কমিটি বিলুপ্তির সাড়ে ৩ ঘণ্টার মধ্যে হেফাজতের আহ্বায়ক কমিটি

হেফাজতে ইসলামের নতুন আহ্বায়ক কমিটির তিন সদস্য। (বাঁ থেকে) জুনায়েদ বাবুনগরী, মহিববুল্লাহ বাবুনগরী ও নুরুল ইসলাম জিহাদী
ছবি: সংগৃহীত

হেফাজতে ইসলামের সদ্য সাবেক আমির জুনায়েদ বাবুনগরীকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আহ্বায়ক কমিটির অন্য চারজন হলেন মহিববুল্লাহ বাবুনগরী, নুরুল ইসলাম জিহাদী, সালাউদ্দিন নানুপুরী ও মিজানুর রহমান চৌধুরী।

কমিটি বিলুপ্তির সাড়ে তিন ঘণ্টার মধ্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের তিন সদস্যের নতুন আহ্বায়ক কমিটি গতকাল রোববার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে ঘোষণা করা হয়। পরে আজ সোমবার ভোররাত চারটার দিকে জানানো হয়, সালাউদ্দিন নানুপুরী ও মিজানুর রহমান চৌধুরীকে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য করা হয়েছে।

মহিবুল্লাহ বাবুনগরী আগের কমিটির প্রধান উপদেষ্টা আর নুরুল ইসলাম মহাসচিব ছিলেন। মহিববুল্লাহ বাবুনগরী জুনায়েদ বাবুনগরীর মামা।

আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করে হেফাজত নেতা আহসান উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, আজ আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হিসেবে আরও কয়েকজনের নাম ঘোষণা করা হবে। আহ্বায়ক কমিটি কাউন্সিলের মাধ্যমে সারা দেশে নতুন কমিটি গঠন করবে।

এদিকে গতকাল রাত ১১টার দিকে এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে হেফাজতে ইসলামের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন জুনায়েদ বাবুনগরী। ওই সময় তিনি বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতির কারণে কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলো।

এ ঘোষণার পর হেফাজত ইসলামের আগের কমিটির যুগ্ম মহাসচিব (আহমদ শফীপন্থী) মঈনুদ্দীন রুহী বলেন, শিগগিরই তাঁরা আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করবেন। সেখানে বিতর্কিত ব্যক্তিদের বাদ দেওয়া হবে। বাবুনগরীকে আহ্বায়ক করে নতুন কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তাঁরা সিদ্ধান্ত জানাবেন। এটি কমিটি হয়নি।

গত বছরের ১৫ নভেম্বর জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির করে ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট হেফাজতের কমিটি ঘোষণা করা হয়। সেখানে হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানীর অনুসারী কাউকে রাখা হয়নি। এরপর থেকে তাঁরা এই কমিটিকে অবৈধ ঘোষণা করে নতুন কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়ে আসছেন।

গতকাল বিকেলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি’আতিল কওমিয়া বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কওমি মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের প্রচলিত সব ধরনের রাজনীতি থেকে মুক্ত থাকার ঘোষণা দেওয়া হয়। আল-হাইআতুলের অধীনেই কওমি মাদ্রাসার সর্বোচ্চ স্তর দাওরায়ে হাদিসের পরীক্ষা হয়। যাত্রাবাড়ীর একটি মাদ্রাসায় আল-হাইআতুলের স্থায়ী কমিটির সভায় ছাত্র-শিক্ষকদের রাজনীতির বাইরে থাকার ওই সিদ্ধান্ত হয়। তাঁদের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে গিয়ে এ সিদ্ধান্ত জানাবে বলেও ঠিক হয়।

গত মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ-সহিংসতার পর হেফাজতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। বিক্ষোভ-সহিংসতার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন জেলায় হেফাজতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অন্তত ৭৯টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৬৯ হাজারের বেশি জনকে আসামি করা হয়েছে।
এসব মামলায় প্রতিদিনই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা গ্রেপ্তার হচ্ছেন। এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত সংগঠনটির কেন্দ্রীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ১৯ জন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্রিক সংগঠনটির কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দিলেন বাবুনগরী।

গণজাগরণ মঞ্চের বিরোধিতা করে ২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশ-সহিংসতা করে আলোচনায় আসে হেফাজতে ইসলাম। কয়েক মাস আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতায় নেমেছিল সংগঠনটি। এরপর গত মাসে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এলে তাঁর সফরের বিরোধিতা করে তারা।

মোদির সফরের বিরোধিতাকে কেন্দ্র করে গত ২৬ থেকে ২৮ মার্চ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা হয়। এ সময় সংঘাত-সহিংসতায় সরকারি হিসাবে ১৭ জন নিহত হন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। চট্টগ্রামের হাটহাজারীসহ দেশের অন্যান্য স্থানে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করা হয়।

এ ঘটনার রেশ যেতে না যেতেই ৩ এপ্রিল হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে একটি রিসোর্টে দ্বিতীয় স্ত্রীসহ ঘেরাওয়ের মুখে পড়েন। হেফাজতের নেতা-কর্মীরা সেখানে হামলা চালিয়ে মামুনুলকে ছিনিয়ে নেন। মূলত, এরপর থেকে হেফাজতের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা দৃশ্যমান হয়। ১১ এপ্রিল হেফাজতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর হেফাজতের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের ধারাবাহিকতায় ১৮ এপ্রিল আলোচিত মামুনুল হককে ধরা হয়।