কার্ড হাতে পেয়ে হতভম্ব তাঁরা!

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের হতদরিদ্র লোকজন সরকারের দারিদ্র্যবান্ধব খাদ্য কর্মসূচির কার্ড (১০ টাকা কেজি) হাতে পেয়ে হতভম্ব হয়ে পড়েছেন। কার্ড পেয়ে অনেকেই জানতে পেরেছেন, আগেও দুবার চাল বিতরণ করা হয়েছে। আবার কেউ প্রথমবার পেয়েছিলেন। দ্বিতীয়বারের খবর জানেন না। দ্বিতীয়বার তাঁদের বদলে টিপসই দিয়েছেন অন্য কেউ। গতকাল রোববার এই মর্মে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন এসব মানুষ।
লিখিত অভিযোগে সই করেছেন সাতজন কার্ডধারী। তাঁরা হলেন চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের কানাপাড়া গ্রামের নাজেদুল ইসলাম, হুনমন্তনগর গ্রামের শফিকুল ইসলাম, আদর আলী, এনামুল হক, জেকের আলী, আতাল ও আলাউদ্দিন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের পরিবেশক মাইনুদ্দিন ও আবুল কাশেম। এই ইউনিয়নের মোট কার্ড ১ হাজার ১২৪টি। ৫৬২টি করে এসব কার্ড দুই পরিবেশকের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। ইউনিয়নের ‘ইউপি মোড়’ ও ‘পানিপার গ্রাম’ হচ্ছে চাল বিতরণের নির্ধারিত স্থান। অভিযোগকারী ব্যক্তিরা বলেন, তাঁরা শুধু প্রথমবার ২৭ সেপ্টেম্বর চাল পেয়েছেন। এরপর ৭ অক্টোবর আবার চাল দেওয়া হয়েছে মর্মে কার্ডে সই রয়েছে। কিন্তু ওই দ্বিতীয়বারের চাল আর তাঁরা পাননি। কার্ডে সইও করেননি। তাঁদের জায়গায় অন্যরা টিপসই দিয়ে চাল তুলে নিয়েছেন। গত শনিবার তাঁদের কার্ড সরবরাহ করা হয়।
অভিযোগকারী নাজেদুল ইসলাম বলেন, শুধু তাঁরাই নন। শনিবার এমন অনেকে কার্ড পেয়েছেন, যিনি গত দুবারের একবারও চাল পাননি। কিন্তু কার্ডে তাঁদের নামের জায়গায় ঠিকই সই রয়েছে। ভুয়া সই দিয়ে অন্য কেউ ওই দুবার চাল তুলে নিয়েছেন। পরিবেশকেরা এসব মানুষকে বলেছেন, বিষয়টি সাংসদ জানেন। তখন এসব মানুষ তাঁদের সামনে সাংসদকে ফোন করে ‘লাউড স্পিকার’ দিয়ে শোনাতে বললে পরিবেশকেরা আর তা করেননি।
নাজেদুল ইসলাম আরও বলেন, এই কার্ড হাতে পাওয়ার পর তাঁরা গোদাগাড়ী উপজেলার ইউএনওর কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে না পেয়ে ইউএনও কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়ে এসেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিবেশক আবুল কাশেম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মাইনুদ্দিন ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তিনি বর্তমানে ইউনিয়ন কৃষক লীগের সদস্য।
পরিবেশক আবুল কাশেমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ইউনিয়নে ৩০০ কার্ড সংশোধন করা হয়েছে। আগে যাঁদের চাল দেওয়া হয়েছিল, এবার তাঁদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এ জন্য এ সমস্যা হয়েছে। কেন কার্ড সংশোধন করা হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে অবস্থাসম্পন্ন লোকজনের নামে কার্ডগুলো দেওয়া হয়েছিল। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ১৭ সদস্যের একটি কমিটি করে যাচাই–বাছাই করে কার্ডগুলো সংশোধন করা হয়েছে।
আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সানাউল্লাহর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি আগের দুবার চাল দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে কত কার্ড সংশোধন করা হয়েছে তা তিনি নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি।
গোদাগাড়ী উপজেলার ইউএনও জাহিদ নেওয়াজ অভিযোগ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, অভিযোগ পাওয়া মাত্রই উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক আলাউল কবিরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। তাঁরা আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করবেন।