কাটুই পোকা খেয়ে ফেলছে সব

সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার (আংশিক) চলনবিলের গোচারণভূমি এলাকায় প্রায় ২০ দিন ধরে কাটুই পোকার ব্যাপক আক্রমণ শুরু হয়েছে। এই পোকা হাজার হাজার বিঘা জমির সদ্য বপন করা মাষকলাই, সব ধরনের ঘাসের কাণ্ডসহ পাতা খেয়ে ফেলছে।
কীটনাশক প্রয়োগ করেও পোকা দমন করতে না পেরে কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। ফলে এবার গোখাদ্যের সংকট তীব্র আকার ধারণ করবে আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।
শাহজাদপুর কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মঞ্জু আলম সরকার বলেন, বন্যার পানি নিমজ্জিত হওয়া জমিগুলোতে এই পোকার আক্রমণ হয়ে থাকে। পানি নেমে যাওয়ার পর লার্ভা থেকে পোকার জন্ম হচ্ছে। এগুলো দিনের বেলায় গর্তের মধ্যে থাকে, রাতে বের হয়ে পাতা খেয়ে ফেলে। পোকা দমনে কৃষকদের সচেতন করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় প্রচারপত্র বিলিসহ ওষুধ প্রয়োগের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিষয়টি জানিয়ে গাজীপুর কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের কীটপতঙ্গ বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার কাছে একটি পর্যবেক্ষক দল চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে স্থানীয়ভাবে তদারকির জন্য চার সদস্যের দল গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া সামনে সরিষার আবাদ হবে। এতেও পোকার আক্রমণ হতে পারে। তাই দানাদার ফুরাডান নামের কীটনাশক মাটির সঙ্গে মিশিয়ে জমিতে ছিটানোর পর ফসল রোপণ করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক ওমর আলী শেখ বলেন, সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষি কর্মকর্তাসহ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সরেজমিনে গিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে কোনো কর্মকর্তার গাফিলতির প্রমাণ পেলে তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় কৃষক ও কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলনবিল এলাকার সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, তাড়াশ ও উল্লাপাড়া এবং পাবনার সাঁথিয়া ও ফরিদপুর উপজেলার প্রায় ২০ হাজার একর পতিত জমিতে গরুর খাদ্যের জন্য মাষকলাই, নেপিয়ার ও জাম্বু ঘাসের আবাদ করা হয়। বিশেষ করে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরপরই বিনা চাষে জন্মানো দূর্বা ঘাসের মধ্যে কৃষকেরা এই আবাদ করেন। মাষকলাই ও ঘাসগুলো গবাদিপশুর পুষ্টির চাহিদা মেটাতে উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ আঁশজাতীয় কাঁচা খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ২০ দিন ধরে মাষকলাই ও ঘাসগুলো বেড়ে ওঠার পর কাটুই পোকা খেয়ে ফেলছে। বেশির ভাগ জমির ঘাস ও মাষকলাই পোকা খেয়ে ফেলায় গাছ মরে যাচ্ছে। পোকা দমন ও চাষাবাদের নিয়ম উল্লেখ করে কৃষি বিভাগ থেকে বিভিন্ন এলাকায় প্রচারপত্রও বিলি করা হচ্ছে।
গত সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, শাহজাদপুর উপজেলার গোচারণভূমি এলাকার পোতাজিয়া ইউনিয়নের রেশমবাড়ী এলাকায় কাটুই বা বর্ষ পোকা পুরো এলাকার সব জমিতে ছড়িয়ে পড়েছে। পোকাগুলো মাষকলাই ও ঘাসের পাতায় পাতায় বিচরণ করছে এবং পাতা খাচ্ছে। এর ফলে বেশির ভাগ জমির ঘাস ও মাষকলাই মরেও গেছে। কীটনাশক প্রয়োগ করায় হাজার হাজার পোকা মরে স্তূপ হয়ে আছে।
রেশমবাড়ী গ্রামের গোখামার মালিক ও কৃষক আবদুস সামাদ ফকির বলেন, স্থানীয়ভাবে এই পোকা বর্ষা পোকা হিসেবে পরিচিত। দুই বছর ধরে এই পোকার উপদ্রব বেড়েছে। গত বছর পোকার সংখ্যা কম হলেও এ বছর ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। পোকাগুলো ফেটে থাকা জমি ও মাটির গর্তের মধ্যে বসবাস করছে। এখান থেকে বের হয়ে দুই দিনের মধ্যে দূর্বা ঘাসসহ মাষকলাইয়ের পাতা খেয়ে ফেলছে। এতে ব্যাপকভাবে গবাদিপশুর খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। প্রায় একই ধরনের কথঅ বলেন একই গ্রামের খামার মালিক আবুল হোসেন, কৃষক আবদুল মোতালেবসহ ১৫–১৬জন।
ফরিদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রোকনুজ্জামান বলেন, ‘আমার এলাকায় পতিত জমিতে দূর্বা ঘাসের ওপর আক্রমণ হয়েছে। এই পোকা জমি থেকে রাস্তায় উঠে পড়েছে। সামনে সরিষার আবাদ শুরু হবে। সে কারণে আগে থেকেই পোকা দমনের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবদুল হাই বলেন, এলাকায় তিন শতাধিক বাথান রয়েছে। এসব বাথানে প্রায় সাড়ে তিন লাখ গবাদিপশু এবং উন্নত জাতের গাভি রয়েছে। বর্ষার পর এই ঘাসগুলো গাভির পুষ্টির চাহিদা মেটানোর জন্য আঁশজাতীয় উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ কাঁচা খাবার হিসেবে খাওয়ানো হয়ে থাকে। যে কারণে দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এই অবস্থায় এবার গবাদিপশুর খাদ্যে ঘাটতি দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।