কুলির কবলে সিঁড়ি ট্রলি হুইলচেয়ার

কমলাপুর রেলস্টেশনে রাখা এসব সিঁড়ি ও হুইলচেয়ারের জন্য ৫০০ টাকা পর্যন্ত দাবি করেন কুলিরা। এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে তাঁদের বচসা লেগেই থাকে l ছবি: প্রথম আলো
কমলাপুর রেলস্টেশনে রাখা এসব সিঁড়ি ও হুইলচেয়ারের জন্য ৫০০ টাকা পর্যন্ত দাবি করেন কুলিরা। এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে তাঁদের বচসা লেগেই থাকে l ছবি: প্রথম আলো

ঈশ্বরদী থেকে আসা মায়ের জন্য কমলাপুর রেলস্টেশনে অপেক্ষা করছেন আবদুল আহাদ। বৃদ্ধা মাকে কীভাবে ট্রেন থেকে নামাবেন, তা নিয়ে চিন্তিত। স্টেশনে উপস্থিত লোকজনের সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ করছিলেন। একজন বললেন, স্টেশনে কাঠের সিঁড়ি ও হুইলচেয়ার পাওয়া যায়। কথাটি শেষ হতে না-হতেই আহাদ সেই সিঁড়ি ও হুইলচেয়ারের সন্ধানে দৌড় দিলেন স্টেশনমাস্টারের কার্যালয়ের দিকে। এ ঘটনা গত রোববার দুপুরের। প্রথম আলোর এই প্রতিনিধি তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
আবদুল আহাদ খুব উৎসাহ নিয়ে হুইলচেয়ারের সন্ধানে গেলেও ফিরে এলেন মুখ বেজার করে। বললেন, সিঁড়ি ও হুইলচেয়ারের জন্য কুলিরা ৫০০ টাকা দাবি করেছেন। শেষমেশ রফা হয় ৪০০ টাকায়। তবে এর বিনিময়ে যখন তাঁর মা ট্রেন থেকে নামবেন, তখন ওরা কাঠের একটি ছোট সিঁড়ি ট্রেনের দরজার সঙ্গে লাগিয়ে দেবেন, আর তাঁকে হুইলচেয়ারে করে গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেবেন। উপায় না পেয়ে তিনি এ শর্ত মেনে নিলেন।
তবে মজার ঘটনা দেখা গেল ট্রেন আসার পরে। আবদুল আহাদের মা চুক্তি অনুযায়ী নিরাপদে নেমে গেলেও আরেকজন বৃদ্ধকে নামতে দিলেন না কুলিরা। আহাদের মা নামার সঙ্গে সঙ্গে কাঠের সিঁড়িটি ট্রেনের দরজা থেকে সরিয়ে নেওয়া হলো। সেই বৃদ্ধ উঁচু দরজা থেকে কায়ক্লেশে নামলেন। ঠিক এ সময় দুই কুলি দুটি ট্রলি হাতে নিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। একজন সেই ট্রলি ব্যবহার করতে চাইলে দাবি করা হলো ৩০০ টাকা। কুলি অবশ্য এই দরের যৌক্তিকতাও জানিয়ে দিলেন। বললেন, এই ট্রলির মালিক তিনি নিজে। ব্যক্তিগত ট্রলি কী করে প্ল্যাটফর্মে আনলেন—প্রশ্ন করতেই কুলির সাফ জবাব, ‘নিজে কাজ করি, লাইনের কুলি, আনতে পারব না কেন?’
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আটটি প্ল্যাটফর্ম। প্রতিটির সামনে কোন প্ল্যাটফর্ম থেকে কোন অঞ্চলের কোন ট্রেন ছেড়ে যায়, তার তথ্য দেওয়া আছে। প্ল্যাটফর্মে যাত্রী ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশের জন্য ২০ নম্বর কাউন্টার থেকে দুই টাকা দিয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হয়। ট্রেনে দুভাবে মালামাল পরিবহনের ব্যবস্থা রয়েছে। যাত্রী নিজের সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন, অথবা মেইল ট্রেনে পাঠাতে পারেন। ব্যবসায়িক মালামাল হলে প্রতি কেজিতে এক টাকা করে মাশুল দিতে হয়। ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মের পাশেই আছে মেইল ট্রেনে মালামাল পরিবহনের বুকিং কাউন্টার। পণ্য অনুসারে মালামাল পরিবহনের মাশুল ঠিক করা হয়। কিন্তু তা শুধু কাগজে-কলমে। রেলের কুলিরা এসবের ধার ধারে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, রেলস্টেশনের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পোশাক ও ব্যাজধারী কুলি রয়েছে এবং মালামাল পরিবহনের চার্জ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নির্ধারণ করে দিয়েছে। একইভাবে অসুস্থ ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে হুইলচেয়ারের ব্যবস্থা। যাত্রীর ব্যাগের জন্য আছে ট্রলির ব্যবস্থা। কাগজে-কলমে এসব সেবার জন্য ফি দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। যেমন যাত্রী যদি নিজে ট্রলি বহন করেন, তাহলে তাঁকে দিতে হবে ১৫ টাকা। আর ট্রলি কুলি বহন করলে দিতে হবে ২০ টাকা। সেইভাবে হুইলচেয়ারে যাত্রী বহন করলে দিতে হবে ১০ টাকা। আর হুইলচেয়ার কুলি বহন করলে দিতে হবে ২০ টাকা। কিন্তু এসব নিয়ম কেউ মানে না। যাত্রীদের কাছ থেকে খেয়ালখুশিমতো টাকা আদায় করা হয়। উপায় না দেখে যাত্রীরাও তা দিয়ে দেন। বিশেষ করে ঈদ কিংবা অন্য কোনো উৎসব-পার্বণে যাঁরা পরিবার নিয়ে বাইরে যান, তাঁরা বেশি ঝামেলায় পড়েন।
যাত্রীদের এসব বিড়ম্বনার ব্যাপারে জানতে চাইলে বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক আরিফুজ্জামান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।