২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

দেশে করোনার হটস্পট নিয়ন্ত্রণ কখনোই সম্ভব হয়নি, মন্তব্য বিশেষজ্ঞদের

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাভাইরাসের উৎস ও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যর্থ। করোনার হটস্পট নিয়ন্ত্রণ কখনোই সম্ভব হয়নি। এ কারণে শহর থেকে গ্রামে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে। গ্রামের চেয়ে শহরে সংক্রমণ বেশি হয়, যা নিয়ন্ত্রণে দৃশ্যমান জোরালো উদ্যোগ কম। তবে উদ্যোগ নেওয়া হলে গ্রামের সংক্রমণ কমানো যায়, সে উদাহরণ আছে।


‘করোনাভাইরাস-সহিষ্ণু গ্রাম সৃষ্টির অভিজ্ঞতা বিনিময় সভা’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে সোমবার আলোচকেরা এসব কথা বলেন। দি হাঙ্গার প্রজেক্ট এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাস্ক পরা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সামাজিকভাবে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

ওয়েবিনার থেকে বলা হয়, দি হাঙ্গার প্রজেক্টের করোনাভাইরাস-সহিষ্ণু গ্রাম প্রকল্পের মাধ্যমে ১২৯টি ইউনিয়নের ১ হাজার ২০০ গ্রামে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়। স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে এসব গ্রামে প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন, করোনা পরীক্ষা, মাইকিং প্রচারণাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তুলনামূলক চিত্রে এসব ইউনিয়নে পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের চেয়ে করোনা সংক্রমণ কম বলে পর্যবেক্ষণে এসেছে।
ভাইরাস বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের উৎস নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের ব্যর্থতা অনেক। এ নিয়ে কাজই হয়নি। এই ভাইরাস এসেছে দেশের বাইরে থেকে। এটি গ্রামের চেয়ে শহরে বেশি ছড়াচ্ছে। তাই করোনা নিয়ন্ত্রণে শহরে বেশি নজর দিতে হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা মোজাহেরুল হক বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে হাঙ্গারের উদ্যোগটি পথপ্রদর্শক হতে পারে। এভাবে জনসম্পৃক্ত উদ্যোগ নেওয়া হলে বাংলাদেশ একদিন করোনা নিয়ন্ত্রণে সফল হবে।
জনস্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, সমাজকে একত্র করে, সচেতন করে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় এগোতে হবে। তবে শহরের ব্যবস্থা গ্রামের চেয়ে ভিন্ন। সরকারকে জানানো হলে ছোট শহর এলাকাতেও জনগণকে সম্পৃক্ত করে এমন উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।

জনগণকে সচেতন ও সম্পৃক্ত করা না গেলে করোনার বিরুদ্ধে জয়ী হওয়া কঠিন বলে মনে করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক বে-নজির আহমেদ। তিনি বলেন, দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ঘাটতি দেখা গেছে, প্রশাসনিক সিদ্ধান্তে দুর্বলতা দেখা গেছে। তাই সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
আইইডিসিআরের উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন বলেন, কমিউনিটিকে সম্পৃক্ত করা না গেলে পুলিশি ব্যবস্থা দিয়ে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না। মানুষ যদি নিজেরাই নিজেদের দায়িত্ব পালন করে, তাহলে করোনা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। জনস্বাস্থ্যের বিষয় কিন্তু সেটাই। হাঙ্গার প্রজেক্টের উদ্যোগে গ্রামে করোনা নিয়ন্ত্রণের এই উদাহরণ শহরেও করা যেতে পারে।

দি হাঙ্গার প্রজেক্টের এদেশীয় পরিচালক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বর্তমান বাস্তবতা হচ্ছে, করোনার হটস্পট নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সফল হয়নি। ফলে সারা দেশে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে করোনা ছড়িয়েছে। এখন কমিউনিটি পর্যায়ে করোনার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তিনি বলেন, এই ভাইরাসের কোনো স্বীকৃত চিকিৎসা নেই, দ্রুত ভ্যাকসিন আসবে, তা–ও অনিশ্চিত। এ জন্য সবাইকে আরও সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, মানুষকে সচেতন করা এবং জনসম্পৃক্ততা করা—এই দুটি জিনিস খুব গুরুত্বপূর্ণ। সচেতনতা তৈরি করতে মসজিদের ইমাম, জনপ্রতিনিধি, অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোকে যুক্ত করতে হবে। পাশাপাশি তরুণদেরও যুক্ত করতে হবে।
ওয়েবিনারে আরও বক্তব্য দেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শক তৌফিক জোয়ার্দার, এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক রাশেদুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. আবদুর রহমান প্রমুখ।