

আজ ভোর সোয়া ৫টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত গাবতলী থেকে গোল্ডেন লাইনের ৩০টি বাস ছেড়ে গেছে বলে জানান শাহ আলম। তিনি বলেন, প্রতিটি বাসই যাত্রীতে ভর্তি ছিল।

ঢাকা-নাটোর-রাজশাহী-চাঁপাই-শিবগঞ্জ-কানসাট রুটের গ্রামীণ ট্রাভেলসের কাউন্টার মাস্টার মো. আলম বলেন, আজ অনেক মানুষ যাচ্ছে। দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে বাস ছাড়বে। বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে বাসের প্রায় সব আসনের টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। আজ বাসের সব সিট নির্ধারিত সময়ের আগেই পূরণ হয়ে যাচ্ছে।

আলম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সেতুসহ ওই এলাকায় প্রচুর যানজট আছে। সে জন্য আমাদের বাস সময়মতো ঢাকায় আসতে পারেনি। এ কারণে সকালে আমাদের ট্রিপের বাস গন্তব্যে যায়নি। তারপর বাস এলে পরপর চারটা ছেড়ে যায়।

করোনার সংক্রমণ রোধে সরকার ২৩ জুলাই সকাল ছয়টা থেকে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে। এই বিধিনিষেধ ‘কঠোরতম’ হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন।