কবরের পাশে বুকভাঙা কান্না স্বজনদের

রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে একটি কবরে এক হাত রেখে কাঁদছেন মধ্যবয়সী সফুরা খাতুন। আরেক হাতে মেয়ে রাশিদা খাতুনের ছবি। কবরের পাশে টাঙানো সাইনবোর্ডে লেখা ডিএনএ নম্বর ৯৬।
ওই নম্বর দেখেই সফুরা গতকাল বৃহস্পতিবার শনাক্ত করেন মেয়ের কবর। গত বছরের ২৪ এপ্রিল রানা প্লাজা ধসে প্রাণ হারান রাশিদা। শনাক্ত না হওয়ায় আরও অনেকের মতো অজ্ঞাতনামা হিসেবে তাঁর লাশও দাফন করা হয়েছিল জুরাইনে। শনাক্তের জন্য কবরগুলোর পাশে রাখা হয় ডিএনএ নম্বরসংবলিত সাইনবোর্ড, যা দেখে গতকাল প্রথমবার মেয়ের কবর দেখলেন সফুরা।
রানা প্লাজা ধসের প্রথম বর্ষপূর্তিতে গতকাল সফুরার মতো জুরাইন কবরস্থানে এসেছিলেন অজ্ঞাত হিসেবে দাফন হওয়া পোশাককর্মীদের স্বজনেরা। বুকভাঙা কান্না, বিলাপে তাঁরা স্মরণ করেছেন নিহত প্রিয়জনকে। নিহত শ্রমিকদের প্রতি সম্মান জানাতে ও দোয়া করতে সেখানে গিয়েছিলেন বিভিন্ন শ্রমিক ও মানবাধিকার সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
কাঁদতে কাঁদতে সফুরা জানালেন, গত ফাল্গুন মাসে একজন শ্রমিক সংগঠক রাশিদার খোঁজ দেন। সে অনুযায়ী ছেলে আবু বকরকে নিয়ে ঢাকায় এসেছেন তিনি। সফুরার দাবি, ‘রানা পিলাজার লাশ যেই রকম পচিছে, গন্ধ ধরিছে, সেই রকম পচা দরকার রানার লাশ। আপনারা সেই ব্যবস্থা করেন।’
আবু বকর বলেন, রানা প্লাজা ধসের পর দেড় মাস সাভারে থেকে বোনকে খুঁজতে তাঁর চারটা গরুই বেচতে হয়েছে। পরে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য রক্ত দিয়ে গ্রামে চলে যান। ফাল্গুন মাসে একজন ফোন করে জানালেন, ডিএনএ নমুনা মিলেছে। পরে হাসপাতালে এসে জানেন, মিটফোর্ড হাসপাতালে তিন দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা যান রাশিদা। ছয় দিন রাখার পর লাশ অজ্ঞাত হিসেবে দাফন করা হয়।
বোনের খয়েরি ওড়না হাতে নওগাঁ থেকে কবরস্থানে এসেছেন রোজিনা বেগম। তাঁর বোন পপি (২০) ও পপির স্বামী ফরহাদ (২৫) দুজনেই রানা প্লাজা ধসে নিহত হন। তখন পপি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। খুঁজতে খুঁজতে আট দিন পর তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে একটি লাশের গায়ে খয়েরি রঙের জমিনে সোনালি কাজ করা জামা দেখলেও চেহারা বুঝতে পারেননি। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে এ মাসেই তাঁরা বোনের কবর পান। ফরহাদের লাশ পেয়েছিলেন ধসের ১০ দিন পর।
কুড়িগ্রাম থেকে ভাই শাহাদাত হোসেনের কবরে প্রার্থনা করার জন্য এসেছিলেন শফিউল আলম। শাহাদাত ও তাঁর স্ত্রী সেলিনা আক্তার দুজনই ওই ধসে নিহত হয়েছেন। তাঁদের সাত বছরের ছেলে শুভ এখন নানির কাছে বড় হচ্ছে।