কুকুরের কামড়ে এক মাসে ৫১টি গবাদিপশুর মৃত্যু
কুড়িগ্রামে প্রায় এক মাসে কুকুরের কামড়ে ৪৩টি গরু ও আটটি ছাগল মারা গেছে। এর মধ্যে নাগেশ্বরী উপজেলার ভিতরবন্দ ইউনিয়নেই ২৩টি গরু মারা গেছে। একই সময়ে কুকুর ১০ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকে কামড়েছে।
জেলা সদর ও নাগেশ্বরী উপজেলার মানুষ এখন কুকুর আতঙ্কে ভুগছে। ভিতরবন্দ ইউনিয়নের বাটুয়াখানা গ্রামের সাবর আলী বলেন, ‘আমরা কুকুর আতঙ্কে আছি। জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা না নিলে অনেক গবাদিপশু ও লোকজন আক্রান্ত হবে।’
মারা যাওয়া একটি গাভির মালিক কাঞ্চন শীল বলেন, ‘বাছুরসহ গাভিটি বাড়ির পাশে মাঠে বেঁধেছিলাম। হঠাৎ একটা কুকুর এসে গাভিটাকে কামড় দেয়। এর এক মাস পরে গরুটা মরে যায়। গরুটা বাজারে ৩০ হাজার টাকা বিক্রি করা যেত।’
ভিতরবন্দ ইউনিয়নের নয়টি গ্রাম ঘুরে জানা গেছে, ১৫ আগস্ট থেকে ১০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে হাজীপুর, দেবোত্তর, কৈকুড়ি, দোয়ালীপাড়া, সুকানদীঘি, বাটুয়াখানা, তেলীপাড়া, চণ্ডীপুরসহ ১৫টি গ্রামের ৪১ জনের একটি করে গরু কুকুরের কামড়ে মারা গেছে। আলতাফ হোসেন নামের এক ব্যক্তির দুটি গরু কুকুরের কামড়ের পর জলাতঙ্ক রোগে মারা গেছে।
এই ইউনিয়নে ১০ জন নারী-পুরুষ ও শিশুকেও কুকুর কামড় দিয়েছে। তাঁরা কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এ ছাড়া কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের কৈকুড়ি, পরমালী, বড়ভিটা, পোড়ারভিটা ও সেনপাড়া গ্রামে কুকুরের কামড়ে ২০টি গরু মারা গেছে। এসব গ্রামের পাঁচ-ছয়জন অভিযোগ করেন, কুকুর কামড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় পশুচিকিৎসককে ডেকে এনে টিকা দিয়েও কাজ হয়নি। এই গ্রামগুলোতে কুকুরের কামড়ে আট থেকে ১০টি ছাগল মারা গেছে।
ভিতরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এক মাস ধরে ইউনিয়নে কুকুরের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আশপাশের গ্রামগুলো বন্যাকবলিত হওয়ায় সেখানকার কুকুরগুলো ভিতরবন্দ ও ভোগডাঙ্গা গ্রামে জড়ো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কুকুরগুলো এতই ভয়ংকর যে প্রতিদিন গরু ও মানুষকে কামড়াচ্ছে। আমাদের কাছে কুকুর মারার আধুনিক যন্ত্র না থাকায় সমস্যায় পড়েছি। বাধ্য হয়ে নিজের তহবিল থেকে কিছু টাকা দিয়ে কিছু ছেলেকে কুকুর মারতে লাগিয়েছি।’
স্থানীয় পশুচিকিৎসক আবুল কাশেম জানান, জলাতঙ্ক আক্রান্ত গরুর ১০৬ ডিগ্রি তাপমাত্রায় জ্বর আসে, মুখ দিয়ে লালা পড়ে, পানি দেখলে ভয় পায় এবং সব সময় উত্তেজিত থাকে। এ সময় উচ্চক্ষমতাসম্পন ভ্যাকসিন দিয়েও কাজ হয় না।
নাগেশ্বরী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আবদুল কাদের বলেন, ‘ভিতরবন্দের খবরটা শুনেছি। শেষ সময়ে আমার কাছে তিন-চারজন টিকা নিতে এসেছিলেন, তখন আর করার কিছুই ছিল না।’ তিনি কৃষকদের কুকুর থেকে গবাদিপশুকে সাবধানে রাখার ও কুকুর কামড়ালে দ্রুত টিকা নেওয়ার পরামর্শ দেন।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালে আবাসিক চিকিৎসক নজরুল ইসলাম জানান, প্রায় প্রতিদিনই কুকুরে কামড়ানো পাঁচ-সাতজন চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে আসছেন।