চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার একটি অস্ত্র মামলার জব্দতালিকার সাক্ষী মো. আবছার (৫২) জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. লুৎফুর রহমানের কাছে দেওয়া হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, তিনি ওই মামলার কিছুই জানেন না। শুধু তিনি নন, জব্দতালিকায় থাকা আরেক সাক্ষী আজিজুল হকও একই কথা বলেছেন তাঁর হলফনামায়।
৭ মে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন চলাকালে চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মির্জাপুর ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রের পাশ থেকে অস্ত্র, গুলি ও ব্যালট পেপারে ব্যবহৃত একটি সিলসহ চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম ওরফে রনিকে আটক করে পুলিশ। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত ইউপি নির্বাচন আইনে তাঁকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে হাটহাজারী থানায় পৃথক একটি মামলা হয়। এ মামলায় আবছার ও আজিজুলকে পাবলিক সাক্ষী এবং হাটহাজারী থানার পুলিশ কনস্টেবল মোস্তাক আহমেদকে সাক্ষী করা হয়। অস্ত্র মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন রয়েছে। ইউপি নির্বাচন আইনে দেওয়া সাজায় নুরুল আজিম বর্তমানে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক আছেন।
মো. আবছার ১৮ মে তাঁর হলফনামায় বলেন, ‘৭ মে ভোট দিতে ভোটকেন্দ্রে গেলে পুলিশের একজন লোক কেন্দ্রের পাশে একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে বলেন। কেন জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি স্থানীয় লোক। কেন্দ্রে ভোট গণনাকালে আমার সহযোগিতা প্রয়োজন হবে। সরল বিশ্বাসে ওই সাদা কাগজে সই করি। পরে জানতে পারি, হাটহাজারী থানার একটি অস্ত্র মামলার জব্দতালিকায় আমাকে সাক্ষী করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ওই মামলার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমার সামনে কোনো ধরনের অস্ত্র প্রদর্শন কিংবা কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।’
অস্ত্র মামলার জব্দতালিকার দুই সাক্ষী মো. আবছার ও আজিজুল হকের হলফনামা সম্পন্নকারী আইনজীবী এ কে এম আজহারুল হক গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, মামলার জব্দতালিকার দুই সাক্ষী ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির হয়ে স্বেচ্ছায় হলফনামা দিয়েছেন। ঘটনার বিষয়ে পুলিশ তাদের কিছুই না জানিয়ে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। তাঁরা মক্কেল হিসেবে এসেছেন, তাই তাঁদের হলফনামাটি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।
অস্ত্র মামলাটির বাদী ও জব্দতালিকা প্রস্তুতকারী হাটহাজারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রবিউল হক গতকাল রাতে বলেন, ভোটকেন্দ্রে অস্ত্র উদ্ধারের পর অনেকে উপস্থিত ছিলেন। সেখান থেকে স্থানীয় বাসিন্দা আবছার ও আজিজুলকে জব্দতালিকায় পাবলিক সাক্ষী ও একজন পুলিশ কনস্টেবলকে সাক্ষী রাখা হয়েছে। তাঁরা অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি দেখেছেন। এখন কেন অস্বীকার করছেন, তা বলা যাচ্ছে না।
এ ব্যাপারে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হাটহাজারী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কমল ধর শুধু বলেছেন, মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ইসমাঈলও গতকাল রাতে প্রথম আলোর কাছে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি কফিল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মামলার জব্দতালিকার সাক্ষীর ঘটনা অস্বীকার করে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হলফনামা দেওয়ার আইনগত কোনো ভিত্তি নেই। মামলাটির বিচার শুরু হলে সাক্ষীরা যা বলার আদালতে বলবেন।