কারাগারে অবৈধ মাদক–ওষুধ সরবরাহ বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ

হাইকোর্ট ভবন
ফাইল ছবি

কারা অভ্যন্তরে সব ধরনের অবৈধ মাদকদ্রব্য ও ওষুধ সরবরাহ বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ ও ব্যবস্থা নিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই নির্দেশসহ বিচারাধীন মামলায় হাজতি এবং দণ্ডিত আসামিদের পূর্ণাঙ্গ তথ্য রেজিস্ট্রারভুক্ত করতে ও হলফনামা বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষের প্রতি কয়েক দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।


ওকালতনামায় ডেপুটি জেলারের সই ছাড়া এক আসামির জামিনে মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি সামনে আসার প্রেক্ষাপটে গত ১৯ অক্টোবর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার এবং বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেন। আজ রোববার আদেশের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়।


আরেক নির্দেশনায় বলা হয়, দর্শনার্থীদের দেহ ও পোশাক কঠোরভাবে তল্লাশি করতে হবে। দর্শনার্থীর কাছে কোনো মাদকদ্রব্য, ওষুধ এবং নিষিদ্ধ কিছু পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ও যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে।


রাষ্ট্রপক্ষের তথ্যমতে, প্রায় ১১ কোটি টাকার ঋণ জালিয়াতির দুই মামলায় জিওলোজাইজ সার্ভে করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান গত ১৫ জুন হাইকোর্টের ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চ থেকে জামিন পান। তখন জামিন হলফনামা আকারে নিয়মিত করতে বলা হয়। পরবর্তী সময়ে সংশ্লিষ্ট হলফনামা শাখা দেখতে পায়, ওই আসামির দুটি মামলার একটিতে ওকালতনামায় ডেপুটি জেলারের স্বাক্ষর নেই। এর পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি নিয়ে ১৯ অক্টোবর হাইকোর্ট কয়েক দফা নির্দেশনাসহ ওই আদেশ দেন। জামিনে বের হওয়া আসামি মিজানুরকে দুই সপ্তাহের মধ্যে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র বিশেষ জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস ও শামীমা আক্তার। দুদকের পক্ষে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আমিন উদ্দিন শুনানিতে ছিলেন। ডেপুটি জেলারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ আলী আজম।


পূর্ণাঙ্গ আদেশ প্রকাশের বিষয়টি জানিয়ে আমিন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত ১৫ জুন হাইকোর্ট যখন দুই মামলায় মিজানুরকে জামিন দেন। তখন বলা হয়েছিল, নিয়মিত আদালত খোলার পর তা হলফনামা আকারে নিয়মিত করতে হবে। ওই আসামির দুই মামলার একটিতে ওকালতনামায় ডেপুটি জেলারের স্বাক্ষর নেই, যা হাইকোর্টের হলফনামা শাখা দেখতে পায়। পরে আসামির আইনজীবী হলফনামা করার অনুমতি চান। এর ধারাবাহিকতায় আদালত দেখতে পান, আসামি জামিনে মুক্ত অবস্থায় জেলের ভেতরে আছেন উল্লেখ করে ডেপুটি জেলার ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেছেন ও জেলে থাকার তারিখ উল্লেখ করেছেন। এই প্রেক্ষাপটে আদালত ওই আদেশ দেন।’


নির্দেশনায় বলা হয়, বিচারাধীন মামলায় বা দণ্ডিত সব কারাবন্দীর নাম, ঠিকানা, মামলার নম্বর, মামলার ধারা, মামলা বিচারাধীন আদালতের নাম এবং কোন আদালতের রায়ে কী দণ্ড হয়েছে, তা রেজিস্ট্রারে রাখতে কারা মহাপরিদর্শক বা জেলার বা ডেপুটি জেলারদের নির্দেশ দেওয়া যাচ্ছে। এই রেজিস্ট্রারে দণ্ডিত বা বিচারাধীন মামলায় কারাবন্দীর কারাগারে আসা এবং বের হওয়ার তারিখ অন্তর্ভুক্ত করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


আরও বলা হয়, কারাবন্দীর ওকালতনামায় সই বা সিল দেওয়ার সময় যথাযথভাবে যাচাইয়ের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে কারা কর্তৃপক্ষ বা কারা কর্মকর্তাকে কেবল সই বা সিল দিতে হবে। ওকালতনামায় সই ও সিলের পাশে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার পুরো নাম, কারাগারের ল্যান্ডফোন ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করতে হবে। তিন মাস পরপর নির্দেশনা বাস্তবায়ন বিষয়ে হলফনামা আকারে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে প্রতিবেদন দিতেও কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।