কী জানি কী হয় আতঙ্কে নির্ঘুম রাত

বিস্ফোরণের বিকট শব্দে ভেঙে গেছে ঘরের দরজা
ছবি: প্রথম আলো

সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামের বাসিন্দারা আরেকটি নির্ঘুম রাত পার করেছেন। গতকাল রোববার তাঁদের রাত কেটেছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়, ঘরের সামনে বসে।

আগের দিন গত শনিবার রাতে স্থানীয় বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুন ও বিস্ফোরণে গ্রামটির বাসিন্দাদের কারও ঘরের দরজা ভাঙে গেছে। কারও ঘরের জানালার কাচ ভেঙেছে। আবার কারও ঘরের টিনের চালা উড়ে গেছে।

আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসায় আবার কখন কী হয়ে যায়, তা নিয়ে রাতভর ভয়ে ছিলেন কেশবপুর গ্রামের বাসিন্দারা। তা ছাড়া দরজা-জানালা ভেঙে যাওয়ায় চুরি-ডাকাতি হওয়া নিয়েও তাঁরা চিন্তায় ছিলেন। এ কারণে গতকাল রাতে তাঁদের দুচোখে ঘুম ছিল না।

শনিবার রাত নয়টার দিকে সোনাইছড়ি এলাকায় বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। পরে দফায় দফায় বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে আশপাশের প্রায় আড়াই বর্গকিলোমিটার এলাকা।

বিস্ফোরণ-আগুনে নিহত মানুষের সংখ্যা হয়েছে ৪৯। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৯ জনই ফায়ার সার্ভিসের সদস্য। তাঁরা আগুন নেভাতে গিয়েছিলেন। অন্য মানুষের প্রাণ বাঁচাতে গিয়েছিলেন। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে আরও রয়েছেন ডিপোর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পরিবহনশ্রমিকেরা।

এ ছাড়া এই ঘটনায় আহত হয়েছেন ফায়ার সার্ভিস, পুলিশের সদস্যসহ দুই শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী। আহত ব্যক্তিরা ঢাকা ও চট্টগ্রামে চিকিৎসাধীন।

ডিপোর কনটেইনারে থাকা রাসায়নিকের কারণে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই কনটেইনারে ছিল হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড নামের রাসায়নিক।

বিএম কনটেইনার ডিপোর আশপাশের অন্তত দুই কিলোমিটার এলাকায় বসবাসকারীরা বেশির ভাগই শ্রমিক। এলাকার বসতঘরগুলো টিনশেডের। উঁচু দালানের সংখ্যা কম।

বিস্ফোরণের তীব্রতায় আশপাশের এলাকার ঘরবাড়ির দরজা-জানালাই শুধু ভেঙে যায়নি, টেলিভিশন, ফ্রিজ ও বৈদ্যুতিক পাখাও নষ্ট হয়ে গেছে।

সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য রবিন চৌধুরী আজ সোমবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কনটেইনার ডিপো এলাকার আশপাশের এক থেকে দেড় কিলোমিটার এলাকার বাসিন্দারা গতকাল রাতভর আতঙ্কের মধ্যে ছিলেন। তাঁরা সারা রাত ঘুমাননি। কখন কী হয়ে যায়, বলা তো যায় না—এই ভয়ে ছিলেন লোকজন।’

ডিপোর দক্ষিণ পাশের সীমানাদেয়াল-সংলগ্ন জেবল হোসেন বাড়ির বাসিন্দা ইকবাল হোসেন। গতকাল সরেজমিন দেখা যায়, তাঁর দোতলা বাড়ির প্রধান ফটকের কাঠের দরজা ভেঙে দুই ভাগ হয়ে গেছে। বাড়ির জানালার কাচগুলো ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। পরিবারের সদস্যের চোখেমুখে আতঙ্ক।

ইকবাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বাসা থেকে এখনো আগুন দেখা যাচ্ছে। ধোঁয়া উড়ছে। আবার কখন কী ঘটে, সেই ভয়ে গতকাল রাতে আমাদের ঘরের কারও ঘুম হয়নি। আমরা সবাই ঘরের সামনে বসে ছিলাম। তা ছাড়া দরজা-জানালা ভেঙে যাওয়ায় রাতের বেলায় ঘরে যে কেউ ঢুকে যেতে পারে, চোর-ডাকাত আসতে পারে, সে ভয়ও ছিল। সকাল হওয়ার পর মনে কিছুটা স্বস্তি এসেছে।’

ইকবালের প্রতিবেশী মো. নুরনবীও জানালেন একই কথা। তাঁর বাসার জানালার সব কাচ ভেঙে গেছে। তাঁর পরিবারের সদস্যরাও সারা রাত নির্ঘুম ছিলেন।

কনটেইনার ডিপোর উত্তর পাশে মোল্লাপাড়া গ্রাম। এ গ্রামের বাসিন্দা নাইমুদ্দিন জানান, তাঁর বাসার জানালার কাচও ভেঙে গেছে। গতকাল রাতে ভয়ে তাঁদের কারও ঘুম আসেনি।

বিস্ফোরণের বিকট শব্দে ভেঙে গেছে জানালার কাচ
ছবি: প্রথম আলো

ডিপোর পশ্চিম পাশের এলাকার বাসিন্দা গোলাম মোস্তাফা। তাঁর বাসার দরজা ও জানালার কাচ ভেঙে গেছে। তিনি বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে না আসায় তাঁরা গতকাল রাতে সতর্ক অবস্থায় ছিলেন। কখন কী বিপদ হাজির হয়, সেই শঙ্কায় ছিলেন। রাতে তাঁরা বিছানায় গেলেও কারও ঘুম আসেনি।

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, কনটেইনার ডিপোর আশপাশের এলাকার লোকজনের ঘরের দরজা ও জানালা ভাঙা থাকায় চুরি-ডাকাতিসহ কোনো ধরনের অপ্রতীকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ সতর্ক রয়েছে।