রোগ নিরাময়ে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের প্রায় শতভাগ সফলতা দাবি
কালাজ্বর চিকিৎসায় ওষুধের নতুন মিশ্রণ
কালাজ্বর চিকিৎসায় দুটি ওষুধের মিশ্রণ প্রয়োগে প্রায় শতভাগ ক্ষেত্রে সফলতা পাওয়া গেছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা। অ্যাম্বিজোম ও প্যারোমোমাইজিন—এ দুটি ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগে তাঁরা এ সফলতা পেয়েছেন। গতকাল বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে চিকিৎসকেরা তাঁদের গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন।
গবেষণাটি হয়েছে ময়মনসিংহ জেলায়। কালাজ্বর আক্রান্ত ৬০০ রোগী নিয়ে এ গবেষণা করেন তাঁরা। কিছু রোগীকে শুধু অ্যাম্বিজোম সেবন করান। সমসংখ্যক রোগীকে অ্যাম্বিজোম ও মিল্টেফোসিনের মিশ্রণ সেবন করান। অ্যাম্বিজোম ও প্যারোমোমাইজিনের মিশ্রণ সেবন করান একই সংখ্যক রোগীকে। বাকিদের প্যারোমোমাইসিন ও মিল্টেফোসিনের মিশন প্রয়োগ করেন। এ ক্ষেত্রেও রোগীর সংখ্যা ছিল একই।
গবেষকেরা দেখেছেন, শুধু অ্যাম্বিজোমের তুলনায় বাকি তিনটি মিশ্রণই ভালো কাজ করে। অ্যাম্বিজোম ও মিল্টেফোসিনের মিশ্রণের সফলতার হার ছিল ৯৫ ভাগের নিচে। প্যারোমোমাইসিন ও মিল্টোফোসিনের মিশ্রণে ৯৭ শতাংশ সফলতা পাওয়া যায়। তবে অ্যাম্বিজোম ও প্যারোমোমাইসিনের মিশ্রণে সফলতা পাওয়া গেছে প্রায় শতভাগ, ৯৯ শতাংশ।
গতকালের অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশে কালাজ্বরে আক্রান্ত মানুষের প্রায় ৫০ ভাগ ময়মনসিংহের বাসিন্দা। এ কারণে গবেষণার জন্য এই জেলা বেছে নেওয়া হয়। গবেষণাটি চলে ২০১০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত। গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিল শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর-বি), কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ।
গবেষকেরা জানান, ২০১০ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) কালাজ্বরের নতুন ওষুধ তৈরিতে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানায়। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের গবেষকেরা এ উদ্যোগ নেন।
শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ও প্রধান গবেষক মো. রিদওয়ানুর রহমান গবেষণাটির উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বলেন, কালাজ্বরের নতুন কোনো ওষুধ এ মুহূর্তে হাতে নেই। সে কারণে ওষুধের মিশ্রণ নিয়ে গবেষণা করা হয়।
বাংলাদেশের আগে ভারতেও একই ধরনের একটি গবেষণা পরিচালিত হয়। তবে আইসিডিডিআর-বির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ও এ গবেষণার যুগ্ম প্রধান গবেষক রশিদুল হক বলেন, বাংলাদেশের মতো ব্যাপক পরিসরে এ গবেষণা আর কোথাও পরিচালিত হয়নি।
গবেষণাটি সফল করতে সহযোগিতা দিয়েছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ড্রাগস ফর নেগলেকটেড ডিজিজ ইনিশিয়েটিভ (ডিএনডিআই)। সভায় উপস্থিত ডিএনডিআইর দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের প্রধান সুমন রিজাল বলেন, এ ধরনের গবেষণা অব্যাহত থাকবে।
সভায় বলা হয়, বাংলাদেশে কালাজ্বরের প্রকোপ অনেকটা কমে এসেছে। গত বছর কালাজ্বরে মারা যায় দুই হাজার মানুষ। এ বছর এ সংখ্যা হাজার ছাড়াবে না বলে আশা করা হচ্ছে। তবে ওই একই অনুষ্ঠানে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, কালাজ্বর একটি বিরতির পর মারাত্মকভাবে ফিরে আসে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তখন এর জীবাণু ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠে।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক দীন মো. নুরুল হক, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ এ বি এম মাকসুদুল আলম প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মো. আবুল ফায়েজ।