কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে মেয়েদের অংশগ্রহণের প্রতিবন্ধকতা এবং উত্তরণের উপায়

গোলটেবিল বৈঠক
গোলটেবিল বৈঠক

২৪ জানুয়ারি ২০১৫ ইউসেপ বাংলাদেশ ও প্রথম আলোর আয়োজনে ‘কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে মেয়েদের অংশগ্রহণের প্রতিবন্ধকতা এবং উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশিত হলো
আলোচনায় সুপারিশ
 িশক্ষা ক্ষেত্রে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে হবে
 কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে উপজেলা পর্যন্ত নিতে হবে
 ২০২০ সালে কারিগরি শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ ৪০ শতাংশ করার লক্ষ্য রয়েছে
 িশল্পমালিকদের চাহিদা মোতাবেক জনবল তৈরি করতে হবে
 অত্যন্ত জরুরি বিষয় হলো মেয়েদের জন্য অবশ্যই নিরাপত্তা ও ডরমিটরির ব্যবস্থা করতে হবে
 কারিগরি শিক্ষার সফলতা গণমাধ্যমে প্রচার করতে হবে
 ছেেল ও মেয়েদের বেতনবৈষম্য দূর করতে হবে
 সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমে নারী ও মেয়েশিশুদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে

আলোচনা
আব্দুল কাইয়ুম: প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় ছেলে ও মেয়েদের অংশগ্রহণের সমতার সূচকে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। এ ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হেয়ছে। কিন্তু টিভেটে (কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ) মেয়েরা অনেক পিছিয়ে আছে। এ ধরনের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণে তাদের কতগুলো বাধা রয়েছে। কীভাবে এ বাধাগুলো দূর করা যায়, সবাইকে সেটি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।
বাধাগুলো দূর হলে মেয়েদের অংশগ্রহণ অনেক বাড়বে বলে মনে করি। আমাদের উদ্দেশ্য টিভেটে মেয়েদের অংশগ্রহণের অসুবিধাগুলো দূর করার কার্যকর দিকনির্দেশনা খুঁজে বের করা। আলোচনায় এসব বিষয় আসবে। এখন আলোচনার সূত্রপাত করবেন নুরুল ইসলাম নাহিদ।

নুরুল ইসলাম নাহিদ: দেশে মেয়েদের শিক্ষার সুযোগ আগে কম ছিল। আমাদের চেষ্টায় অনেক বেেড়ছে। কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়েছি। দেশের বিভিন্ন শিেল্পাদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলেছি। শিেল্পাদ্যোক্তারা কী ধরনের মেশিন ব্যবহার করেন, কী প্রযুক্তি ব্যবহার করেন, এসব জানার চেষ্টা করেছি। কীভােব প্রযুক্তি বদলায়, তাও বোঝার চেষ্টা করেছি। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান বাস্তবের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। তাই পড়ালেখা শেষে অনেক ক্ষেত্রে নিজেকে কাজে লাগাতে পারছে না। কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে শিল্পোদ্যোক্তাদের বলেছি, এমনভাবে কারিকুলাম তৈরি করে দিন যাতে প্রশিক্ষণ শেষে শিক্ষার্থীরা অাপনাদের প্রতিষ্ঠানে কাজের সুযোগ পায়।
ছোট ঘরে হাতে-কলমে যা শেখে তা যথেষ্ট না। বাস্তবে কাজ করতে এসে কারখানার বড় মেশিনের সঙ্গে তারা খাপ খাওয়াতে পারে না। আরেকটি বাধা হলো আগে করিগরি শিক্ষার গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। মানুষকে বোঝাতে চেষ্টা করেছি, কারিগরি শিক্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। উপজেলা পর্যন্ত এ বিষয়ে সভা-সমাবেশ করেছি। এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। সরকারি-বেসরকারি সাত হাজার প্রতিষ্ঠানে জায়গা দিতে পারি না। শিল্পমালিকেরা আমাদের শিক্ষার্থীদের কাজে লাগাচ্ছেন। এরা সফলতার সঙ্গে কাজ করছে।
চারটি বিভাগীয় শহরে শুধু মেয়েদের জন্য আলাদা কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করেছি। মেয়েরা কাজের প্রতি বেশি নিবেদিত। সব ধরনের দুঃসাহসিক কাজ এখন তারা করছে। আমাদের দক্ষ জনবলের অভাব। বিভিন্ন দেশ থেকে ৫০০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের একটি আধুনিক প্রতিষ্ঠান থেকে পর্যায়ক্রমে ৪২০ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। মেেয়দের কারিগরি শিক্ষায় সুযোগ সুষ্টির জন্য যা করা দরকার তার প্রায় সবই আমরা করেছি। ভবিষ্যতে কারিগরি শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ আরও অনেক বাড়বে।

জাকী হাসান: দেশের দুই হাজার এসএসসি ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইউসেপের চারটি বিদ্যালয় প্রথম চারটি অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু এর কোনো প্রচার নেই। কারিগরি শিক্ষার সফলতা গণমাধ্যমে প্রচার করতে হবে। ৫৫ হাজার শিক্ষার্থীকে নিয়ে কাজ করি। কিন্তু মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম। ২০১৩ সালে ৪০ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী ছিল। ২০১৪ সালে এটা হয়েছে ৩৯ শতাংশ। আমরা ইউসেপের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির মেয়েদের সঙ্গে কথা বলেছি। এদের ৪৩ শতাংশ সাধারণ শিক্ষায় পড়তে চায়। ৩৭ শতাংশ সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষায় পড়তে চায়।
২০ শতাংশ মেয়ে মনে করে, কারিগরি শিক্ষা তাদের জন্য জরুরি। ইউসেপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল এমন বিভিন্ন পর্যায়ের মেয়েদের কাছে শিক্ষার বাধা সম্পর্কে জানতে চেয়েছি। এরা অনেক ধরনের অসুবিধার কথা বলেছে। যেমন: পারিবারিক, সামাজিক ও যোগাযোগের সমস্যা, নিরাপত্তার অভাব, প্রতিষ্ঠানের দূরত্ব, শিশুবিবাহ ইত্যাদি। মেয়েশিক্ষার্থী ঝরে পড়ার প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে শিশুবিবাহ। আমাদের প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষণ নিয়েছে কিন্তু কাজ করেনি এমন মেয়েদের সঙ্গে কথা বলেছি। এদের ২০ শতাংশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে সাধারণ শিক্ষায় ফিরে গেছে।
অনেকে কাজের নিরাপত্তা, বেতনসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা বলেছে। যারা প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করছে তাদের ৮৩ শতাংশ বলেছে কোনো সমস্যা নেই। আমরা অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেছি। এদের ৩৪ শতাংশ কাজ করতে দিতে চায় না। ৬৬ শতাংশ কাজের পরিবেশ, থাকা–খাওয়া, বেতন-ভাতা ঠিক থাকার কথা বলেছে। আমাদের সার্বিক মূল্যায়ন হলো, প্রত্যেকেই একাধিক সমস্যার কথা বলেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা শিশুবিবাহ ও নিরাপত্তাহীনতা। এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিলে কারিগরি শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ আরও বাড়বে।

মরিয়ম সুলতানা: আমি ইউসেপের শিক্ষার্থী ছিলাম। এখন ব্যবস্যা করছি। অনেক কষ্ট করে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি। বাবা দরিদ্র। সবাই বলেছে গার্মেন্টসে কাজ করতে। অষ্টম শ্রেণির পর ইউসেপ টেকনিক্যাল স্কুলে দেড় বছর ইলেকট্রনিকসের কাজ শিখি। অনেকে আমার বিয়ের জন্য বাবাকে চাপ দিয়েছে। কিন্তু আমি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। প্রশিক্ষণ শেষে একটি প্রতিষ্ঠানে জুনিয়র টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ শুরু করি।
মেয়েদের এক হাজার ও ছেলেদের তিন হাজার টাকা বেতন ধরা হয়। ইউসেপে রেডিও, টেপরেকর্ডার এগুলোর কাজ শিখেছি। কিন্তু আমাদের চাকরির প্রতিষ্ঠানে ইউপিএস, আইপিএসের কাজ করতে হতো। এখানে তিন মাসের প্রশিক্ষণ শেষে পরীক্ষায় প্রথম হই। আবারও আমার বেতন তিন হাজার ও ছেলেদের পাঁচ হাজার টাকা হয়। ছেেল ও মেয়েদের বেতনবৈষম্য অবশ্যই দূর করতে হবে। এই প্রতিষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে যোগ দিই। পরে অন্য একটা প্রতিষ্ঠানে প্রোডাকশন ইনচার্জ হই। এরপর অনেক কষ্ট করে নিজেই ব্যবসা শুরু করি। আমার প্রতিষ্ঠানে এখন ১০ জন

মেয়ে কাজ করে। কিছুদিন আগে একটি ফ্ল্যাট কিনেছি। আরও অনেক দূর যেতে চাই।

শহিদ উল্লাহ আজিম: নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য অনেক কমে এসেছে। সরকার মেয়েদের অবৈতনিক শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে। ফলে শিক্ষায় মেয়েদের ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে। আমাদের তৈরি পোশাকশিল্প খাতে ৪৪ লাখ শ্রমিেকর ৮০ ভাগই নারী। এ খাত নারীদের অর্থনৈতিক জীবনে বিপ্লব এনেছে। এ খাতের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোতেও নারীরা কাজ করছে। আমাদের নিজস্ব প্রশিক্ষণকেন্দ্র রয়েছে। এখানে প্রতিবছর ২০ হাজার নারী প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। প্রশিক্ষণের পর তৈরি পোশাকশিল্প খাতে কাজ করছে। মেয়েরা প্রশিক্ষণ নিয়ে এলে শুরুতেই বেশি বেতন পায়। ২০১৩ সালে বিজিএমইএসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি হয়। এ চুক্তির আওতায় ২৬টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে ৩ হাজার ২০০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজে লাগানো হয়েছে। কারিগরি শিক্ষার কারিকুলামে তৈরি পোশাকশিল্প খাতের কাজ বেশি করে শেখানো প্রয়োজন। তাহলে এ শিক্ষার অধিকাংশ মেয়ে পোশাকশিল্প খাতে যুক্ত হতে পারবে। মন্ত্রী যেমন বললেন, প্রতি উপজেলায় কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হবে। এটা যেন খুব দ্রুত বাস্তবায়িত হয়। মেয়েদের কাজের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের সবাইকে দেখতে হবে। সব মিলিয়ে একসঙ্গে এ বিষয়ে কাজ করলে ভবিষ্যতে কারিগরি শিক্ষা এবং চাকরিতে মেয়েদের আরও সমৃদ্ধি আসবে।

এ মতিন চৌধুরী: ইউসেপের কারিকুলাম, প্রশিক্ষণ, নিয়ম-কানুনসহ সবকিছু আন্তর্জাতিক মানের। দীর্ঘদিন চর্চার মাধ্যমে ইউসেপ একটা পদ্ধতি গড়ে তুলেছে। আমরা চাই এ মানটা অন্যরা অনুসরণ করুক। তাহলে কারিগরি শিক্ষার দক্ষতা সবার মধ্যে ছড়িয়ে যাবে। উন্নয়ন–সহযোগীদের অর্থের নিশ্চয়তা সব সময় থাকে না। শিেল্পাদ্যোক্তাদের আমরা দক্ষ জনবল দেব। তঁারা জনবল প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবেন। এটা খুব জরুরি। ১০-১২ বছর আগে টেক্সটাইলে কোনো নারী শ্রমিক কাজ করত না। এখন এ খাতে ৭০ শতাংশ নারী কাজ করে। মেয়েদের জীবন দক্ষতা (লাইফ স্কিল) প্রশিক্ষণ খুবই জরুরি। তাহলে তারা নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। আমাদের ২০ হাজার শ্রমিক প্রায় সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা পায়। মেয়েরা প্রমাণ করেছে তারা ভালো কাজ করে। কিন্তু বিয়েসহ বিভিন্ন কারণে তারা দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠানে থাকতে পারে না। তাই এদের নিয়ে কোনো ক্যারিয়ার প্ল্যান করা যায় না।
মেয়েদের যোগাযোগ ও নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা কাজ করছি। একটা অত্যন্ত জরুরি বিষয় হলো মেয়েদের জন্য অবশ্যই ডরমিটরি করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এটা কারও ওপর ছেড়ে দিলে হবে না। আমাদেরই কাজটি করতে হবে।

নিশাত মির্জা: ইউসেপসহ জাতীয় পর্যায়ের ১৫টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমরা কাজ করছি। এসব প্রতিষ্ঠানে দেশের অবহেলিত ও দরিদ্র ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা করছে। এ শিক্ষার মাধ্যমে তারা নিজেদের স্বাবলম্বী করে তুলছে। কারিগরি শিক্ষার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে এখনো হয়তো মানুষের মধ্যে কিছুটা প্রশ্ন রয়েছে। এ শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে এ বাধা দূর করতে হবে। মেয়েরা কারিগরি শিক্ষার মধ্যে সাধারণত সেলাই, হাউসকিপিং, ক্যাটারিং ইত্যাদি শেখে। কিন্তু মেয়েদের অটোমোবাইল, মেশিন রক্ষণাবেক্ষণ, ইলেকট্রনিকস ইত্যাদি চ্যালেঞ্জিং ট্রেডে আসতে হবে। সেভ দ্য চিলড্রেন যেসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত সেখানে স্যানিটেশন–ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
অভিজ্ঞতায় দেখেছি, মেয়েদের মাসিক ব্যবস্থাপনায় সমস্যা হলে তারা প্রশিক্ষণে ও স্কুলে আসে না। তাই প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত স্যানিটেশন–ব্যবস্থা খুব জরুরি। অনেক অভিভাবক প্রশিক্ষণকেন্দ্র পরিদর্শন করেন। তাঁরা দেখতে চান, নারী প্রশিক্ষক আছেন কি না, স্যানিটেশন–ব্যবস্থা ভালো কি না। প্রশিক্ষণ শেষে শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নির ব্যবস্থা করা জরুরি। এ বিষয়ে আমরা শিল্পমালিকদের সঙ্গে কথা বলছি। এসব জায়গায় কাজ করতে পারলে মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়বে।

ক্যারোলিন সানার্স: নারী ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন—দুটিই বাংলাদেশ ও বিশ্বের ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য সরকারের অগ্রাধিকারের বিষয়। গত বছর লন্ডনে অনুষ্ঠিত গার্ল সামিটে নারী ও মেয়েশিশুদের ইস্যুটি সামনে আসে। ২০১৪ সালে ‘লিঙ্গসমতা’ অ্যাক্ট পাস হয়। এর ফলে সব উন্নয়ন ও মানবিক কর্মকাণ্ডে সম-অধিকারের বিষয়টিতে বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। যুক্তরাজ্য সরকার বাংলাদেশ সরকারকে জেন্ডার ইস্যুসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহয়তা করছে। সহায়তার প্রতিটি ক্ষেত্রে জেন্ডার ইস্যুটি বিবেচনা করা হয়। ডিএফআইডি ইউসেপের একটি প্রধান উন্নয়ন-সহযোগী হিসেবে কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে সহযোগিতা করছে। ইউসেপের কার্যক্রমে মেয়েশিশুদের উন্নয়নের বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। আমরা নতুন একটি কর্মসূচির পরিকল্পনা করছি। এর মূল বিষয় হবে নারী ও মেয়েশিশু। সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রমে নারী ও মেয়েশিশুদের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। মেয়েশিশুদের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণে যেসব বাধা আলোচনায় এসেছে, এগুলো গভীরভাবে ভাবতে হবে।

মোহা. হাবিবুর রহমান: ডিপ্লোমা, এইচএসসি, এসএসসি ভোকেশনাল কোর্স ও সার্টিফিকেট কোর্স; সারা দেশে কারিগরি ও বৃিত্তমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে এই চারটি কোর্স আছে। কিন্তু কারিগরি শিক্ষা বোের্ড ৬৪টি কোর্স অনুমোদিত আছে। এ বোর্ডের অধীনে ছয় লাখ শিক্ষার্থী আছে। এর ২৫ থেকে ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী মেয়ে। মেয়েরা কারিগরি শিক্ষায় যে অনেক পিছিয়ে আছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমরা সরকারের সঙ্গে অংশীদারি ভিত্তিতে বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে একটা প্রশিক্ষণকেন্দ্র চালু করেছি। এখানে গ্রামের বিধবা নারীরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। এ প্রশিক্ষণকেন্দ্রে সিএনজি থ্রি হুইলার ও মোটরসাইকেল সারার কাজ শেখানো হচ্ছে। এ দুটো কোর্স একেবারেই অপ্রচলিত।
ইউসেপ বাংলাদেশ মেয়েদের চ্যালেঞ্জে আসার সুযোগ করে দিচ্ছে। সরকারের সঙ্গে ইউসেপের এ কাজটি ডেইলি স্টার-এ লিড নিউজ হয়েছিল। ডেইলি স্টার বলেছে যে ছোট আকারে হলেও এটা নারীদের পরিবর্তনের সুযোগ। ইউসেপের ৩৬টি কোর্সের মধ্যে ৩৩টি সার্টিফিকেট কোর্স, তিনটি ভোকেশনাল কোর্স। ২০১৪ সালে আমাদের মোট শিক্ষার্থীর ৩৯ শতাংশ নারী ছিল। এবার আমরা প্রায় ১৩ হাজার শিক্ষার্থীকে প্রশিক্ষণ দেব। আমরা ঠিক করেছি এর ৪৪ শতাংশ হবে নারী। দেশের শিল্পমালিকদের সঙ্গে আমাদের নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। তাই আমাদের প্রতিষ্ঠানে যারা প্রশিক্ষণ নেয় তাদের অধিকাংশকেই কাজের ব্যবস্থা করে দিই। ইউসেপের এ কার্যক্রমকে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে নারীদের উন্নয়নে বিপ্লব ঘটবে।

এলা দ্য ভোগ্দ: কারিগরি শিক্ষায় প্রশিক্ষকদের নিবিড় প্রশিক্ষণ গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিশেষ অনুরোধ, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও প্রশিক্ষণকেন্দ্রের প্রশিক্ষকদের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণকেন্দ্রের ব্যবস্থা যেন করা হয়।
নারীদের সহিংসতা শুধু বিদ্যালয় বা প্রশিক্ষণকেন্দ্রে ঘটে না, অফিস, শিল্প–কারখানা, যেকোনো কর্মক্ষেত্রেই এটা ঘটে থাকে। এমনকি স্কুলে যাওয়া-আসার পথেও মেয়েদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। মেয়েদের নিরাপত্তার বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মেয়েদের মধ্যে আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি করতে হবে। তাদের উৎসাহ জোগাতে হবে। পাশাপাশি স্কুলে ছেলেদের আচরণে পরিবর্তনের ব্যবস্থা করতে হবে। এখনো অনেক ছেলেমেয়ে ও বাবা-মা আছেন, যাঁরা শ্রমবাজারে কী ধরনের চাকরি রয়েছে এবং মেয়েদের জন্য কী ধরনের সুযোগ রয়েছে সে সম্পর্কে জানেন না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ইলেকট্রনিকস ট্রেডে মেয়েদের অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করা হয় না, বরং বাধা প্রদান করা হয়। প্রশিক্ষকদের সচেতন হতে হবে। মেয়েদের বাবা-মাকে সম্ভাবনার বিষয়গুলো নিয়ে বোঝানোর মতো জ্ঞান ও সক্ষমতা যেন প্রশিক্ষকদের থাকে।
ভালো স্যানিটেশনের অভাবে মাসিকের সময় ৪০ শতাংশ মেয়ে মাসে তিন দিন স্কুেল অনুপস্থিত থাকে। একটি মেয়ের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই যদি আরেকটি শিশুর জন্ম দেয় তবে তার মৃত্যুর ঝুঁকি পাঁচ গুণ বেড়ে যায়। বাংলাদেশের ২ কোটি ৮০ লাখ মেয়ের বয়সসীমা ১০-১৯ বছরের মধ্যে। এটি একটি বিশাল সংখ্যা। বৃত্তিমূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের করণীয় রয়েছে।

কিশোর কুমার সিং: দক্ষতা ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তেমন অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি। জার্মানি ও কোরিয়ার ৯৫ ও ৮৪ শতাংশ শ্রমিক দক্ষ। কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে সরকারের বিশেষ অর্জন হলো ‘জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন নীতি’ এবং এর বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কাউন্সিল (এনএসডিসি) গঠন।
আইএলও এবং বাংলাদেশ সরকার নারীদের কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য সরকারের ১৫টি মন্ত্রণালয়, বিভিন্ন দপ্তর ও সিভিল সোসাইটির সংগঠনগুলোর সঙ্গে পরামর্শ-প্রক্রিয়া তৈরি করেছে, যেখানে ২০২০ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে

নারীর অংশগ্রহণ ৪০ শতাংশ বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের কার্যক্রমে সংশ্লিষ্ট রয়েছে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তর। এসব মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের কার্যক্রমকে জাতীয় দক্ষতার নীতি অনুযায়ী সমন্বিত করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো লিঙ্গভিত্তিক তথ্যভান্ডার তৈরি করা। কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে কেবল সাধারণ নারীর কথা ভাবলে হবে না। এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত, অাদিবাসী, প্রান্তিক ও সুবিধাবঞ্চিত নারীদের কথাও ভাবতে হবে।

তপন চৌধুরী: মরিয়মের মতো অসংখ্য ভালো উদাহরণ বাংলাদেশে আছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমরা বুয়েট, ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কাজ করছি। আপনারা হয়তো অনেকে জানেন, বাংলাদেশ টেক্সটাইল অ্যাসোসিয়েশন পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপে একটি ইনস্টিটিউট করেছে। শিক্ষার্থীরা এখানে টেক্সটাইলের ওপর স্নাতক শিক্ষা গ্রহণ করবে। এরা আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজের সুযোগ পাবে। একটি দুঃখজনক অভিজ্ঞতা হলো, যারা আমাদের প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নি করতে আসে তারা কেবল একটি সনদের জন্য আসে। কাজ শেখার প্রতি আগ্রহ কম। শিক্ষার্থীদের এই মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে।
গার্মেন্টস, টেক্সটাইল ছাড়াও অন্যান্য প্রায় সব ক্ষেত্রে মেয়েরা কাজ করছে। পবিবার থেকে মেয়েদের শিক্ষার ব্যাপারে গুরুত্ব দিতে হবে। মেয়েরা কাজের ক্ষেত্রে খুব মনোযোগী ও দায়িত্বশীল হয়। তৈরি পোশাকশিল্পে মেয়েদের জায়গায় যদি ছেলেরা কাজ করত তাহলে কখনোই এ শিল্প এত উন্নতি করতে পারত না। আমাদের স্পিনশিল্পগুলোয় ডরমিটরির ব্যবস্থা আছে। আমরাই প্রথম তৈরি পোশাকশিল্পে মেয়েদের জন্য ডরমিটরি করেছি। ১ হাজার ৫০০ মেয়ে ডরমিটরিতে থাকে। তারা অনেক বেশি সার্ভিস দেয়। সবকিছু ঢাকাকেন্দ্রিক। অন্য জেলার একটা মেয়ের পক্ষে ঢাকায় এসে কাজ করা অনেক কষ্টকর। বিভিন্ন জেলায় শিল্প-কলকারখানা ছড়িয়ে দিতে পারলে মেয়েদের অংশগ্রহণ অনেক বেড়ে যাবে।

মোহাম্মদ রেজাউল করিম: শিল্পের চাহিদা অনুযায়ী প্রশিক্ষণার্থী তৈরি করার জন্য সরকার জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কাউন্সিল তৈরি করেছে। এখানে সরকারি-বেসরকারি ও শিল্পমালিকদের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে চেয়ারম্যান ও শিক্ষামন্ত্রীকে ভাইস চেয়ারম্যান করে একটি কমিটি করা হয়েছে। জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কাউন্সিলে দক্ষতার পরিমাপকে ছয়টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যে যতটুকু দক্ষতা অর্জন করতে পারবে সে সেই ধাপের সনদ পাবে। আমাদের সনদ হবে আন্তর্জাতিক মানের।
প্রতিটি শিল্পভিত্তিক কাউন্সিল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান তাদের কারখানার কাজের জন্য একটি কারিকুলাম তৈরি করবে। এ কারিকুলাম অনুযায়ী জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কাউন্সিলে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ফলে প্রশিক্ষণে ভালো করার পর এরা নির্দিষ্ট শিল্পে কাজ পাবে। দেশের মোট শিক্ষার্থীর তিন শতাংশ কারিগরি শিক্ষায় পড়ে। এর মেধ্য মেয়ে শিক্ষার্থী হলো ২৪ শতাংশ। ২০২০ সালে কারিগরি শিক্ষায় মেয়েদের সংখ্যা ৪০ শতাংশ করার লক্ষ্য রয়েছে। আইএলওর সহযোগিতায় মেয়েদের কারিগরি শিক্ষায় আসার বাধাগুলো দূর করার একটা কৌশলপত্র ঠিক করা হয়েছে। এর ফলে মেয়েদের অংশগ্রহণ ভবিষ্যতে অনেক বেড়ে যাবে।

মো. আবদুল হক তালুকদার: আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চাই। বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে জেন্ডার সমতা এসেছে। কারিগরি শিক্ষায় ছেলে ও মেয়েদের অংশগ্রহণ যথাক্রমে ৭২ ও ২৮ শতাংশ। কিন্তু পাসের ক্ষেত্রে মেয়েরা এগিয়ে। মেয়ে ও ছেলেদের পাসের হার যথাক্রমে ৮৭ ও ৮২ শতাংশ। মেয়েরা যে পারে সেটা মরিয়মরা অনেক আগেই প্রমাণ করেছে। ইউসেপ প্রমাণ করেছে ইলেকট্রনিকস, মোটর মেকানিকস ও ড্রাইভিংয়ের কাজও মেয়েরা পারে। এখন মেয়েরা কোথায় নেই। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে সিকিউরিটিসহ প্রায় সব কােজ মেয়েদের অংশগ্রহণ রয়েছে। ২০১০ সালের শিক্ষানীতিতে মেয়েদের কারিগরি শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
মেয়েদের ঘর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য দেশের পরিবারগুলোর মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। গণমাধ্যমকে এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারি-বেসরকারি কোনো বাধা নেই। আছে সামাজিক কুসংস্কার। কিন্তু মেয়েরা এসব কুসংস্কারকে জয় করেছে। তারা এখন উদ্যোক্তা। চাকরিদাতা। শিল্পমালিকদের চাহিদা মোতাবেক জনবল তৈরি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিল্পমালিকদের আরও এগিয়ে আসতে হবে। আমি অত্যন্ত আশাবাদী যে ভবিষ্যতের বাংলাদেশে সব ক্ষেত্রের নেতৃত্বে নারীরা এগিয়ে আসবে।

রাশেদা কে চৌধূরী: সবার আলোচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এসেছে, সেটা হলো নারীর ক্ষেত্রে বিনিয়োগ। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো নারীদের ক্ষেত্রে বেশি বিনিয়োগ করেছে। আমাদের নারীরা সব ক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের জন্য অনেক বেশি বিনিয়োগ করতে হবে। ইউসেপের জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ৭০ শতাংশ অভিভাবক চান তাঁদের কন্যাসন্তান শিক্ষিত হোক, কাজে আসুক। মাত্র ১০-১৫ বছর আগেও এ ভাবনা এতটা ছিল না। এটা একটা জাতির উন্নয়নের জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক। আমাদের জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কাউন্সিল আছে। মেয়েদের কীভাবে উন্নয়ন হবে, উন্নয়নের পথে কী কী বাধা আছে, কীভাবে সেসব বাধা দূর করা হবে, সবই জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কাউন্সিল নীতিমালাতে আছে। আমাদের এমন একটি প্রতিষ্ঠান আছে এটা কয়জন জানে? ২২টি মন্ত্রণালয় এ ক্ষেত্রে কাজ করছে। অথচ এ বিষয়ে কোনো প্রচার নেই। এখানে গণমাধ্যমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের শিক্ষার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ কমছে।
শিক্ষাক্ষেত্রে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে হবে। অস্ত্র কিনব নাকি শিক্ষার ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করব, সেটা গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। ধোলাইখালের শ্রমিকদের কোনো লেখাপড়া নেই। অথচ তারা চমকে দেওয়ার মতো কারিগরি কাজ করছে। তাদের স্বীকৃতির বিষয়টি ভাবতে হবে। প্রত্যেককে তার ট্রেড অনুযায়ী কাজ পাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ভালো প্রশিক্ষক তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। তাই সবাইকে এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে।

নুরুল ইসলাম নাহিদ: আমি সবই নোট নিয়েছি। সরকারের আরও দুজন কর্মকর্তা আছেন, তঁারাও নোট নিয়েছেন। আমরা সবাই আজকের আলোচনার প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করব। আলোচনায় এসেছে মেয়েরা পিছিয়ে পড়ছে। বাস্তবে আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা শিক্ষায় পিছিয়ে ছিল। এখন প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ কোটি ৪৪ লাখ। মাত্র চার বছর আগেও এ সংখ্যা ছিল অর্ধেক।
মেয়েরা এখন স্কুলে আসছে কেন? কারণ পরিবারে তার স্কুলে আসার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। অর্ধেক শিক্ষার্থী আছে এমন, যাদের প্রথম প্রজন্ম স্কুলে আসছে। এর আগে ওই পরিবারের কেউ স্কুলে আসেনি। কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি সামাজিক বাধাই ছিল যে মেয়েরা বাইরে এসব পুরুষের কাজ কেন করবে। এখন এসব বাধা দূর হয়েছে, হচ্ছে। কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে উপজেলা পর্যন্ত নিতে হবে। আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি। ভবিষ্যতে ব্যাপক হারে কারিগরি শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ বাড়বে।

আব্দুল কাইয়ুম: কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে মেয়েদের অনেকগুলো বাধা আলোচনায় এসেছে। সরকারের জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কাউন্সিলের নীতিমালায় এসব বাধা দূর করার নির্দেশনা আছে। দক্ষতা উন্নয়ন কাউন্সিলের নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে মেয়েদের কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের বাধা দূর হবে। সংশ্লিষ্ট সবাই এ ক্ষেত্রে লক্ষ রাখবেন বলে আশা করি। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে সবাইকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।

যাঁরা অংশ নিলেন
নুরুল ইসলাম নাহিদ : মন্ত্রী, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সাংসদ, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ,
রাশেদা কে চৌধূরী : সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
মো. আবদুল হক তালুকদার : চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড
মোহাম্মদ রেজাউল করিম : উপসচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়
তপন চৌধুরী : সভাপতি, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন
শহিদ উল্লাহ আজিম : সহসভাপতি, বিজিএমইএ
এ মতিন চৌধুরী : চেয়ারপারসন, ইউসেপ বোর্ড অব গভর্নরস, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, নিউ এশিয়া লি. ও মালেক স্পিনিং মিলস লি.
জাকী হাসান : নির্বাহী পরিচালক, ইউসেপ বাংলাদেশ
মোহা. হাবিবুর রহমান : ভারপ্রাপ্ত পরিচালক, কার্যক্রম ও ব্যবস্থাপক টেকনিক্যাল এডুকেশন, ইউসেপ বাংলাদেশ
ক্যারোলিন সানার্স : টিম লিডার, মানব উন্নয়ন টিম, ডিএফআইডি
এলা দ্য ভোগ্দ : ফার্স্ট সেক্রেটারি, শিক্ষা, এম্বেসি অব দ্য কিংডম অব দ্য নেদারল্যান্ডস
নিশাত মির্জা : ডেপুটি প্রোগ্রাম ডিরেক্টর, সেভ দ্য চিলড্রেন
কিশোর কুমার সিং : অ্যাডভাইজার, আইএলও
মরিয়ম সুলতানা : প্রাক্তন ছাত্রী, ইউসেপ বাংলাদেশ
সঞ্চালক
আব্দুল কাইয়ুম : সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো
সহযোগিতায় ইউসেপ বাংলাদেশ