কারও ব্যাংক হিসাব ও সম্পত্তি জব্দের ক্ষমতা দুদকের নেই

হাইকোর্ট
ফাইল ছবি

হাইকোর্ট এক রায়ে বলেছেন, বেআইনি পন্থায় অর্জনের অভিযোগ উঠলেও আইন অনুসারে আদালতের অনুমতি ছাড়া কোনো নাগরিকের ব্যাংক হিসাব জব্দ (অবরুদ্ধকরণ) বা সম্পত্তি অ্যাটাচমেন্ট (ক্রোক) বা সম্পত্তিতে বিধিনিষেধ আরোপে আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা কারও নেই, এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশনেরও।

কক্সবাজারের এক ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্ত কর্মকর্তার দেওয়া নির্দেশ আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায়ে এই কথা বলা হয়েছে। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ২৭ জুন ওই রায় দেন। আট পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি আজ বুধবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।

২০০৭ সালের দুর্নীতি দমন কমিশন বিধিমালার ১৮ বিধি তুলে ধরে রায়ে বলা হয়, সন্দেহভাজন ব্যক্তির বেআইনি পন্থায় অর্জিত ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধকরণ বা সম্পত্তি অ্যাটাচমেন্ট করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিধিতে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে। ২০০৭ সালে বিধিতে ‘অপরাধলব্ধ সম্পত্তি’ জব্দ বা ক্রোক বা অন্য কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করার ক্ষমতা অনুসন্ধান বা তদন্তকারী কোনো কর্মকর্তা বা দুদকের অন্য কোনো কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়নি।

দুদকের চট্টগ্রাম-২ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের কক্সবাজার শাখার ব্যবস্থাপককে বেলায়েত হোসেন নামের এক ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ফার্মেসি ব্যবসায়ী বেলায়েত কক্সবাজারের বাসিন্দা।

ব্যাংক হিসাব জব্দের ওই নির্দেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বেলায়েত হাইকোর্টে রিট করেন। এর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। রুলে বেলায়েতের ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে দুদকের ওই উপসহকারী পরিচালকের দেওয়া ৬ জানুয়ারির নির্দেশ কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২৭ জুন হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেন।

রিট আবেদনকারীর আইনজীবী রাকিবুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের অনুমতি ছাড়া কোনো নাগরিকের ব্যাংক হিসাব ও সম্পত্তি ক্রোক করার এখতিয়ার দুদকের নেই বলে রায়ে বলা হয়েছে। দুদকের তদন্ত কর্মকর্তা তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী কোনো নাগরিকের ব্যাংক হিসাব জব্দ বা সম্পত্তি ক্রোক করতে নির্দেশ দিতে পারেন না। বেলায়েতের ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটেছে। তাঁর ব্যাংক হিসাব জব্দ করতে দুদকের তদন্ত কর্মকর্তার নির্দেশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।