কিছু আমলা রোজিনাকে নিয়ে সরকার ও গণমাধ্যমকে মুখোমুখি করেছে: ইকবাল সোবহান

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের মুক্তি দাবিতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বৈঠক করেন সাংবাদিকদের প্রধান সংগঠনগুলোর নেতারা।
ছবি: দীপু মালাকার

সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে নির্যাতন ও গ্রেপ্তারে ক্ষোভ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেছেন, সরকারের কিছু আমলা রোজিনা ইসলামের বিষয়টি নিয়ে সরকার ও গণমাধ্যমকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।

এ অবস্থান থেকে সবার সরে আসার প্রত্যাশা জানিয়ে তিনি বলেছেন, আগামীকাল রোববার রোজিনা ইসলাম আদালতের আদেশে মুক্ত হয়ে আসবেন বলে আশা করছেন।

রোজিনা ইসলামের মুক্তি এবং তাঁর মামলা প্রত্যাহারের দাবি নিয়ে করণীয় নির্ধারণে আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বৈঠক করেন সাংবাদিকদের পাঁচটি সংগঠনের নেতারা। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজের) একাংশের উদ্যোগে আয়োজিত এই বৈঠক প্রায় তিন ঘণ্টা চলে। সংগঠনগুলো হলো বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, জাতীয় প্রেসক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি এবং ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টার।

অনুসন্ধানী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের এই ছবি ব্যবহার করে অবিলম্বে তাঁর মুক্তির দাবি জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট দিচ্ছেন বহু মানুষ
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

বৈঠক শেষে সভার সিদ্ধান্ত জানান ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজের) সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান। বৈঠকে উপস্থিত থেকে টিভি ক্যামেরা জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকেও দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করা হয়।

সাংবাদিক নেতারা প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি এবং তাঁর মামলা প্রত্যাহারের দাবি নিয়ে আগামীকাল রোববার সরকারের তিনজন মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। এই তিনজন মন্ত্রী হলেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

ইকবাল সোবহান চৌধুরী
ফাইল ছবি

বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, রোজিনা ইসলামকে মিথ্যা অভিযোগে গ্রেপ্তার, মামলা ও হেনস্তা করা হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে সারা দেশে সাংবাদিক সমাজ আন্দোলনমুখর, ক্ষুব্ধ। তার সঙ্গে সাধারণ মানুষও কিন্তু এই আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম হয়েছে। সেই মুহূর্তে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন সমন্বিতভাবে এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে, অব্যাহত রাখার জন্য বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা আলোচনা করেছেন। আগামীকাল আদালত রোজিনা ইসলামের জামিনের বিষয়ে আদেশ দেবেন। প্রত্যাশা হলো, আদেশটি হবে রোজিনাকে জামিনে মুক্ত করে দেওয়া। এ মুহূর্তে এটাই প্রত্যাশা। পাশাপাশি যে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে রোজিনাকে হেনস্তা করা হয়েছে, সে বিষয়েও অভিযোগ ও ক্ষোভ আছে।

আরও পড়ুন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সাংবাদিকবান্ধব নেত্রী উল্লেখ করে ইকবাল সোহবান চৌধুরী বলেন, ‘তাঁর সরকারের সময়ে কিছু আমলা রোজিনা ইস্যু নিয়ে সরকারকে এবং গণমাধ্যমকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে, সেই অবস্থান থেকে আমরা সবাই সরে আসতে চাই। গণতন্ত্র ও দেশকে এগিয়ে নিতে চাই, মুক্তভাবে সাংবাদিকতা করার পরিবেশ তৈরি করতে চাই। আমাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। শুধু রোজিনাকে মুক্ত করা নয়, যেসব বাধানিষেধ মুক্ত গণমাধ্যমকে বাধাগ্রস্ত করছে, সেগুলো দূরীভূত করার জন্য আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করব।’

গণমাধ্যমকর্মী আইন এবং সাংবাদিক সুরক্ষা আইন করার দাবি তুলে ধরে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যেন সাংবাদিকেরা হয়রানির শিকার না হন।

তিনি বলেন, ‘স্বাধীন সাংবাদিকতা যেটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে সংবিধানেই দিয়ে গেছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি অবাধ তথ্যপ্রবাহ আইন দিয়েছেন। তথ্য অধিকার আইন থাকাকালে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট বা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে সাংবাদিকদের মুক্তভাবে কাজ করতে না দেওয়াটা একটি সাংঘর্ষিক অবস্থান।’

ডিইউজের সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, রোজিনা ইসলামের মুক্তির বিষয়ে তাঁরা আগামীকাল সরকারের তিনজন মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। তার আগেই রোজিনা ইসলাম আদালতের মাধ্যমে নিঃশর্ত মুক্তি পাবেন বলে আশা করছেন।

রোজিনা ইসলাম আগামীকাল আদালতের আদেশে মুক্তি পাবেন বলে আশা করছেন সাংবাদিক সংগঠনগুলোর নেতারা
ছবি: দীপু মালাকার

কুদ্দুস আফ্রাদ বলেন, রোজিনা ইসলামের জামিনের আদেশের দিন ধার্য থাকায় আগামীকাল পর্যন্ত আজকের বৈঠক মুলতবি থাকছে। কালকে আদালতের সিদ্ধান্ত দেখে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এই সাংবাদিক নেতা বলেন, ‘আমরা মনে করি, সাংবাদিক রোজিনা ইসলামকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের কাছে এই দাবি জানাচ্ছি। কারণ, সরকারই এই জামিনের বিরোধিতা করছে। মুক্তির দাবির পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে, সেই মামলা প্রত্যাহারেরও দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে আজকের আলোচনায় সাংবাদিকদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এসব নিয়ে সাংবাদিকদের ঐক্য ধরে রাখব। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারের কাছে দাবি উপস্থাপন করব।’

আরও পড়ুন

ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান বলেন, সাংবাদিক সুরক্ষার জন্য একটি আইন দরকার। সেই ধরনের আইন প্রণয়ন করার জন্য সভা থেকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।

সাংবাদিকতা করতে চাইলে সাংবাদিকদের সুরক্ষাটি জরুরি হয়ে গেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের চেয়ারম্যান রেজোয়ানুল হক। তিনি বলেন, তথ্য অধিকার আইন হওয়ার পরে অফিশিয়াল সিক্রেটস আইন চলে না।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন, সাবেক সভাপতি ও যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম, বাংলাদেশ ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের সদস্যসচিব শাকিল আহমেদ, ট্রাস্টি রাশেদ আহমেদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজের) ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব আবদুল মজিদ, সাবেক মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া, সাবেক ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জাকারিয়া কাজল, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সহসভাপতি ওসমান গনি, সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আতিকুর রহমান চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী, টেলিভিশন ক্যামেরা পারসন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ মাহবুবুর রহমান প্রমুখ।