কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই: প্রধানমন্ত্রী

চলমান বন্যা পরিস্থিতি এবং আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন
ছবি: পিআইডি

পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়া এবং দেশে যারা বিরোধিতা করেছে, তাদের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সময় বলে দেবে তিনি কী করবেন। তবে কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই বলেও তিনি জানিয়েছেন।

আজ বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শাপলা হলে চলমান বন্যা পরিস্থিতি এবং ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মোহনা টিভির সাংবাদিক এফ এম মুশফিকুর রহমান বলেন, পৃথিবীতে এখন পদ্মা সেতুর কথা বলা হচ্ছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে সবচেয়ে বড় অর্জন পদ্মা সেতু। যদি কেউ দেশদ্রোহিতা করে, তবে তাকে আইনের আওতায় আনা হয়। পদ্মা সেতুর বিষয়ে যারা ষড়যন্ত্র করল, নানাভাবে দেশকে কথিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযুক্ত করল, তাদের বিরুদ্ধে কেন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না? পাশাপাশি সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনকে ফিরিয়ে আনা হবে কি না, এমন প্রশ্নও করেন তিনি।

এ প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সময় বলে দেবে কী করব।’

জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বন্যাদুর্গত এলাকা প্রধানমন্ত্রী পরিদর্শন করায় ও বন্যাদুর্গতদের তাৎক্ষণিক সাহায্যের নির্দেশ দেওয়ায় তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দুটি প্রশ্ন রাখেন। একটি যে বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি প্রত্যাহার করেছে, তাদের প্রতিক্রিয়া কী এবং আনুষ্ঠানিক দুঃখ প্রকাশ করেছে কি না? আর বিশিষ্ট ব্যক্তি ও রাজনীতিবিদ যাঁরা বারবার বলেছেন পদ্মা সেতু হবে না, তাঁদের ক্ষমা চাওয়া উচিত কি না?

এসব প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের ব্যাপারে বলব, নিজের ভাঁড় ভালো না, গোয়ালার ঘিয়ের দোষ দিয়ে লাভ কী? বিশ্বব্যাংককে কী দোষ দেব? কিছু মানুষের প্ররোচনায় তারা বন্ধ করেছে। যদি তাদের অনুশোচনা থাকে, তারা নিজেরাই বুঝতে পারবে। কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। বরং ধন্যবাদ জানাই, এই ঘটনা ঘটেছে বলেই সাহস নিয়ে নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু করে বাংলাদেশের সম্মান ফিরে এসেছে। নইলে দেশে সবার মানসিকতা, ধারণা, অন্যের অর্থায়ন ছাড়া কিছুই করতে পারি না। পরনির্ভরশীলতা ছিল। বিশ্বব্যাংক সরে যায়, আমার যে পারি, সেটা প্রমাণ করা গেছে। এতেই আমি খুশি।’

বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের অংশীদার, তারা কোনো অনুদান দেয় না, ঋণ দেয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের ঋণ সুদসহ ফেরত দেওয়া হয়। যে টাকা বাংলাদেশের নামে ছাড়া হবে, সেটা ফেরতের সুযোগ থাকে না। পদ্মা সেতু থেকে তারা টাকা সরিয়েছে কিন্তু টাকা উদ্ধার করে অন্যান্য প্রকল্পে ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক কোনো দাতা নয়। তাদের কাছ থেকে ভিক্ষা নয়, ঋণ নেওয়া হয়।’

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবল বলেন, ‘আপনি (প্রধানমন্ত্রী) যখন মানুষের শক্তিতে বিশ্বাস করেন, মানুষও কিন্তু যোগ্য নেতৃত্বে বিশ্বাস করে। বঙ্গবন্ধুর ওপর মানুষ আস্থা রেখেছিল, মানুষ উন্নয়নের জন্য আপনার ওপর আস্থা রাখে।’ তাঁর প্রশ্ন ছিল, বিশ্বব্যাংককে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো অভিযোগ জানানো হবে কি না? এর উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্ররোচনা কে দিয়েছিল, সেটা আগে ধরেন। কারা উৎসাহিত করেছিল। বাইরে লোকদের কি দোষ দেবেন?’

এটিএন নিউজের প্রধান নির্বাহী সম্পাদক মুন্নী সাহা নিজের স্মৃতিচারণা করে বলেন, ‘২০১২ সালে ১ জুলাই একটা ব্যক্তিগত কাজে আপনার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেদিন আমাকে একরকম সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন যে তোমাদের মন খারাপ কেন। সেদিন ছোট একটা কাগজে পেনসিলে কী লিখতে লিখতে কথায় কথায় বলছিলেন, “ভালোই করেছে, তারা তুলে নিয়েছে। দুর্নীতি হলো না, কিছুই হলো না, টাকা ছাড় হলো না। আমাকে এত মানুষ চেঞ্জ করতে বলল। আরও যদি তেড়িবেড়ি করত, আমি নিজেই বাদ দিয়ে দিতাম।” ব্যাপারটা কি তা হতে পারত? যদি তারা দেরি করত, তাদের টাকা তুলে নেওয়ার ঘোষণায়, আপনি কি বাদ দিয়ে দিতেন?

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা তো অতীত হয়ে গেছে। এটা নিয়ে কথা বলার কিছু নেই। পরের মুন্নী সাহা আবার বলেন, কিন্তু এটা একধরনের আত্মবিশ্বাসের জায়গা যে আপনি দেশের মানুষকে অপমানিত হতে দিতে চান না।

প্রধানমন্ত্রী জবাবে বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষকে যাতে অপমানিত না হতে হয়, তা–ই করতাম। নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলাম।’