‘করোনাকালে বাংলাদেশের সঙ্গে তুরস্কের বাণিজ্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক’

সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত ‘সিলেটে বিনিয়োগের সুবিধাবলি’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। শুক্রবার রাতে নগরীর একটি রেস্তোরাঁর সম্মেলনকক্ষে
ছবি : প্রথম আলো

বাংলাদেশের সঙ্গে তুরস্কের বাণিজ্যিক সম্পর্ক করোনা মহামারির মধ্যেও খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তাফা ওসমান তুরান।

বাংলাদেশে নিযুক্ত এই রাষ্ট্রদূত বলেন, করোনার কঠিন সময়েও দুই দেশের মধ্যে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে, যা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। বর্তমানে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ বিরাজ করায় তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।

শুক্রবার রাতে সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি আয়োজিত ‘সিলেটে বিনিয়োগের সুবিধাবলি’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় তুরস্কের রাষ্ট্রদূত এসব কথা বলেন।

সিলেট নগরীর মির্জাজাঙ্গাল এলাকার একটি রেস্তোরাঁর সম্মেলনকক্ষে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

‘গেস্ট অব অনার’ হিসেবে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত ছাড়াও টার্কিশ কো-অপারেশন অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন এজেন্সির ডেপুটি কো-অর্ডিনেটর আহমেদ ফারুক মোস্তাগ্লু, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, তুরস্কের অনারারি কনসাল জেনারেল সালাউদ্দিন কাশেম খান বক্তব্য দেন।

সিলেট চেম্বারের সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েবের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক যথেষ্ট শক্তিশালী। এ সম্পর্ক আরও বৃদ্ধির জন্য তুরস্কের বর্তমান সরকার যথেষ্ট আগ্রহী। এ ব্যাপারে তুরস্ক দূতাবাস ও আমাদের আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে।

ইতিহাস, ঐতিহ্য ও ধর্মীয় বিশ্বাসের মিল থাকায় তুরস্ক বাংলাদেশের মানুষের কাছে অত্যন্ত সুপরিচিত একটি দেশ। অনেক বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রী স্কলারশিপ নিয়ে তুরস্কে লেখাপড়া করতে যান। বাংলাদেশের জন্য এ স্কলারশিপ বৃদ্ধি করতে তুরস্ক সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

‘সিলেটে বিনিয়োগের সুবিধাবলি’ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তুরস্ক কনস্ট্রাকশনের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু বাংলাদেশে তুরস্ক কনস্ট্রাকশন সেক্টরে কোনো কাজ করে না।

বাংলাদেশের কনস্ট্রাকশন সেক্টর, কমিউনিকেশন সেক্টর এবং রিনিউয়েবল এনার্জি সেক্টরে তুরস্কের প্রযুক্তিগত সহযোগিতা প্রয়োজন। তুরস্ক কৃষি, পর্যটন, স্বাস্থ্য ইত্যাদি খাতে অনেক উন্নত। বাংলাদেশেও এসব খাতে তুরস্ক বিনিয়োগ করতে পারে। বিশেষ করে সিলেট সিটি করপোরেশনের সহযোগিতা নিয়ে তুরস্ক সিলেটে একটি আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল স্থাপন করতে পারে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের বিপরীতে রিটার্ন অনেক বেশি হয়ে থাকে, তাই তুরস্কের বিনিয়োগকারীরা এই সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন।

‘বাংলাদেশ আমাদের কাছে ভ্রাতৃপ্রতিম’ উল্লেখ করে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তাফা ওসমান তুরান বলেন, ‘আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কৃতি একই রকম। বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্ককে নিয়ে কবিতা রচনা করেছেন। এসব বিষয় আমাদের কাছে অত্যন্ত আবেগের। তাই আমরা বাংলাদেশের জন্য মন থেকে কাজ করি।’

সিলেটের জন্য অন্য রকম ভালোবাসা রয়েছে জানিয়ে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, ভবিষ্যতে সিলেটে বিনিয়োগের পরিকল্পনা তুরস্কের রয়েছে। মতবিনিময় সভার আগে সিলেট সিটি মেয়রের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের বিষয়টি তুলে ধরেন তিনি।

মতবিনিময় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদালয়ের অধ্যাপক এম ইকবাল, সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আনোয়ার সাদাত, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল সায়েন্টিফিক অফিসার মাহমুদুল ইসলাম, প্রাইভেট হসপিটাল মালিক সমিতির সভাপতি নাসিম আহমেদ, সিলেট চেম্বারের নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুল জলিল জব্বার, সিলেট চেম্বারের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি চন্দন সাহা।