কমিটির সদস্য নন, তবু সম্মানী পাবেন তাঁরা

এক দিনে ছয়টি প্রকল্পের ওপর পিএসসি বৈঠক ডাকা হয়েছে। প্রতিটি প্রকল্প থেকে আলাদা সম্মানী পাবেন বৈঠকে যোগদানকারী ব্যক্তিরা।

  • দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার বৈঠকে এসব প্রকল্পের সমস্যা নিয়ে আলোচনা হবে। অর্থাৎ একটি প্রকল্প নিয়ে গড়ে ২৫ মিনিট আলোচনা হবে।

  • পিএসসি কমিটির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দৈনন্দিন কাজে কেন সম্মানী নিতে হবে।

ফাইল ছবি

১৪ সদস্যের কমিটিতে প্রতিমন্ত্রীর একান্ত সচিবের (পিএস) নাম নেই। নাম নেই মন্ত্রণালয়ের সচিবের পিএসেরও। তবে কমিটির বৈঠকে তাঁদের সম্মানী দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুধু এই দুজন নন, আরও অন্তত ১৫ জন কর্মকর্তাকে সম্মানী দেওয়ার ব্যবস্থা করতে প্রকল্প পরিচালকদের (পিডি) চিঠি দিয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।

আজ বুধবার মন্ত্রণালয়ের প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) বৈঠক হওয়ার কথা। পিএসসির কাজ—প্রকল্পে সমস্যা আছে কি না, তা চিহ্নিত করে সমাধানের উপায় বলে দেওয়া। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি আছেন এতে। কমিটির চেয়ারপারসন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার।

মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর পিএস হেমন্ত হেনরী কুবি ও সচিবের পিএস নজরুল ইসলামের নাম নেই এই কমিটিতে। তবে এই দুজনকে তিন হাজার টাকা করে সম্মানীর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মন্ত্রণালয় থেকে পিডিদের কাছে পাঠানো চিঠি অনুযায়ী, প্রতিটি পিএসসি বৈঠকে সচিব পাবেন পাঁচ হাজার টাকা। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিনকে তিন হাজার টাকা ও অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মমতাজ উদ্দিনকে তিন হাজার টাকা করে সম্মানী দিতে পিডিদের বলা হয়েছে। এই অতিরিক্ত সচিব দুজনও কমিটির সদস্য নন।

সূত্র জানায়, আজকের পিএসসি বৈঠকে ছয়টি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হবে। প্রতিটি প্রকল্প থেকে তিন হাজার টাকা করে হেমন্ত হেনরী কুবি পাবেন ১৮ হাজার টাকা। নজরুল ইসলামও একই অঙ্কের টাকা পাবেন। এভাবে কমিটির সদস্যদের বাইরে ১৭ জনের প্রত্যেকে ন্যূনতম ১৮ হাজার টাকা করে পাবেন।

এ বিষয়ে জানতে কয়েকবার ফোন করা হলেও তা ধরেননি সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার। খুদে বার্তা পাঠালেও জবাব দেননি। পরে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। কমিটির সদস্য না হয়েও বৈঠকে থাকা ও সম্মানী নেওয়া প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জানতে চাইলে সাবেক সচিব মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সচিব যদি বৈঠক থেকে সম্মানী নেন, অধস্তনেরা তো নেবেনই। এটি একটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আগে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।’

পিএসসির প্রয়োজনীয়তা নিয়েই প্রশ্ন

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ছয়টি প্রকল্পের পিএসসি বৈঠক আজ ডেকেছে মন্ত্রণালয়। দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার বৈঠকে এসব প্রকল্পের সমস্যা নিয়ে আলোচনা হবে। অর্থাৎ একটি প্রকল্প নিয়ে গড়ে ২৫ মিনিট আলোচনা হবে। এ সময়ের মধ্যে প্রকল্পের সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের উপায় বলবেন কর্মকর্তারা।

গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের আওতায় চলছে ১০টি প্রকল্প। ২৪ এপ্রিল এই ১০টি প্রকল্পের ওপর পিএসসির বৈঠক ডাকা হয়েছে। দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার বৈঠক ধরলে প্রকল্পপ্রতি সময় পাওয়া যাবে ১৫ মিনিট।

তবে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিনের বক্তব্য, ‘যতটুকু সময় পাওয়া যাবে, সে সময়ের মধ্যে সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধানের পথ বের করা সম্ভব হবে। কোনো সমস্যা হবে না।’

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় চলমান সব প্রকল্পেই পিএসসি রয়েছে। তিন মাস পরপর কমিটির বৈঠক হওয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে এ কমিটির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দৈনন্দিন কাজে কেন সম্মানী নিতে হবে, সে প্রশ্ন পরিকল্পনা কমিশনের।

সরকারের উন্নয়ন প্রকল্প পাস হয়ে থাকে ‘সরকারি খাতে উন্নয়ন প্রকল্প প্রণয়ন, প্রক্রিয়াকরণ, অনুমোদন ও সংশোধন পদ্ধতি’র মাধ্যমে। পরিকল্পনা কমিশন এই নীতিমালা সংশোধন করছে।

পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) শরীফা খান বলেন, সরকারের প্রতিটি প্রকল্পের নজরদারি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) করে থাকে। মন্ত্রণালয় প্রতি মাসে পর্যালোচনা বৈঠক করে। পিএসসি সভার প্রয়োজন দেখি না।