করোনার টিকা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছানো নিয়ে শঙ্কা

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
ফাইল ছবি

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকার যে টিকা আনছে, তা সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে পৌঁছাবে কি না, সে বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনেরা। এ ছাড়া টিকা সরবরাহ বেসরকারি খাতের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথাও বলছেন তাঁরা।

আজ রোববার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘কোভিড-১৯ টিকা বাংলাদেশে কে, কখন, কীভাবে পাবে?’ শীর্ষক ভার্চ্যুয়াল সংলাপে এসব কথা উঠে আসে।

নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, টিকাপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলো বঞ্চিত থাকবে বলে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আশঙ্কা করছে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের এখন যে আর্থসামাজিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক পরিবেশ ও গণতন্ত্রের যে অনুশীলন, তাতে পিছিয়ে পড়া মানুষগুলো অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চিত থাকার বিষয়ে সংশয় থাকে। একদিকে আমরা বলব টিকাকে বৈশ্বিক গণপণ্য হিসেবে দেখতে হবে, আবার দেশের ভেতরে আমরা বৈষম্য করব, এটা দ্বিচারণ।’

সরকারের টিকা কেনার বিষয়ে দেবপ্রিয় বলেন, সরকার টিকা নিয়ে একটি জাতীয় পরিকল্পনা করেছে। তিন কোটি টিকা কেনার পদক্ষেপ নিয়েছে। যেটার দাম পড়ে চার ডলার, সেটা পাঁচ ডলারে কিনতে চলেছে সরকার। অক্সফোর্ডের টিকা যেটা ভারতের সেরাম প্রস্তুত করছে, সেটা বাংলাদেশ সরকার আনছে।

বাংলাদেশের এখন যে আর্থসামাজিক পরিস্থিতি, রাজনৈতিক পরিবেশ ও গণতন্ত্রের যে অনুশীলন, তাতে পিছিয়ে পড়া মানুষগুলো অনেক ক্ষেত্রে বঞ্চিত থাকার বিষয়ে সংশয় থাকে। একদিকে আমরা বলব টিকাকে বৈশ্বিক গণপণ্য হিসেবে দেখতে হবে, আবার দেশের ভেতরে আমরা বৈষম্য করব, এটা দ্বিচারণ।
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বিশেষ ফেলো, সিপিডি

সিপিডির সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান করোনার সময়কার বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিয়ে নানা অসংগতির কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গত ৯ মাসের অভিজ্ঞতার আলোকে সরকারকে টিকা কার্যক্রম চালাতে হবে। বাংলাদেশের ওষুধ কোম্পানিগুলো ফ্র্যাঞ্চাইজি হিসেবে কোনো টিকা এনে তৈরি করতে পারে কি না, সে বিষয় দেখতে হবে।

টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে যেসব ঝুঁকি আছে, তা বিবেচনায় নিয়েই টিকা গ্রহণ করার কথা বলেন আইসিডিডিআরবির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিকাবিষয়ক বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ফেরদৌসী কাদরী। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ কমছে না, বাড়ছে। সব টিকাতেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। এসব ক্ষেত্রে নজর দিতে হবে। টিকা চলে এলেও মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

ভার্চ্যুয়াল সংলাপে অণুজীববিজ্ঞানী বিজন কুমার শীল টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের কাছে দুটি সুপারিশ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, টিকা দেওয়ার আগে যাকে দেওয়া হবে, তিনি যোগ্য কি না, তা বৈজ্ঞানিকভাবে পরীক্ষা করা করতে হবে। এ ছাড়া টিকা দেওয়ার পর তা কাজ করেছে কি না, তা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।

বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের আহ্বায়ক আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরী এক উপস্থাপনায় বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি তুলে ধরেন। টিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশে টিকা সংরক্ষণের জন্য যথেষ্ট সুবিধা আছে কি না, টিকার ব্যবস্থাপনা ও দাম নির্ধারণ কেমন হবে, সেসব বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে।

ক্ষমতাবানরাই টিকা প্রথম পাবে বলে উল্লেখ করেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি রশীদ ই মাহবুব। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে টিকা নিয়েও বিশৃঙ্খলা ও দুর্বৃত্তায়ন হবে। সবার টিকা দরকার আছে কি না, সেটা নিয়েও ভাবতে হবে।

বাংলাদেশে টিকা সংরক্ষণের জন্য যথেষ্ট সুবিধা আছে কি না, টিকার ব্যবস্থাপনা ও দাম নির্ধারণ কেমন হবে, সেসব বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে
আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরী,আহ্বায়ক, বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ

টিকা আনার ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকে সুযোগ করে দেওয়ার কথা বলেন রশীদ ই মাহবুব। সেখানে সরকারের একটা নীতি থাকার কথাও বলেন তিনি।

সংলাপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রুমানা হক টিকার কার্যকারিতা, ডোজ, সংরক্ষণ ও টিকা কেনার বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন। টিকা কেনার ক্ষেত্রে একটি প্রতিষ্ঠানের ওপর নির্ভর না করার আহ্বান জানান তিনি। এ ছাড়া টিকা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার বলেও মন্তব্য করেন রুমানা হক।

ভার্চ্যুয়াল সংলাপে আরও বক্তব্য দেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক সানিয়া তাহমিনা প্রমুখ।