করোনা সংক্রমিতদের আইসোলেশন ৫-৭ দিন করা হবে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
করোনা সংক্রমিতদের আইসোলেশন ১০ দিনের পরিবর্তে ৫ থেকে ৭ দিন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি জানিয়েছেন, খুব শিগগির স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নতুন আইসোলেশন নীতির এ ঘোষণা দেবে।
আজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমসিএ) আয়োজিত এক ভার্চ্যুয়াল মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন। করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় আইসোলেশন ১৪ দিন ছিল।
‘কোভিড-১৯-এর নতুন ধরন অমিক্রনের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মোকাবিলায় বেসরকারি হাসপাতালগুলোর প্রস্তুতি’ শিরোনামে এই মতবিনিময় সভায় রাজধানীর বেসরকারি হাসপাতাল এভারকেয়ারের পরিচালক (মেডিকেল) আরিফ মাহমুদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, কোভিড আক্রান্তদের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ দিনের আইসোলেশনের নতুন নীতিমালা করা হয়েছে। কারণ, এ সময়ে চিকিৎসক, নার্সসহ হাসপাতালের জনবলও ব্যাপক হারে আক্রান্ত হওয়ায় তাঁদের দীর্ঘ সময় অনুপস্থিত থাকতে হচ্ছে। এতে সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া বেসরকারী হাসপাতালে র্যাপিড আরটি পিসিআরের অনুমতি এবং আক্রান্ত ব্যক্তিরা যেন যত্রতত্র জায়গা থেকে ওষুধ কিনে না খান, সে জন্য একটি চিকিৎসা নীতিমালা তৈরির অনুরোধ জানান তিনি।
জবাবে মন্ত্রী বলেন, আইসোলেশন নীতি নিয়ে ইতিমধ্যে সরকার আলোচনা করেছে। খুব শিগগির পাঁচ থেকে সাত দিন আইসোলেশনে থাকার ঘোষণা আসবে। এ ছাড়া সরকার নতুন চিকিৎসা নীতিমালাও তৈরি করবে।
বেসরকারি হাসপাতালগুলোর প্রস্তুতি সম্পর্কে বিপিএমসিএর সভাপতি এম এ মুবিন খান বলেন, অমিক্রনের ভয়াবহতা এখন সারা বিশ্বে। কোভিডের প্রথম ঢেউ-এর সময় যেভাবে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলো সম্মিলিতভাবে কাজ করেছিল, এবারও সেভাবে মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে অমিক্রন ডেলটা ধরনের চেয়ে কম গুরুতর হলেও অতি বিপজ্জনক ভাইরাস।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত বেসরকারি হাসপাতালগুলোর অন্য প্রতিনিধিরা জানান, শয্যা, আইসিইউ, অক্সিজেন, প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও নার্স নিয়ে অমিক্রন মোকাবিলায় তারা সম্পূর্ণ প্রস্তুত রয়েছেন । সংক্রমণ কমে যাওয়ায় শয্যা সংখ্যা কমানো হয়েছিল, প্রয়োজনে তা আবারও বাড়ানো হবে। এই মুহূর্তে সংক্রমণ বেশি হলেও রোগীরা হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র নিয়ে চলে যাচ্ছেন। অনেকে টেলি মেডিসিন সেবা নিচ্ছেন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সংখ্যা খুবই কম।
করোনা সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশের টিকা নেওয়া ছিল না বলে মতবিনিময় সভায় জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ১৭ থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ৭৯ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ৫১ জনের টিকা নেওয়া ছিল না।
বাকি ২৮ জনের টিকা নেওয়া ছিল। শতাংশের হিসাবে যা ৩৫ শতাংশ। ওই ২৮ জনের মধ্যে টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন ৬ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন করেছিলেন ২২ জন। তিনি জানান, সরকার ৩১ কোটি টিকা কিনেছে। এর মধ্যে হাতে এসে পৌঁছেছে ২৪-২৫ কোটি টিকা। সাড়ে ১৫ কোটি টিকা ব্যবহার হয়েছে। প্রথম ডোজ পেয়েছে সোয়া ৯ কোটি মানুষ। আর দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে ৬ কোটি মানুষ। ১ কোটি ২৫ লাখ স্কুলশিক্ষার্থীকে টিকা দেওয়া হয়েছে। তবে পরিবহন, শিল্পকারখানা এবং দোকানপাটে কর্মরত রয়েছেন এমন ব্যক্তিদের মধ্যে ৩ কোটিকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সরকারের। টিকা না দিলে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না—এমন নীতি নিয়ে ওই ব্যক্তিদের টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক করার কথা ভাবছে সরকার।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯-এর অমিক্রন ধরন চার গুণ বেশি সংক্রমণ ছড়ায়। তবে তৃতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণের তুলনায় মৃত্যু কম। গতকাল সোমবার সংক্রমণের হার ছিল ৩২ শতাংশ। মৃত্যুহার ১ দশমিক ৬ শতাংশ। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কম। এই সময়ে টেলিমেডিসিন সেবায় বেশি জোর দেওয়া দরকার। হাসপাতালের বহির্বিভাগের চিকিৎসাসেবাকে শক্তিশালী করা দরকার। সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। গত বছরের ডিসেম্বরে সংক্রমণ ১ শতাংশে নেমে এসেছিল। ওই সময় লোকজনকে ব্যাপক হারে পর্যটনকেন্দ্রে ঘোরাঘুরি, বিয়ের অনুষ্ঠান করতে দেখা গেছে। মাস্ক পরাও কমে গিয়েছিল। লোকজনের মধ্যে আত্মবিশ্বাস চলে এসেছিল যে করোনা চলে গেছে।
শুরুর চেয়ে করোনা মোকাবিলায় দেশ এখন অনেক ভালো অবস্থায় আছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন লাইন আছে। লিকুইড অক্সিজেন আছে। ৮৫০টি পরীক্ষাকেন্দ্র আছে।
মতবিনিময় সভায় উপস্থিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেন, এখন হাসপাতালগুলো যন্ত্রপাতিতে সুসজ্জিত। জনবলও প্রশিক্ষিত ও আত্মবিশ্বাসী। এবারও সম্মিলিত উদ্যোগে তৃতীয় ঢেউ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন বিপিএমসিএর সভাপতি এম এ মুবিন খান। সভায় বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম এনায়েত হোসেন, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব সাইফুল ইসলাম, স্বাস্থ্য বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল) নাজমুল হক খান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) আহমেদুল কবির। এ ছাড়া আরও বক্তব্য দেন বিপিএমসিএর সাধারণ সম্পাদক সাংসদ আনোয়ার হোসেন খান, সংগঠনের সহসভাপতি মাঈনুল আহসান, সাবেক সভাপতি মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, পপুলার মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান, ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান প্রীতি চক্রবর্তী, টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা বেগম, সিলেটের নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আফজাল মিয়া, রংপুর কমিউনিটি মেডিকেল কলেজের চেয়ারম্যান নীলু আহসান, খুলনার গাজী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কর্ণধার গাজী মিজানুর রহমান এবং চট্টগ্রামের মা ও শিশু হাসপাতালের ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোহাম্মদ মোরশেদ হোসেন।