কালশীতে দুই পক্ষের সংঘর্ষ, কলেজছাত্রকে কুপিয়ে হত্যা

আবদুর রহমান
আবদুর রহমান

রাজধানীর মিরপুরের উত্তর কালশীতে গতকাল বৃহস্পতিবার জমি নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর এক কলেজছাত্রকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর নাম আবদুর রহমান ওরফে চঞ্চল (২৫)।
এদিকে জমি নিয়ে সংঘর্ষে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত শাহীনউদ্দিন (৩০), রাজীব হোসেন (২৫) ও মোহাম্মদ আলীকে (২৫) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। নিহত রহমান মিরপুর ১২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের স্নাতক শ্রেণির বাণিজ্য বিভাগের প্রথম বর্ষে পড়তেন।
পুলিশ জানায়, মোমিন বখশ ও তাঁর সমর্থকেরা কলেজছাত্র রহমানকে প্রতিপক্ষ মনে করে খুন করেন। রহমান হত্যার ঘটনায় মোমিনের দুই ভাগনে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাজীব ও মোহাম্মদ আলীকে পুলিশি পাহারায় রাখা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, সকাল আটটার দিকে মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের সিরামিকস কারখানার পাশে উত্তর কালশীর আলীনগরে জমির মালিকানা নিয়ে মোমিন বখশ ও জয়নুদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে সংঘর্ষ পাশের বুড়িরটেকে ছড়িয়ে পড়ে। থেমে থেমে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে সংঘর্ষ হয়। এতে উভয় পক্ষ ইট, চাপাতি, ছুরি ও রামদা ব্যবহার করে। এ সময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জয়নুদ্দিনের ছেলে শাহীনউদ্দিন, মোমিন বখশের দুই ভাগনে রাজীব হোসেন ও মোহাম্মদ আলী আহত হন। তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, সংঘর্ষ থামার পর বেলা ১১টার দিকে কলেজছাত্র রহমান উত্তর কালশীর বুড়িরটেকের বটতলা দিয়ে যাওয়ার সময় মোমিন ও তাঁর সমর্থকেরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁকে কোপায়। তাঁকে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। হাসপাতাল সূত্র জানায়, সেখানে বেলা সোয়া একটার দিকে
কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
মিরপুর ১২ নম্বর সেকশনের ও ব্লকের ১ নম্বর সড়কের ৫৭৪ নম্বর বাড়িটি রহমানদের। তাঁর বাবা হারিস মিয়া সিরামিকস কারখানার মোটর মিস্ত্রি। রহমান দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে ছোট ছিলেন।
রহমানের ভাই সাইফুল ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে প্রথম আলোকে বলেন, জমিজমা নিয়ে কিংবা ওই দুই পক্ষের কারও সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবে মোমিন ও তাঁর লোকজন তাঁর নিরপরাধ ভাইকে খুন করল কেন?
দুপুরে বুড়িরটেকের বটতলায় গিয়ে দেখা যায়, মাটিতে ও কয়েকটি ইটের ওপর রক্ত প্রায় শুকিয়ে গেছে। এলাকাবাসী নিরপরাধ রহমান হত্যাকারী মোমিন ও তাঁর সমর্থকদের গ্রেপ্তার করে ন্যায়বিচারের দাবি করেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, মোমিন বুড়িরটেকের পাশে রইশ্যারটেকে সরকারি জমি দখল করে বস্তিঘর তুলে ভাড়া দিয়েছেন। মাঝেমধ্যেই বস্তিতে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মোমিন ও তাঁর আত্মীয় জয়নুদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরে তাঁরা নিজেরাই মিটমাট করে ফেলেন। মোমিন ঢাকার বাইরের সরকারদলীয় একজন সাংসদের আবাসন প্রকল্পের তত্ত্বাবধানও করেন।
বুড়িরটেকের বাসিন্দা মো. স্বপন ফকির জানান, তাঁর মায়ের নামে বুড়িরটেকের নামকরণ করা হয়েছে। আলীনগরে তাঁর সাত কাঠা জমি গতকাল সকালে মোমিন সীমানা দেয়াল তুলে দখল করতে গেলে জয়নুদ্দিন ও তাঁর ছেলেরা বাধা দেন। এ নিয়ে সংঘর্ষ শুরু হয়। তিনি অভিযোগ করেন, মোমিনকে চাঁদা না দিয়ে তিনি তাঁর পৈতৃক জমি বিক্রি কিংবা সেখানে স্থাপনাও করতে পারছেন না। পল্লবী থানার পুলিশকে হাতে রেখে মোমিন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন।
পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ জিয়াউজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষ ও হত্যার ঘটনায় কয়েকজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।