কারও পৌষ মাস কারও সর্বনাশ

চলতি মৌসুমে আলুর দাম বেড়ে যাওয়ায় তারাগঞ্জের চাষিদের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। দাম ভালো পাওয়ায় অনেক চাষি খেতেই আলু বিক্রি করে দিচ্ছেন। চাষিদের এ রকম সুদিনে অবশ্য বিপাকে পড়েছেন হিমাগারের মালিকেরা। তাঁরা হিমাগারে আলু সংরক্ষণে চাষিদের উৎসাহিত করতে বস্তাপ্রতি ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা করে ঋণ দিচ্ছেন।

মেনানগর গ্রামের আলুচাষি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘মুই দুই বছর আগোত ৩৫ হাজার টাকা খরচ করি ৬৩ শতক জমিত গ্রানুলা সাদা জাতের আলু নাগাছনু। আলু হছলো ৫০ বস্তা (৮৪ কেজিতে ১ বস্তা)। মোর বড় ভাইয়ের পরামর্শ শুনি ওইবার বেশি টাকা লাভের লোভে মুই সেই আলু কোল্ডস্টোরোত থুচনুং। আলুর দাম কমি যাওয়ায় মুই কোল্ডস্টোর থাকি আলু তোলোং নাই। কোল্ডস্টোরের মালিক ওই আলু ৫ টাকা কেজি দরে বেচে ওমার ভাড়ার টাকা শোধ করি নিছে। এই জন্যে মুই এবার জমিতে ১১ টাকা কেজি দরে ৯০ শতক জমির কার্ডিনাল (লাল) জাতের ১১০ বস্তা আলু বেচে দিছুং।’

প্রামাণিকপাড়া গ্রামের কৃষক জিয়াউর রহমান বলেন, ‘তিন বছর আগোত কোল্ডস্টোরে আলু থুবার জায়গা না পেয়া ২ একর জমিত ১৯০ বস্তা আলু কম দামোত বেচে দিয়া লস খাছুং। এই জন্যে রাগ হয়া দুই বছর আলুর আবাদ না করি তামাকের আবাদ করছুং। এইবার ৯৭ শতক জমিত শিলবিলাতি আলু গাড়ছুং। ফলনও ভালো হইচে। ওই আলু কোল্ডস্টোরোত থুবার জন্যে মোর পাছে পাছে কোল্ডস্টোরের লোক ঘোরেছে। ৭০০ করি টাকা ঋণও দিবার চায়ছে।’

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ৮ হাজার ৮২ একর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে। চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে বাজারে আলুর দাম তুলনামূলক বেশি। খেতেই প্রতি কেজি গ্রানুলা (সাদা) জাতের আলু ৭-৮ টাকা, কার্ডিনাল (লাল) জাতের আলু ১০-১১ টাকা শিলবিলাতি, ঝাউ, এন্দুরকানি আলু ২০-২২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। দাম ভালো পেয়ে কৃষকেরা আলু খেতেই পাইকারদের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এ অবস্থায় হিমাগার খালি পড়ে থাকার আশঙ্কায় হিমাগার কর্তৃপক্ষ আলুচাষিদের পেছনে ধরনা দিচ্ছেন। তাঁরা ভাড়া কম নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বস্তাপ্রতি আগাম ৫০০ টাকা করেও ঋণ দিচ্ছেন চাষিদের।

এদিকে সিনহা হিমাগারের ম্যানেজার দুলাল হোসেন বলেন, ‘আগে চাষিরা হিমাগারে আলু রাখার স্লিপের জন্য আমাদের কাছে এসে ধরনা দিত। কিন্তু এখন আমাদেরই চাষিদের কাছে যেতে হচ্ছে। ঋণও আগাম দিতে হচ্ছে।’