কাদের মোল্লার যত অপরাধ
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণের ছয়টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
পল্লব হত্যাকাণ্ড: মুক্তিযুদ্ধকালে কাদের মোল্লার নির্দেশে তাঁর সহযোগীরা রাজধানীর মিরপুর বাঙলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে আটক করে মিরপুর ১২ নম্বর থেকে ১ নম্বরে শাহ আলী মাজার পর্যন্ত টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়। সেখান থেকে তাঁকে আবার টানতে টানতে ১২ নম্বরের ঈদগাহ মাঠে নিয়ে একটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়। কাদের মোল্লার সহচর আখতার একাত্তরের ৫ এপ্রিল পল্লবকে গুলি করে হত্যা করেন। এই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কাদের মোল্লাকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছিলেন ট্রাইব্যুনাল-২।
মা-ভাইসহ কবি মেহেরুননিসা হত্যাকাণ্ড: একাত্তরের ২৭ মার্চ কাদের মোল্লা তাঁর সহযোগীদের নিয়ে মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনে কবি মেহেরুননিসার বাসায় যান। সেখানে তাঁরা মেহেরুননিসা, তাঁর মা এবং দুই ভাইকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। এর দায়ে কাদের মোল্লাকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেব হত্যাকাণ্ড: একাত্তরের ২৯ মার্চ বিকেলে সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেবকে মিরপুর ১০ নম্বর সেকশনের বাসস্ট্যান্ড থেকে আটক করেন কাদের মোল্লা ও তাঁর সহযোগী আলবদর-রাজাকাররা। আবু তালেবকে জল্লাদখানা পাম্পহাউসে নিয়ে জবাই করে হত্যা করা হয়। এর দায়ে কাদের মোল্লাকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
ঘাটার চর ও ভাওয়াল খানবাড়ি হত্যাকাণ্ড: একাত্তরের ২৫ নভেম্বর সকালে কাদের মোল্লা ৬০-৭০ জন রাজাকার নিয়ে ঢাকার কেরানীগঞ্জের ভাওয়াল খানবাড়ি এবং ঘাটার চরে (বর্তমানে শহীদনগর) হামলা চালিয়ে নিরস্ত্র শতাধিক গ্রামবাসীকে হত্যা করেন। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগ কাদের মোল্লা প্রমাণ করতে রাষ্ট্রপক্ষ ব্যর্থ হওয়ায় তাঁকে খালাস দেন ট্রাইব্যুনাল। তবে আপিল বিভাগ এই অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠ (৪:১) মতে কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
আলুব্দীতে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ: একাত্তরের ২৪ এপ্রিল মিরপুরের পল্লবী থানার আলুব্দী (আলোকদী) গ্রামে পাকিস্তানি সেনা, অর্ধশতাধিক অবাঙালি ও রাজাকার নিয়ে কাদের মোল্লা যৌথ হামলা চালান। হামলাকারী বাহিনীর এলোপাতাড়ি গুলিতে ৩৪৪ জনের বেশি গ্রামবাসী মারা যান। এই হত্যায় জড়িত থাকার দায়ে কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল।
হযরত আলী লস্করসহ পাঁচজনকে হত্যা, ধর্ষণ: একাত্তরের ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় কাদের মোল্লা, তাঁর সহযোগী কয়েকজন অবাঙালি ও পাকিস্তানি সেনা মিরপুরের ১২ নম্বর সেকশনে হযরত আলী লস্করের বাসায় যায়। কাদের মোল্লার নির্দেশে হযরত আলীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর হযরত আলীর স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই বছরের এক ছেলেকে হত্যা করা হয়। কাদের মোল্লা ১২ সহযোগী মিলে হযরত আলীর ১১ বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করে। এই অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। আপিল বিভাগ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া এ সাজা বাড়িয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ (৪:১) মতে কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। ট্রাইব্যুনালের বাকি সাজা অপরিবর্তিত রাখেন আপিল বিভাগ।