কথা গান আবৃত্তিতে বইসন্ধ্যা

প্রথম আলোর ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ‘আলোয় আঁধারে’ প্রদর্শনীর বিশেষ আয়োজন ‘নিজের বই নিয়ে’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে তিন লেখক (বাঁ থেকে) আনোয়ারা সৈয়দ হক, আকবর আলি খান ও মহিউদ্দিন আহমদ। গতকাল জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনকক্ষে
ছবি: সাজিদ হোসেন

এখন ডিজিটাল যুগ। ছাপা বইয়ের দিন কি তবে ফুরিয়ে এল—এমন আশঙ্কার কথা প্রায়ই শোনা যায়। তবে নতুন বইয়ের গন্ধ আর হাতে বই তুলে নিয়ে পাতা উল্টে উল্টে পড়ে যাওয়ার যে আনন্দ, তা থেকে পাঠক নিজেকে বঞ্চিত করবেন কেন? তাই ছাপা বইয়ের দিন ফুরোচ্ছে না।

করোনা মহামারিকালে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের দেশগুলোতে ছাপা বইয়ের বিক্রি বরং আগের চেয়ে বেড়েছে। বাংলাদেশেও বইয়ের বিক্রি কমেনি। তাই ছাপা বইয়ের ভবিষ্যৎ অতটা শঙ্কাজনক নয়। তবে গুণমানে ভালো বই পাঠকের হাতে তুলে দিতে হবে।

বই নিয়ে আলোচনায় এমন মূল্যায়ন উঠে এল গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনকক্ষে। সেখানে ১৩ নভেম্বর থেকে চলছে প্রথম আলোর ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর বিশেষ প্রদর্শনী ‘আলোয় আধাঁরে’। শিল্পী ওয়াকিলুর রহমানের পরিকল্পনা ও উপস্থাপনায় এই প্রদর্শনীতে প্রথম আলোর যাত্রাপথ এবং পত্রিকা থেকে বৃহৎ গণমাধ্যমে রূপান্তর তুলে ধরা হয়েছে।

রোজ বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী খোলা। চলবে আগামীকাল শুক্রবার পর্যন্ত। প্রতিদিন বিকেল পাঁচটা থেকে এখানে থাকছে আলাদা আলাদা আয়োজন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল পঞ্চম দিনে ছিল আলোচনা অনুষ্ঠান ‘নিজের বই নিয়ে’।

পাঠকেরা তো একটা তৈরি হওয়া বই পড়েন। কিন্তু লেখককে কত কী করতে হয়, সে খবর পাঠকের প্রায় অজানাই থেকে যায়। সে কথাই উঠে এল আলোচনার মাধ্যমে। ফাঁকে আবৃত্তি, গান আর পাঠকদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তরে বেশ জমে উঠেছিল সন্ধ্যা।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। যদিও তিনি বললেন, প্রথম আলো নয়, তিনি এই দায়িত্ব নিয়েছেন প্রথমা প্রকাশনের হয়েই। অনুষ্ঠানের সূত্র ধরিয়ে দিয়েছিলেন প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ।

শুরুতেই মতিউর রহমান বলেন, ‘আনন্দের বিষয় হলো করোনাকালেও আমাদের দেশে বই বিক্রি কমেনি। প্রথমা সুসম্পাদিত, নির্ভুল ও উন্নত মানের বই পাঠকের হাতে তুলে দিতে চেষ্টা করছে। একই সঙ্গে লেখকদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি, তাঁদের সঙ্গে চুক্তি করে যথাযথ সম্মানী ও প্রতিবছর হিসাব দেওয়ার মতো কাজ করে যাচ্ছে।’ প্রথমা এখন দেশের অন্যতম প্রধান প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে ৬৭০টি বই প্রকাশিত হয়েছে, এর মধ্যে শুধু মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বই ৫৪টি।

অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন ফারহিন খান জয়িতা
ছবি: প্রথম আলো

যা বললেন লেখকেরা

বই নিয়ে আলোচনা পর্বে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান বলেন, তিনি দুই ধরনের পাঠকের কথা ভেবে বই লেখেন। তিনি ইতিহাস ও অর্থনীতির ছাত্র। অর্থনীতি পড়তে গিয়ে তার ভেতরের যে সৌন্দর্যে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন, তা সাধারণ পাঠকের কাছে তুলে ধরতেই অর্থনীতি ও ইতিহাসের বইগুলো লিখেছেন। আর পাঠক হিসেবে তিনি কোনো বিশেষ বিষয়ে বিভিন্ন পণ্ডিতের বিভিন্ন মত ও যুক্তির মধ্যে যে বৈপরীত্য লক্ষ করেছেন, সেসব বিষয়ে তিনি নিজের পর্যবেক্ষণ ও চিন্তার আলোকে অভিমত দিয়ে কিছু কিছু বই লিখেছেন।

আকবর আলি খান আরও জানান, বই লেখার জন্য তিনি সেই বিষয়ে দীর্ঘদিন ভাবেন, ন্যূনতম ১০ বছর। এখন তিনি তাঁর আত্মজীবনীর দ্বিতীয় পর্ব লিখছেন।

এই পর্যায়ে সঞ্চালক মতিউর রহমান জানান, আগামী জানুয়ারিতে আকবর আলি খানের একটি একক বক্তৃতা আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।

লেখক ও মনোরোগ চিকিৎসক আনোয়ারা সৈয়দ হক সরস বাচনে সৈয়দ শামসুল হকের জীবনের অন্তিম দিনগুলো নিয়ে লেখা প্রথমা থেকে প্রকাশিত বাসিত জীবন বইটি প্রকাশের পরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। বইটি প্রকাশের পর অনেক পাঠক তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।

লেখক-গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, রাজনৈতিক ইতিহাসের ধারার যে বইগুলো তিনি লিখেছেন, তাতে নিজস্ব মতামত দেওয়ার চেষ্টা করেননি। তিনি যেমন নিরাসক্তভাবে তথ্য দিয়েছেন, তেমনি পাঠকও যদি তাঁদের রাজনৈতিক মতাদর্শ থেকে সরে এসে নিরপেক্ষ মনোভাবে পাঠ করেন, তবে নিজেই প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করতে পারবেন।

আলোচনার ফাঁকে আবৃত্তি করেন জাভেদ হুসেন। পরে ছিল পাঠকদের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্ব। সবশেষে শিল্পী ফারহিন খান জয়িতা গেয়ে শুনিয়েছেন, ‘ও যে মানে না মানা’, ‘বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতিতে’, ‘মোর ভাবনারে’, ‘এসো শ্যামল সুন্দর’ গানগুলো।

আজকের আয়োজন

প্রথম আলোর ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালায় আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে থাকবে প্রশ্নোত্তর পর্ব ‘পাঠকের মুখোমুখি’। অংশ নেবেন মতিউর রহমান, আব্দুল কাইয়ুম, সাজ্জাদ শরিফ ও সুমনা শারমীন। গান শোনাবেন অটামনাল মুন, সঞ্চালনা করবেন আনিসুল হক।